1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সালাউদ্দিনে মোহভঙ্গ ফুটবলের

সনত্‍ বাবলা
১৪ নভেম্বর ২০১৬

কাজী সালাউদ্দিন বাফুফে সভাপতি হওয়ার পর পুরো জাতি বড় স্বপ্ন দেখেছিল৷ কিংবদন্তীর হাতে উঠেছে ফুটবল, ফুটবলে সুদিন না ফিরে উপায় নেই৷ কিন্তু দুর্গতির কোনো গতি হয়নি৷ আটটি বছর ধরে রচিত হয়েছে শুধু সালাউদ্দিনে মোহভঙ্গের কাহিনি৷

https://p.dw.com/p/2SblV
Bangladesch Sport Persönlichkeiten
ছবি: Mir Farid

কাজী সালাউদ্দিন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন ২০০৮ সালের ২৮শে এপ্রিল৷ তাঁর ব্যক্তিত্বের জাদুকরী সম্মোহনে মোবাইল কোম্পানিগুলো ছুটে এসেছিল৷ তারা এসেছিল ফুটবলে লগ্নি করতে৷ লগ্নি করেছিল কোটি কোটি টাকা৷ তবে শেষ বিচারে সবই যেন নিষ্ফলা বিনিয়োগ৷ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সালাউদ্দিনে মোহ একবার যে কেটেছে তা আর ফেরেনি৷

আসলে জাতীয় দলকে নিয়েই ছিল তাঁর বড় কারবার৷ বিদেশি কোচ, কোচিং স্টাফসহ এই দলের জন্য প্রয়োজনীয় সব আয়োজনই করেছিলেন তিনি৷ হয়ত ভেবেছিলেন মামানুল-এমিলিদের জন্য করলে তাঁরা মাঠের পারফরম্যান্সে প্রতিদান দেবেন৷ সেটা ভুল৷ তাঁরা দিয়েছেন একরাশ লজ্জা আর অপমান৷

২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্সের অধোগতিতেই তা স্পষ্ট৷ প্রায় তিন বছরে ২৩টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে তারা জিতেছে মাত্র চারটি, ছ'টি ড্র এবং বাকি ১৩ ম্যাচে হার৷ ২৩ ম্যাচে করেছে মাত্র ১৫ গোল! দলে গোল করার ফুটবলার নেই, ম্যাচ উইনার নেই৷ বিদেশি কোচ দায়িত্ব নিয়ে চোখে সর্ষে ফুল দেখেন৷

Fußball in Bangladesch
ফুটবলে এমন সুদিন কি আর ফিরবে?ছবি: Khandakar Tarek

সব দলেই এখন পার্থক্য গড়ে দেওয়ার মতো দু-একজন ফুটবলার থাকে৷ যেমন ভারতের আছে সুনীল ছেত্রী ও জেজে লালপেখুলা, মালদ্বীপের আশফাক, এমনকি ভুটানও ভরসা রাখে তরুণ ফরোয়ার্ড চ্যানচো'র ওপর, কিন্তু বাংলাদেশের এররকম কোনো ‘ম্যাজিকম্যান' নেই৷ উল্টো গত তিন বছরে জাতীয় দলের সামগ্রিক মানই বিস্ময়করভাবে এমন তলানীতে নেমেছে, যেখানে প্রত্যাশার কোনো জায়গাই নেই৷

২০০৮ সালে ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি হিসাবে কাজী সালাউদ্দিনের মেয়াদ শুরুর সময় কিন্তু অবস্থা এত খারাপ ছিল না৷ ২০০৯ সালে তো ঢাকায় সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালও খেলেছে বাংলাদেশ৷ পরের বছর এসএ গেমস ফুটবলের সোনা জেতে অনূর্ধ-২৩ দল৷ এরপর যে কী হলো, হঠাত্‍ জাতীয় দল হয়ে গেল আধমরাদের দল! ২০১১ সাল থেকে আর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের গ্রুপ পর্বই পেরোতে পারছে না বাংলাদেশ৷ ২০১৫ পর্যন্ত টানা তিনবার এমন ঘটেছে ২০০৩ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নদের ভাগ্যে৷

একবার এমন হলে অঘটন, কিন্তু টানা তিনবার হলে  তা নিশ্চয়ই বিপজ্জনক বার্তা৷ দ্রুত নামছে দেশের ফুটবলের মান৷ মাঠের খেলায় বারবার অধোগতির ইঙ্গিত দিয়েছে, সাফ অঞ্চলের পরাশক্তির মুখোশ খসে গিয়ে বাংলাদেশ পরিণত হচ্ছে নখদন্তহীন ফুটবল দলে৷ কিন্তু সেই ইঙ্গিত আমলে নেয়নি বাফুফে৷ অগত্যা গত ১০ অক্টোবর বাংলাদেশ দল ৩-১ গোলে ভুটানের কাছে প্রথমবারের মতো হেরে, মাথা নুইয়ে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে গর্বের অবশিষ্ট কিছুই আর নেই৷ নতুন করে হারানোরও কিছু নেই৷

Fußball in Bangladesch
বাংলাদেশের ফুটবলে এমন দর্শকে ঠাসা গ্যালারি এখন অনেক দূরের অতীতছবি: Khandakar Tarek

অদূর ভবিষ্যতে দেশের বিপন্ন ফুটবলের ছবিটা যে বদলাবে, এমন বলাও কঠিন৷ কারণ, সালাউদ্দিনের দুই মেয়াদে ঢাকা বাদে পুরো দেশের ফুটবলই ছিল অন্ধকারে৷ তাঁর ফুটবল পরিচালনায় জেলা বরাবরই বৈমাত্রেয় ভাই৷ তিনি তাদের সুখ-দুঃখের সাথী হতে চাননি বলেই জেলা ফুটবল এখন এরকম বন্ধ্যা৷ দ্বিতীয় মেয়াদে কিছু টাকা-পয়সা দিয়ে একটু দরদ দেখালেও জেলার জন্য তা খুব উত্‍সাহব্যাঞ্জক কিছু নয়৷ অথচ ফুটবল গৌরবের দিনে এই জেলাই ছিল ফুটবলারের একমাত্র আতুঁরঘর৷ সেখান থেকেই শুরু হতো ফুটবলারের জীবনচক্র৷ এমন ধ্রুব সত্যকে উপেক্ষা করে ফুটবল চালাতে গিয়ে সালাউদ্দিন পড়েছেন মহাবিপাকে৷ তাঁর গর্ব ঢাকার ফুটবল৷ সেটাও কি ঠিকঠাক চলেছে? এই সভাপতির দুই মেয়াদে, অর্থাত্‍ আট বছরে প্রথম বিভাগ লিগ হয়েছে চারবার, দ্বিতীয় বিভাগ তিন বার আর তৃতীয় বিভাগ চার বার৷ নিয়মিত হয়েছে কেবল প্রিমিয়ার ফুটবল লিগ৷ এই শীর্ষ লিগ নিয়েই বাফুফে সভাপতির ফুটবল বাগান, যেখানকার ফুলের রং হারিয়ে গেছে, সৌরভ ফুরিয়ে গেছে৷ দু-তিনজন মানসম্পন্ন বিদেশির পারফরম্যান্স বাদ দিলে এই লিগ একদম আকর্ষণহীন৷

অনিয়মিত নীচের লিগ আর জেলা ফুটবলের বন্ধ্যাত্বে সুরভিত ফুটবলারের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে৷ তাই নিয়মিত প্রিমিয়ার লিগ বাফুফের দেখনদারি আয়োজনমাত্র৷ এটা করে তারা ফুটবলীয় কর্মকাণ্ড দেখানোর চেষ্টা করেছে, প্রচারের আলোয় থাকার কাজ করেছে, কিন্তু বাস্তবে দেশের ফুটবল এগোয়নি এক বিন্দুও৷

আসলে তৃণমূলের কর্মকাণ্ড বন্ধ করে শুধু এক পেশাদার লিগ দিয়ে কখনো এগোনো যায় না৷ ফুটবলের সংস্কারও হয় না৷ পেশাদারিত্বের ধুয়ো তুলে বাফুফে একে একে সব টুর্নামেন্ট বন্ধ করে দিয়েছে৷ আগে হতো সোহরাওয়ার্দি কাপ, শেরেবাংলা কাপ, জেএফএ কাপ – এ সবে থাকতো জেলার ফুটবলারদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ৷ এরকম টুর্নামেন্টগুলো বন্ধ করে দিয়ে সালাউদ্দিন জেলার ফুটবলার উঠে আসার দুয়ার রুদ্ধ করে দিয়েছেন৷ তাঁর কাছে বিশেষ সমাদর পায় ঢাকার ক্লাবগুলো, এটা পেশাদার ফুটবলের বড় অনুষঙ্গও বটে৷ কিন্তু ক্লাবগুলো লিগে অংশ নেওয়া ছাড়া ফুটবলার তৈরিতে কোনো ভূমিকা রাখে না৷ নিজেরা ফুটবল অ্যাকাডেমি চালু করেও বাফুফে শেষ পর্যন্ত ফেল মেরেছে৷ অ্যাকাডেমি করতে সরকার সিলেট বিকেএসপি দিয়েছিল পাঁচ বছরের জন্য৷ বাস্তবে চলে মাত্র আট মাস! এই অক্ষমতা দেখে সরকার আর বাফুফের সঙ্গে নতুন করে সময় বাড়ানোর চুক্তিতে যায়নি৷

চারদিকে কাজী সালাউদ্দিনের অদক্ষতা আর পরিকল্পনাহীনতার ছাপ৷ প্রশ্ন উঠতে পারে, অদক্ষতা-ব্যর্থতা সবই তার ভাগে কেন? জবাব হলো, ফিফা-এএফসির মতো বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনও সভাপতি শাসিত৷ এখানে বরং বেশি জোরালো সভাপতির শাসন৷ নির্বাহী কমিটি থাকলেও তাঁর সিদ্ধান্তই শেষকথা৷ ২০১৩ সালে কমিটিতে আলোচনা ছাড়াই তিনি ঘটা করে নতুন ‘ভিশন' ঘোষণা করেছিলেন – ‘ভিশন ২০২২'৷ কাতার বিশ্বকাপ খেলার লক্ষ্যে! যারা দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের লড়াইয়ে সেমিফাইনালে ওঠে না, তারা খেলবে কাতার বিশ্বকাপ! সবই এখন হাসির খোরাক৷ সমালোচকরা হাসছেন আর তাঁকে তুলোধুনো করছেন পরিকল্পনাহীন পথচলার জন্য৷ লজ্জা দিচ্ছেন ভুটানের কাছে নুয়ে পড়া ব্যর্থ ফুটবলাররা৷ ব্যর্থ সভাপতি আর ব্যর্থ ফুটবলারদের ঐক্যজোটে এখন ভীষণ হাস্যকর বাংলাদেশের ফুটবল৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য