1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সু চির পথেই হাসিনা?

আশীষ চক্রবর্ত্তী৩ জুন ২০১৫

আর কত রোহিঙ্গা মুসলমানের ধর্ষণ, নির্যাতন আর মৃত্যুর পর মুখ খুলবেন গণতন্ত্রের প্রতীক অং সান সু চি? বাংলাদেশে আর কত হুমকি-হত্যার পর টনক নড়বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার?

https://p.dw.com/p/1FbLM
Sheikh Hasina
ছবি: Reuters

দু'জনই যেন একই কৌশল নিয়েছেন৷ রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার শতভাবে লঙ্ঘিত হলেও শান্তিতে নোবেল জয়ী মিয়ানমারের গণতন্ত্রের মানসকন্যা অং সান সু চি একদম চুপ৷ রোহিঙ্গা ইস্যুতে আজকাল কথাই সরেনা তাঁর মুখে! দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য যেমন বছরের পর বছর অন্তরীণ থাকার যন্ত্রণা সয়েছিলেন নির্বিবাদে, তেমনি যেন মিয়ানমার রোহিঙ্গাশূন্য রাষ্ট্র না হওয়া পর্যন্ত ‘স্পিকটি নট' থাকার ব্রত পালন করছেন ৷ তিনি যে দেশে নিশ্চিন্তে আহার-নিদ্রা সারছেন সেই দেশ থেকেই পরবাসী হচ্ছেন হাজার হাজার গৃহহারা মানুষ৷ মিয়ানমার সরকার তাঁদের রোহিঙ্গা মানতে নারাজ, সরকারের কাছে তাঁরা স্রেফ ‘বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী'৷ তাঁরা বিপদসংকুল পথে পা বাড়ালেও তাই সরকারের কিছু যায়-আসেনা৷ অং সান সু চি-রও মন এখন আরো ‘শান্তিকামী'৷ রোহিঙ্গাদের অধিকার রক্ষা এবং প্রতিষ্ঠার দাবিতে সোচ্চার হলে অশান্তির সমূহ আশঙ্কা, সরকার নির্ঘাত রুষ্ট হবে, সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধদের বড় একটা অংশের অনুভূতিতেও হয়ত আঘাত লাগবে – তাই সু চি নিরবে চলেছেন শান্তির পথে৷ শুধু নিজে শান্তিতে থাকার পথ৷ মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের পক্ষে একটা সমাবেশও হয় না৷ আর শান্তির বাণী শোনাননা সু চি৷ রোহিঙ্গা ছাড়া মিয়ানমারের সবার জীবনেই তাই শান্তি, শান্তি আর শান্তি৷

Aung San Suu Kyi Willy Brandt Preis 11.04.2014
মিয়ানমারে গণতন্ত্রের মানসকন্যা অং সান সু চিছবি: Getty Images

বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয় নানাভাবে৷ কাল শুরু হয়েছে আর আজ এ নিয়ে কথা হচ্ছে, ব্যাপারটা মোটেই এমন নয়৷ তবে আগে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে কাউকে হত্যা করা হয়নি৷ এখন ক'দিন পরপরই এমন হচ্ছে৷ আপাতত ব্লগাররাই এর শিকার৷ যাঁদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে তাঁদের কেউ কেউ নাস্তিক ছিলেন, কেউ কেউ ছিলেন না তবু গায়ে সেঁটে দেয়া হয়েছিল সেই ‘লেবেল'৷ বাংলাদেশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশ৷ নাস্তিকতা সংখ্যাগরিষ্ঠের পছন্দ হবে না, এটাই স্বাভাবিক৷ কাজেই মিয়ানমারের বৌদ্ধদের মতো বাংলাদেশেও সংখ্যাগরিষ্ঠের অনুভূতিতে আঘাতের শঙ্কা আছে বৈকি! তাই বইমেলায় শত লোকের ভিড়ে কিংবা রৌদ্রোজ্জ্বল ব্যস্ত সকালের রাস্তায় কাউকে কুপিয়ে মারলেও প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর মন্ত্রীরা চুপ৷ হত্যাকাণ্ডের নিন্দায় প্রকাশ্যে একটা কথাও তাঁরা বলেন না৷

Deutsche Welle DW Arun Chowdhury
আশীষ চক্রবর্ত্তী, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Henriksen

আমি রোহিঙ্গা নই৷ নাস্তিকও নই৷ তাতে কী? আমি মানুষ, রোহিঙ্গা এবং নাস্তিকরাও মানুষ৷ ‘মানবাধিকার' মানুষেরই অধিকার৷ কথা বলা, শোনা, কিছু পছন্দ না হলে প্রতিবাদ করা, কারো জিঘাংসার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ না করা – এ সবও মানবাধিকার৷ বাংলাদেশে এ সব অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে৷ লঙ্ঘন করা হচ্ছে তালিকা প্রকাশ করে, হুমকি দিয়ে৷ এতদিন ব্লগাররাই ছিলেন টার্গেট৷ এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক থেকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীও পাচ্ছেন মৃত্যু পরোয়ানা৷ তারপর? ধাপে ধাপে আর কারা কারা? কত নাম যোগ হলে, চাপাতির কোপে কতজন লাশ হলে টনক নড়বে শেখ হাসিনার?

কথা সব সময় খুব জরুরি নয়৷ কাজটা জরুরি৷ তালিকা প্রকাশে, তালিকা ধরে ধরে মানুষ হত্যায় কারা জড়িত তা খুঁজে বের করা, জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেয়ার চেষ্টা – এ সব কাজ কী হচ্ছে আদৌ? অং সান সু চি-র মতো চুপ থাকলে শেখ হাসিনার আপাতত হয়ত চলবে৷ সরকারের জন্য কাজটাই জরুরি৷ হুমকি দিয়ে মানুষ হত্যা বন্ধে সব কাজ বিশ্বাসযোগ্যভাবে শুরু করাটাই হবে কাজের কাজ৷ কারণ, অন্ধ হলে, কিংবা নিজে নিরাপদ ঘরে হাত গুটিয়ে বসে থাকলেই কিন্তু প্রলয় বন্ধ থাকবে না৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর সরকার এটা তাড়াতাড়ি বুঝলে হয়!

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য