স্কুলে প্রথম দিনে যা করা হয়
স্কুলের এক্কেবারে প্রথম দিনটায় কিছু শিশু রোমাঞ্চ অনুভব করে, কেউ কেউ আবার ভয় পায়৷ কিন্তু দিনটা এড়ানোর তো কোনো উপায় নেই৷ জার্মান স্কুলগুলোয় প্রথম দিনে অনেক কিছু করা হয়, যার কতগুলো শত বছর আগে থেকেই প্রচলিত৷
উপহারভর্তি ঠোঙা
জার্মান শিশুদের স্কুলের প্রথমদিন উপহারসামগ্রী ভর্তি একটি ‘শুলট্যুটে’ বা ঠোঙা নিয়ে যেতে হয়৷ বাচ্চাদের উৎসাহ দেয়ার জন্য এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ স্কুলে শিশুটির ১২-১৩ বছর যাতে মধুর হয়, সে জন্যই সম্ভবত ঠোঙার মধ্যে বেশি করে মিষ্টি চকলেট ভরে দেওয়া হয়৷ সেই ঊনিশ শতক থেকেই এটা চালু রয়েছে৷
নতুন অধ্যায়ের সূচনা
অধিকাংশ শিশুর বয়স ছ’বছর হলে রাজ্য ভেদে আগস্ট বা সেপ্টেম্বর মাসে স্কুল জীবন শুরু হয়৷ তবে এই শিশুদের অধিকাংশই এর আগের সময়টা কিন্ডারগার্টেন বা ডে-কেয়ার সেন্টারে কাটিয়ে আসে৷ এ সমস্ত সেন্টারে লেখাপড়া বা নিয়মকানুনের বিশেষ কোনো চাপ নেই৷
সঠিক ব্যাগ বাছাই
প্রথমদিন শিশুকে স্কুলে পাঠানোর আগে তার জন্য সঠিক ব্যাকপ্যাকটি বাছাই করতে হয় অভিভাবকদের৷ এই ব্যাগের নাম ‘শলরানৎসেন’৷ এই ব্যাগ সাধারণ চৌকো হয়, যাতে সেটা বেঁকে না যায় এবং ভেতরে থাকা খাবার নষ্ট না হয়৷ শিশুরা স্কুল জীবনের শুরুর দিকে নিজেদের পোশাকের চেয়ে ব্যাগকেই গুরুত্ব দেয় বেশি৷ তাই বাচ্চাকে হালের ফ্যাশন অনুযায়ী ব্যাকপ্যাক কিনে দিলে তারা খুশি হয়৷
স্কুলে যা দেয়া গুরুত্বপূর্ণ
কেনার পর ব্যাগটি প্রথমদিনের জন্য প্রয়োজনীয় কলম, পেন্সিল, রুলার এবং ফোল্ডার দিয়ে ভরতে হয়৷ জার্মানির স্কুলগুলোতে প্রায়ই লাঞ্চের ব্যবস্থা থাকে না৷ তবে ক্লাসের ফাঁকে বাচ্চাদের একটা স্ন্যাক বিরতি দেয়া হয়৷ সেসময় খাওয়ার জন্য তাদের দিতে হয় ‘পাওসেব্রট’ বা ‘বিরতির রুটি’৷ তাই এ জন্য উপযোগী একটি টিফিনবক্সও স্কুলব্যাগের মধ্যে রাখা চাই৷
মনে রাখার মতো একটা দিন
অনেক অভিভাবকই সন্তানের প্রথম স্কুলে যাওয়ার দিনটির বা স্কুলের জন্য তৈরি হওয়া, সাজসজ্জার ছবি তুলে রাখেন৷ তাই কাঁধে ব্যাগ আর হাতে ‘শুলট্যুটে’ – প্রায় সব বাচ্চারই এমন ছবি দেখা যায়৷ ব্যাগটির আয়তন অবস্য বেশিরভাগক্ষেত্রেই শিশুর বড় হয়৷ ওপরে লেখা থাকে ‘স্কুলে আমার প্রথম দিন’৷ হ্যাঁ, ঠিক যেমনটা দেখতে পারছেন ছবিতে৷
আশীর্বাদ
জার্মানিতে স্কুলের প্রথমদিনটি পড়াশোনা দিয়ে শুরু হয় না৷ বরং এই দিন বিশেষ এক প্রার্থনাসভার মাধ্যমে শুরু হয় বাচ্চাদের স্কুল জীবন৷ শিশুদের অভিভাবক, আত্মীয়স্বজন আর ‘গড-প্যারেন্টসদের’ সেই সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়৷ সার্বজনীন গির্জায় অনুষ্ঠিত এই সভায় শিশুদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য প্রার্থনা করা হয়৷
অভিজ্ঞদের নেতৃত্বদান
স্কুলের শুরুতে পুরনো শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা স্কুল সম্পর্কে নবাগতদের একটি ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেন৷ অনেক স্কুলে তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নবাগতদের মধ্যে বন্ধুত্ব করিয়ে দেয়া হয়, যাতে তারা নতুনদের স্কুলটি চেনিয়ে দিতে সাহায্য করতে পারে৷
স্কুলের সঙ্গে মানিয়ে নেয়া
স্কুলে নবাগতদের প্রথম দিনই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে স্কুলটি দেখানো হয়, যাতে তারা সেখানে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে৷ স্কুলের আকার অনুযায়ী নবাগতদের ক্লাসরুমগুলো ‘ওয়ান এ’, ‘ওয়ান বি’, ‘ওয়ান সি’ ইত্যাদি লেবেলে সাজিয়ে দেয়া হয়৷ আর ক্লাসরুমের ভেতরে ব্ল্যাকবোর্ডে লেখা থাকে ‘‘স্বাগতম, ক্লাস ওয়ান এ’’ – এমন সব শুভেচ্ছাবার্তা৷
পারিবারিক পুর্নমিলনী
প্রথমদিন স্কুল শেষে বাড়ি ফিরেই শিশুরা বাবা-মা, ভাই-বোন, এমনকি দূরের আত্মীয়স্বজনদেরও কাছে পায়৷ কেননা, অনেক পরিবারই সন্তানের স্কুলে যাওয়ার প্রথম এই দিনটিকে উদযাপন করার জন্য বাড়িতে ছোটখাট পার্টির আয়োজন করেন৷ সেখানে শিশুটিকে নতুন জগতে প্রবেশের জন্য অভিনন্দন জানানো হয়৷ বলাবাহুল্য, একদিনে এতসব আয়োজন অনেক শিশুকে কিছুটা শঙ্কিতও করে তোলে৷
স্কুলে দ্বিতীয় দিন
প্রথমদিন উৎসবে শেষ হলেও ,দ্বিতীয় দিনে কিন্তু শিশুদের প্রথম কাজ হয় নিজের ক্লাসরুম খুঁজে বের করা৷ আর এভাবেই শুরু হয় তার শিক্ষা জীবন৷ প্রাথমিক স্কুলে চারবছর কাটানোর পর, মেধার ভিত্তিতে শিশুদের তিন ধরনের পৃথক স্কুলে পাঠানো হয় জার্মানিতে৷