1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘অনেক মুক্তিযোদ্ধা টাকার অভাবে চিকিৎসা করতে পারছে না’

৩০ মার্চ ২০১১

নূর মোহাম্মদ শেখ এর জন্ম ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি৷ চাকরি করেছেন পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস-এ৷ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন এই বীর সেনা৷ তিনি আমাদের সাত বীরশ্রেষ্ঠের একজন৷

https://p.dw.com/p/10k0v
পরিবারের কাছে আর ফেরা হয়নি নূর মোহাম্মদের, একাত্তরের ৫ই সেপ্টেম্বর সুতিপুরে শত্রুপক্ষের মর্টারের গোলার আঘাতে প্রাণ হারান তিনিছবি: Gerhard Klas

নূর মোহাম্মদ শেখ তৎকালীন ইপিআর-এ যোগ দিয়েছিলেন ১৯৫৯ সালে৷ এর কয়েক বছর ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে দিনাজপুর সেক্টরে যুদ্ধরত অবস্থায় আহত হন তিনি৷ সেসময় যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য নূর মোহাম্মদকে একাধিক মেডেল প্রদান করে পাকিস্তান সরকার৷

ছুটি থেকে যুদ্ধে

একাত্তরে যুদ্ধের শুরুতে ছুটিতে ছিলেন এই সাহসী সেনা৷ কিন্তু পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার খবরে আর শান্ত থাকতে পারেননি তিনি৷ বরং যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে৷ সাহসিকতার সঙ্গে লড়তে থাকেন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে৷

পরিবার নিয়ে ভাবনা

একাত্তরের যুদ্ধকালীন সময়ে নূর মোহাম্মদকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন অপর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা কামাল৷ ডয়চে ভেলেকে নূর মোহাম্মদ সম্পর্কে তিনি বলেন, ব্যক্তি হিসেবে নূর মোহাম্ম অত্যন্ত সাহসী এবং ধীরস্থির ছিলেন৷ বিপদে কখনো বিভ্রান্ত হতেন না তিনি৷

বর্তমানে বাগেরহাটের ফকিরহাটে বাস করছেন মোস্তফা কামাল৷ তিনি জানান, নূর মোহাম্মদ তাঁর পরিবারের কথা প্রায়ই বলতেন৷ স্ত্রী, সন্তানদের কাছে আর কখনো ফেরা হবে কিনা তা জানতেন না নূর৷

ফেরা হয়নি

পরিবারের কাছে আর ফেরা হয়নি নূর মোহাম্মদের৷ একাত্তরের ৫ই সেপ্টেম্বর সুতিপুরে শত্রুপক্ষের মর্টারের গোলার আঘাতে প্রাণ হারান তিনি৷ তবে, সেই যুদ্ধে অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে লড়েছিলেন নূর৷ সহযোদ্ধাদের বাঁচাতে শেষ পর্যন্ত লড়াই করেন তিনি৷ মোস্তফা কামালের বক্তব্য অনুযায়ী, নূর এমন একটি অবস্থানে ছিলেন যেখানে গুলি করে তাঁকে মারা সম্ভব ছিল না৷ তাই, শত্রুরা অন্তত ৩০টি মর্টারের গোলা নিক্ষেপ করে তাঁকে হত্যা করতে৷

মৃত নূরকে নির্যাতন

নূর মোহাম্মদের মরদেহের উপরও অমানবিক নির্যাতন করে পাকিস্তানি সেনারা৷ এমন বীভৎস নির্যাতন মোস্তফা কামাল সেদিনই প্রথম দেখেছিলেন৷ তিনি বলেন, বেয়নেট দিয়ে নূর এর চোখ উপড়ে ফেলেছিল শত্রুরা৷ তাঁর মাথার ঘিলু বের হয়ে যায়৷ মৃত নূরের উপর উপর্যুপরি বেয়নেট চার্জ করে পাকিস্তানিরা৷

সহযোদ্ধারা পরবর্তীতে নূর মোহাম্মদের মরদেহ উদ্ধার করেন৷ এরপর তাকে সীমান্তবর্তী যুদ্ধক্ষেত্র কাশীপুরে সমাহিত করা হয়৷ স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার বীরত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখকে ‘বীরশ্রেষ্ঠ' খেতাবে ভূষিত করে৷

নূর এর পরিবার

নূর মোহাম্মদ এর পরিবারের সদস্যরা বর্তমানে যশোর এবং আশেপাশের শহরে বসবাস করছেন৷ নূরের একমাত্র ছেলে এসএম গোলাম মোস্তফা কামাল জানান, বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের সহায়তায় সরকার শুধু প্রতিশ্রুতিই দিয়েছে, কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়ন হয়নি ৷

হতাশ মোস্তফা

নূর মোহাম্মদের সহযোদ্ধা মোস্তফা কামালও কিন্তু হতাশা প্রকাশ করেছেন৷ সরকার তাঁকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করেছেন ঠিকই, তবুও স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পর কাঁদলেন মোস্তফা৷ তিনি বলেন, ‘‘অনেক মুক্তিযোদ্ধা টাকার অভাবে চিকিৎসা করতে পারছে না৷ আমার খুব দুঃখ লাগে যে, কেন এই দেশের মানুষ ৪০ বছর পর বুঝতে পারলো মুক্তিযোদ্ধাদের মূল্যায়ন করা উচিত৷ এতদিন কেন হয়নি?''

প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন