অচেনা ফারাওয়ের অজানা কাহিনি
তিনি নাকি ছিলেন মিশরের সবচেয়ে বড় বিদ্রোহী ফারাও বা রাজা৷ ধর্ম এবং রাজধর্ম বিষয়ে তাঁর নির্দিষ্ট মতামত ছিল, যা তিনি প্রয়োগ করেছিলেন শাসনকালে৷ দেখে নেওয়া যাক ফারাও আখনাটেনের কাহিনি৷
ফিলিপ গ্লাসের আখনাটেন
মার্কিন নাট্যকার ফিলিপ গ্লাস মিশরের এই অপরিচিত ফারাওকে নিয়ে তাঁর সাম্প্রতিক প্রযোজনাটি করেছেন৷ কিছুদিন আগে বন শহরে তা দেখানো হয়েছে৷ এর আগে বিভিন্ন বিশিষ্ট মানুষের জীবনী নিয়ে নাটক লিখেছেন ফিলিপ৷ আইনস্টাইন থেকে গান্ধী, সকলের কথাই উঠে এসেছে তাঁর লেখায়৷
আখনাটেন, এক বিপ্লবের নাম
খ্রিস্টের জন্মেরও ১৩৫৩ বছর আগের কথা৷ মিশরে তখন ফারাওদের রাজত্ব৷ সে সময়েই ১৭ বছরের জন্য ক্ষমতায় এসেছিলেন আখনাটেন৷ তাঁর আগের নাম ছিল চতুর্থ আমেনহোটেপ৷ পরবর্তীকালে তিনি নাম বদলে আখনাটেন হন৷ রাজত্বের একটা বড় সময় তিনি ধর্মীয় ঐক্য তৈরির এক প্রয়াস চালিয়েছিলেন৷ সকলকে নিয়ে একটি সাধারণ একমুখী ধর্ম তৈরির চেষ্টা চালিয়েছিলেন আখনাটেন৷
একমাত্র ঈশ্বর আতেন
মিশরে সে সময় একাধিক দেবতার পুজো হতো৷ কয়েক হাজার দেব-দেবী ছিল তাদের৷ আখনাটেন ঠিক করেছিলেন, আতেন ছাড়া আর কোনো দেবতা থাকবেন না৷ সূর্যের দেবতা ছিলেন আতেন৷ মূর্তিপুজোও বন্ধ করে দিয়েছিলেন তিনি৷ তাঁর ধর্মমতের নাম দিয়েছিলেন আতেনিসম৷ ঐতিহাসিকদের দাবি, একেশ্বরবাদের ধারণা সেই প্রথম তৈরি হয়৷
আমারনা শিল্প
আখনাটেনের সাম্রাজ্যকে বলা হয় আমারনা সভ্যতা৷ মিশরের আমরনাতে নিজের সাম্রাজ্য তৈরি করেন আখনাটেন৷ রাজকীয় প্রাসাদের পাশাপাশি সেখানে তৈরি হয় আতেনের মন্দির৷ মিশরের পূর্বতন স্থাপত্যশৈলীর চেয়ে একেবারে আলাদা ছিল আখনাটেনের স্থাপত্য৷ স্থাপত্যেও গুরুত্ব পেয়েছে সূর্যরশ্মির ভাবনা৷
আখনাটেনের রানি
অপরূপ সুন্দরী নেফারতিতিকে বিয়ে করেছিলেন আখনাটেন৷ নেফারতিতির একটি ছোট মূর্তি আছে বার্লিনের জাদুঘরে৷ সেই মূর্তিটিও আসলে আমারনা স্থাপত্যশৈলীর একটি উদাহরণ৷ অনেকে মনে করেন, নেফারতিতিও কিছুদিনের জন্য রাজত্ব করেছিলেন৷
রাজকীয় দাম্পত্য
অনেকেরই ধারণা, নেফারতিতি আসল নাম নয়৷বিয়ের পর শাসনকার্য পরিচালনার সময় আখনাটেনের স্ত্রী ‘নেফারতিতি’ পদবী গ্রহণ করেছিলেন৷ সম্ভবত এটি একটি রাজকীয় পWদবী৷ আখনাটেন এবং নেফারতিতির ছয় সন্তান৷ তাদের অন্যতম সম্ভবত তুতেনখামেন৷ তবে অনেকেই বলেন, তুতেনখামেন আখনাটেনের পুত্র হলেও নেফারতিতির না-ও হতে পারেন৷
এবং তুতেনখামেন
এই ছবিটি নিয়ে বহু আলোচনা আছে৷ বহু গবেষকই মনে করেন, এই ছবিটি তুতেনখামেন এবং তাঁর সম্পর্কে বোন আবার স্ত্রী-ও আনখেসেনানের৷ ১৩৩৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ক্ষমতা দখল করেন তুতেনখামেন৷
ধ্বংস আমারনা ইতিহাস
মাত্র ১৮ বছর বয়সে তুতেনখামেনের মৃত্যু হয়৷ কিন্তু তার মধ্যেই নিজের নাম প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলেন তিনি৷ তাঁর মৃত্যুর পর রাজত্ব দখল করেন হোরেমহেব৷ মনে করা হয়, আখনাটেনের সাম্রাজ্যের সমস্ত ইতিহাস ধ্বংস করেছিলেন তিনি৷ আমরনা শিল্প এবং স্থাপত্য ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল৷ এবং তখন থেকেই ফারাওদের ঐতিহাসিক পতন শুরু হয়৷