1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরো বিতর্ক

২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পরই শুরু হয়েছিল তাঁর দাফন নিয়ে অনাকাঙ্খিত নাটকীয়তা৷ তাঁকে নিয়ে তৈরি ছবিটি নিয়েও নাটকীয়তা আর বিতর্কের শেষ নেই৷

https://p.dw.com/p/2Xvfa
Bangladesch Humayun Ahmed Schriftsteller und Regisseur
ছবি: Mustafiz Mamun

সেন্সর বোর্ড ইতিমধ্যে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ‘ডুব' ছবিটি ‘স্থগিত' করেছে৷ বিতর্ক তাতে থামেনি, বরং শুরু হয়েছে নতুন করে৷

কেউ কেউ বলছেন, পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ব্যবসায়িক স্বার্থে, পরিকল্পিতভাবেই এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন৷ তাঁরা মনে করছেন, বাংলাদেশ ফিল্ম সেন্সর বোর্ড আপাতত ‘স্থগিত' করলেও সাময়িক এই নিষেধাজ্ঞা, চলমান এই বিতর্ক ‘ডুব'-এর জন্য আখেরে কল্যাণকরই হবে৷ সব ‘আঁধার' কেটে যাবে, এক সময় ঠিকই মুক্তি পাবে আর তখন দর্শকের আগ্রহ অনেক বেড়ে যাওয়ায় সুপার-ডুপার হিট হয়ে যাবে ‘ডুব'৷

এমন বিশ্লেষণকে ‘অমূলক' বলে উড়িয়ে দেয়ার উপায় নেই৷ আজকাল প্রচারের স্বাভাবিক উপায়গুলোর পাশাপাশি নানা কৌশলে ‘নেগেটিভ পাবলিটি'-র ঝোলও পাতে টেনে সফল হতে চাওয়া মানুষ বিনোদন জগতে অন্তত কম নেই৷ নেগেটিভ পাবলিসিটি গতানুগতিক প্রচারণার কার্যকারিতা অনেক ক্ষেত্রে অনেকটা বাড়িয়ে দেয়৷

অবশ্য মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ‘ডুব' ছবির বেলায় ‘নেগেটিভ পবালিসিটি'-ও কেন চাইবেন, সেটা একটা প্রশ্ন৷ লেখক হুমায়ূন আহমেদ এমনিতেই তুমুল জনপ্রিয়৷ তাঁর জীবনী নিয়ে ছবি হবে অথচ সেই ছবি ব্যবসাসফল হবে না – এ কথা বাংলাদেশে অন্তত ভাবা যায় না৷ তবে ফারুকী বাংলাদেশের বাইরে ব্যবসায়িক সাফল্যের দিকটি নিয়ে ভেবে থাকলে সেটা অবশ্য ভিন্ন কথা৷

এমনিতে মুম্বই ছবি হয়ে হলিউডেও কাজ শুরু করা ইরফান খান আছেন ছবিতে৷ টালিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী পার্নো মিত্রও আছেন৷ ফলে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি দর্শক তো বটেই, এমনকি হিন্দি ভাষাভাষী দর্শকরাও ‘ডুব' দেখবেন – এ আশা করা যেতেই পারে৷

ফারুকী কি এইটুকুতে আশ্বস্ত হতে পারছেন না? সে কারণেই কি শুরু থেকে ‘ডুব' নিয়ে বাংলাদেশে অতি গোপনীয়তা আর দেশের বাইরের সংবাদমাধ্যমে যথাসম্ভব প্রচারের কৌশল অবলম্বন? এমন ইঙ্গিত হুমায়ূন আহমেদের দ্বিতীয় স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওনের বক্তব্যে খুব পরিষ্কারভাবেই রয়েছে৷

রবিবার সংবাদ সম্মেলন করেছেন শাওন৷ সেখানে তিনি প্রশ্ন রেখেছেন, ‘‘সত্য গল্পের সঙ্গে কিছু বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ও তাঁকে (হুমায়ূন আহমেদ) নিয়ে ট্যাবলয়েড পত্রিকার কিছু চটকদার গুজব জুড়ে দিয়ে যদি কোনো ছবি বানানো হয়, সেটি কি নৈতিক?''

তাঁর আশঙ্কা, ছবিতে হুমায়ূন আহমেদকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে৷ ‘ডুব' চলচ্চিত্রের অভিনয়শিল্পীদের বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত মন্তব্য ও ফেসবুক স্ট্যাটাসই তাঁর মনে এমন আশঙ্কার জন্ম দিয়েছে৷

শাওন দাবি করেছেন, ‘ডুব' চলচ্চিত্র যে হুমায়ূন আহমেদের জীবনী অবলম্বনে তৈরি, এ বিষয়ে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমকে কিছু বলার আগে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকাকে জানিয়েছিলেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী৷ ২০১৬ সালের নভেম্বরে ‘হুমায়ূন আহমেদের চরিত্রে ইরফান? কিন্তু এত লুকোছাপা কেন' – শিরোনামে আনন্দবাজারে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়৷

সেখানে অতিরিক্ত ‘লুকোছাপা'-র কারণ জানাতে গিয়ে পরিচালক ফারুকী বলেছিলেন, ‘‘আমি চাইছি দর্শক ছবিটা দেখুক আগে৷ আমি নিজেও হুমায়ূন আহমেদের বিরাট ফ্যান৷ ওঁর ‘অরা'-তেই বাংলাদেশে আমাদের সবার বড় হওয়া৷ এটুকুই বলব, আমি একটা পরিবারের গল্প বলছি, কয়েকজন মানুষের ভাললাগা, দুঃখ, ক্ষোভ, হিংসা — এই আবেগগুলো ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছি৷ সেটা কার জীবন অবলম্বনে, সেটার বিচার ছবি দেখার পরে হলেই বেটার৷''

সেখান থেকেই মূলত বিতর্কের সূত্রপাত৷

শাওন দাবি করেছেন, আনন্দবাজার পত্রিকার ওই প্রতিবেদনের পর থেকে বহুবার তিনি জানিয়েছেন যে, হুমায়ূন আহমেদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হলে নির্মাতার অন্তত সৌজন্যের খাতিরে হলেও বিষয়টি হুমায়ূন আহমেদের পরিবারকে জানানো উচিত৷ তাছাড়া কাহিনি চিত্রায়নে সত্যনিষ্ঠ থাকার স্বার্থেও নির্মাতার উচিত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলা৷ কিন্তু শাওন জানান, বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে তিনি এসব বক্তব্য তুলে ধরার পরও ফারুকীর পক্ষ থেকে যোগাযোগের কোনো চেষ্টা করা হয়নি৷ 

আশীষ চক্রবর্ত্তী
আশীষ চক্রবর্ত্তী, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Henriksen

আগামী বৈশাখে মুক্তির জন্য গত ১২ ফেব্রুয়ারি ‘ডুব' চলচ্চিত্রটি সেন্সর প্রিভিউ কমিটিতে জমা দেয়া হয়৷ কিন্তু মেহের আফরোজ শাওন এক চিঠিতে সেন্সর বোর্ডকে তাঁর আশঙ্কার কথা জানান৷ দৃশ্যত ফারুকী তখনও সমঝোতার পথে না গিয়ে বিতর্ককে জিইয়ে রাখার চেষ্টাই করেছেন৷ তিনি এমনও বলেছেন, ‘আমার ছবিতে শাওন নামে কোনো চরিত্র নেই', যেন ওই নামে কোনো চরিত্র না থাকলেই হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রীর সব বক্তব্য তুচ্ছ, সব আশঙ্কা অগ্রাহ্য করার মতো হয়ে যায়৷

‘তথ্য মন্ত্রণালয় বিষয়টিকে সেভাবে দেখেনি৷ তারা শাওনের বক্তব্যকে গুরুত্ব দিয়ে সেন্সরবোর্ডকে ছবিটি আবার দেখতে বলেছে৷ এর সঙ্গে যোগ হয়েছে এফডিসির সঙ্গে ‘লেনদেনের হিসাবে একটু সমস্যা'৷ আর এই দুটি কারণেই ‘ডুব' আপাতত স্থগিত

স্থগিতাদেশ হয়ত এক সময় আর থাকবে না৷ সবার প্রত্যাশা অনুযায়ী, অচিরেই হয়ত মুক্তি পাবে ‘ডুব'৷ কিন্তু হুমায়ূনের অনেক কাছের মানুষের মনে, তাঁর অগণিত ভক্তের মনে একটা আক্ষেপ থেকেই যাবে৷ ক্যান্সারে ভুগে মৃত্যুর পর লাশ দাফন নিয়ে হুমায়ূনের পরিবারে কী শুরু হয়েছিল তা কারো ভুলে যাওয়ার কথা নয়৷ ‘ডুব' নিয়ে এই বিতর্কই বা কে ভুলতে পারবেন? নশ্বর পৃথিবী থেকে বিদায় আর সেলুলয়েডে তাঁর পুনরাবির্ভাব – হুমায়ূন আহমেদের জন্য কোনোটিই যে সুখের হলো না, ‘ডুব' মুক্তি পেলেও এই আক্ষেপ থেকেই যাবে৷

বন্ধু, আশীষ চক্রবর্ত্তীর লেখাটি আপনার কেমন লাগলো? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান