বাংলাদেশে ২০১৩ সালের পর কোনো মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়নি
১ এপ্রিল ২০১৫বুধবার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা যায়, শাস্তি হিসেবে বিশ্বে ২০১৩ সালের তুলনায় ২০১৪ সালে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়ার সংখ্যা বেড়েছে৷ ২০১৪ সালে এই সংখ্যাটি ছিল ২,৪৬৬ - যা আগের বছরের তুলনায় শতকরা হিসেবে ২৮ ভাগ বেশি৷ মিশর ও নাইজেরিয়ায় গণবিচারে কয়েকশ মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ায় এই সংখ্যা বেড়েছে৷
তবে ২০১৪ সালে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার সংখ্যা কমেছে৷ ২০১৩ সালে বিশ্বের ২২টি দেশে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে৷ শতকরা হিসেবে এক বছরে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পরিমাণ কমেছে ২২ ভাগ৷ ২০১৪ সালে ৬০৭টি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে৷
অ্যামনেস্টি বলছে চীনে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷ রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তার কারণে সেখানকার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের হিসাব পাওয়া যায়না৷ চীন এই হিসাব প্রকাশ করে না৷
চীনের পর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পাঁচটি শীর্ষ দেশ হলো ইরান, সৌদি আরব, ইরাক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সুদান৷ এইসব দেশে ২০১৪ সালে যথাক্রমে ইরানে ২৮৯, সৌদি আরবে ৯০, ইরাকে ৬১, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৩৫ ও সুদানে ২৩ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷
সন্ত্রাস দমনের নামে বিশ্বের বেশ কিছু দেশ মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে, যা আশঙ্কাজনক বলে মনে করে অ্যামনেস্টি৷ এই দেশগুলোর মধ্যে চীন, ইরান, ইরাক ও পাকিস্তান অন্যতম৷ পাকিস্তানে গতবছর সাতজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে৷
অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে এখন পর্যন্ত ৯৮টি দেশ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড বাতিল করেছে৷ এছাড়া মৃত্যুদণ্ডের বিধান থাকলেও তার প্রয়োগ নেই এমন দেশের সংখ্যা ৪২টি৷ তাই বিশ্বের ১৪০টি দেশে এখন আর মৃত্যুদণ্ড নেই৷ সর্বশেষ মাদাগাস্কার মৃত্যুদণ্ডের বিধান বাতিল করেছে৷
বাংলাদেশ পরিস্থিতি
বাংলাদেশ মৃত্যুদণ্ডের বিধান থাকা ৫২টি দেশের একটি৷ বাংলাদেশের কারাগারে এখন ১,২৪২ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রয়েছেন বলে জানা যায়৷
২০১৩ সালের পর বাংলাদেশে কোনো মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়নি বলে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন আইজি (প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফতেখার উদ্দিন৷ তিনি বলেন, ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে সর্বশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷
তবে ২০১৪ সালে বাংলাদেশে ১৪২ জনেরও বেশি আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়া হয় বলে জানিয়েছে অ্যামনেস্টি৷ আর চলতি বছরে আরো অন্তত ২৫ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হয়েছে বলে জানা গেছে৷
কারা অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এপর্যন্ত ৪২৮ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে৷ সামরিক অভ্যুত্থান চেষ্টার অভিযোগে ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশে এক বছরে সর্বোচ্চ ২৪৭ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷
মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা
বাংলাদেশে নরহত্যাসহ আরো কিছু গুরুতর অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের বিধান আছে৷ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের আন্তর্জাতিক সদস্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা মৃত্যুদণ্ডের বিরোধী৷ কারণ আমরা মনে করি কোনো গুরুতর অপরাধের বিচারই মৃত্যুদণ্ডের মাধ্যমে সম্ভব নয়৷ এতে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয় না এবং মানবাধিকারের লঙ্ঘন হয়৷ প্রয়োজনে অপরাধীকে ৫০০ বছর কারাদণ্ড দেয়া যেতে পারে, তবে মৃত্যুদণ্ড নয়৷''
তিনি বলেন, ‘‘মৃত্যুদণ্ড যে কোনো অপরাধের শাস্তি হতে পারে না তা আজ সারা বিশ্বে প্রমাণিত হচ্ছে৷ তাই বিশ্বে শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড রহিতকারী দেশের সংখ্যা বাড়ছে৷ আমি আশা করি বাংলাদেশেও একদিন মৃত্যুদণ্ডের বিধান থাকবে না৷''