1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গে চাকরিপ্রার্থীদের দাবিপূরণ কি হবে?

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৫ নভেম্বর ২০২৩

অবস্থানের পাশপাশি অনশনে চাকরিপ্রার্থীরা। এই পথে আন্দোলন তীব্র হলে কি তাদের দাবি আদায় হবে?

https://p.dw.com/p/4ZRQi
১০ বছর পর নির্ধারিত বয়সসীমা পার হয়ে যাওয়ায় অনেকেরই আর নতুন করে আবেদনের সুযোগ নেই।
১০ বছর পর নির্ধারিত বয়সসীমা পার হয়ে যাওয়ায় অনেকেরই আর নতুন করে আবেদনের সুযোগ নেই। ছবি: Subrata Goswami/DW

নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে একাধিক মামলা আদালতে বিচারাধীন। এর ফলে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে ধীর গতিতে। বিভিন্ন কারণে চাকরিপ্রার্থীদের একাংশের নিয়োগে বাধাও তৈরি হয়েছে। সমস্যায় পড়া সেই উচ্চ প্রাথমিকের প্রার্থীরা অনশনে বসেছেন।

কলকাতা ময়দানে মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির নিচে ধর্না অবস্থান করছেন চাকরিপ্রার্থীরা। ইন্টারভিউয়ের দাবিতে ৫২৮ দিন ধরে চলছে অবস্থান। আন্দোলনের ঝাঁজ বাড়াতে সল্টলেকের করুণাময়ীতে বিকাশ ভবনের সামনে ৭২ ঘণ্টার অবস্থান ও অনশন শুরু করেন প্রার্থীরা।

আদালতের নির্দেশে শনিবার দুপুর একটা পর্যন্ত অবস্থান চলে। এখানেই ধর্না চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলেন আন্দোলনকারীরা। কিন্তু পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয় দেড়টা নাগাদ। ময়দানের পাশপাশি কেন অন্য জায়গায় অবস্থানের কর্মসূচি নিলেন প্রার্থীরা?

উচ্চ প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীদের বক্তব্য, ২০১৪ সালের সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে যে শূন্যপদের কথা বলা হয়েছিল, গত এক দশকে তা অনেকটাই বেড়েছে। এই সংখ্যা আপডেট করতে হবে। শিক্ষা দপ্তর থেকে বর্ধিত শূন্যপদের তথ্য পাঠাতে হবে স্কুল সার্ভিস কমিশনকে। সেই প্রক্রিয়া দ্রুত করার দাবিতে শিক্ষা দপ্তরের প্রধান কার্যালয় বিকাশ ভবনের সামনে তিন দিনের অবস্থান কর্মসূচি নেয়া হয়।

খোলা আকাশের নীচে

মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির নীচে নিয়মিত  প্রার্থীদের ধর্না চলে। সকাল ১০টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত অবস্থান করেন তারা। তাতে এখনো সাড়া না মেলায় একেবারে বিকাশ ভবনের অদূরে পৃথক কর্মসূচির ভাবনা। দুই রাত খোলা আকাশের নীচে রাত কাটিয়েছেন প্রার্থীরা। মাথার উপরে ত্রিপল খাটিয়ে কংক্রিটে শুয়ে থাকতে হয় তাদের।

শীতের মধ্যে পথের ধারে রাত্রিযাপন ও অবস্থানের ফলে বেশ কয়েকজন চাকরিপ্রার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। করুণাময়ী এলাকায় নারীদের জন্য নির্দিষ্ট শৌচাগার রাতে বন্ধ থাকায় সমস্যা হয়েছে অনেকের। এক অবস্থানকারীর দাবি, পুরসভার কাছে বায়ো টয়লেটের আবেদন জানিয়েও তা মেলেনি। যদিও পুরসভার দাবি, তারা কোনো আবেদন পায়নি।

শুক্রবার রাতে অবস্থান বিক্ষোভে গিয়ে এ ব্যাপারে তীব্র অসন্তোষ জানান কংগ্রেস নেতা ও আইনজীবী কৌস্তুভ বাগচী। তিনি নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্মীদের শৌচাগারের ব্যবস্থা করতে বলেন। কৌস্তুভের বক্তব্য, "শীতের রাতে প্রকাশ্যে রাস্তায় শুয়ে থাকছেন আন্দোলনকারীরা। ন্যূনতম ব্যবস্থা নেই, আলোও পর্যাপ্ত নেই। এমনকি শৌচাগারের বন্দোবস্ত করা হয়নি। এদের মানবিকতা বলে কিছু নেই।"

সব আন্দোলনকে সংহত করে তার তীব্রতা বাড়াতে হবে: মিরাতুন নাহার

বিরোধীদের সমর্থন

কৌস্তুভ ছাড়াও অবস্থানে এসেছেন বিজেপি বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায়, বিজেপি নেতা সজল ঘোষ। হিরণ বলেন, "এদের জীবনের ১০টা বছর ফিরিয়ে দিতে পারব না। তবে দ্রুত সমস্যার সুরাহা করতে হবে। বিরোধী দলনেতার সঙ্গে কথা বলে আমি প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি জানাতে চাই। যদি তিনি কোনোভাবে এই প্রার্থীদের জন্য কিছু ব্যবস্থা করতে পারেন।"

১০ বছর পর নির্ধারিত বয়সসীমা পার হয়ে যাওয়ায় অনেকেরই আর নতুন করে আবেদনের সুযোগ নেই। পুরনো বিজ্ঞপ্তি অনুসারে তারা বর্ধিত শূন্যপদে নিয়োগ চাইছেন। এক চাকরিপ্রার্থী বলেন, "আমরা চেয়েছিলাম ধরনায় এসে শিক্ষা দপ্তরের আধিকারিকরা সমস্যার কথা শুনুন। আলোচনা করুন। তারা আগের তুলনায় পদের সংখ্যা না বাড়ালে আমরা ইন্টারভিউ দিতে পারব না। নতুন করে আবেদনের প্রশ্ন নেই বয়সের বাধায়।"

উচ্চ প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ আজ, শনিবার কালীঘাট ও হাজরা এলাকায় বিক্ষোভ দেখান। কাছেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের প্রিজন ভ্যানে তুলে সরিয়ে নিয়ে যায়। শুক্রবার একই জায়গায় মিছিল করেছিলেন স্কুলে নিয়োগপ্রার্থী টেট উত্তীর্ণরা।

নিয়োগ ঘিরে অনিশ্চয়তা

নিয়োগ দুর্নীতিতে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জেলে। তার আমলের একাধিক কর্তাও দীর্ঘদিন কারাবন্দি। কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্ত ও মামলার শুনানি চললেও নিয়োগ নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন প্রার্থীদের বড় অংশ।

করুণাময়ীতে উচ্চ প্রাথমিকের অবস্থানে গিয়েছিলেন শিক্ষাবিদ মিরাতুন নাহার। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "এই রাজ্য সরকার অবস্থান, আন্দোলনের প্রতিক্রিয়ায় নীরব থাকবে, কোনো ব্যবস্থা নেবে না। তাই সব আন্দোলনকে সংহত করে তার তীব্রতা বাড়াতে হবে।"

তৃণমূল মুখপাত্র শান্তনু সেন বলেন, "রাজ্য সরকার নিয়োগ করতে আগ্রহী। যেখানে বাধা নেই, সেক্ষেত্রে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। বিরোধীরা মামলার জটিলতায় সেই প্রক্রিয়ায় বাধা তৈরি করছে।"

প্রবীণ শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার ডয়চে ভেলেকে বলেন, "দুর্নীতির জন্য কতজনের জীবন বলি হয়ে গেল, এতে লজ্জায় আমাদের মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে। কবে এরা চাকরি পাবেন, জানি না।প্রশাসনের নিষ্ঠুর মনোভাব দেখে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের খারাপ লাগছে।"