1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সন্তান জঙ্গি, বিশ্বাস হচ্ছে না বাবার!

২ আগস্ট ২০১৬

তিনি মৃতদেহ দেখেছেন, কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে আঙুলের ছাপ মিলে যাচ্ছে৷ কিন্তু তারপরও তৌহিদ রউফের বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে শুকনো, দাঁড়িওয়ালা মানুষটি তাঁর সন্তান৷

https://p.dw.com/p/1JaLY
Bangladesh Polizei tötet 9 mutmaßliche Islamisten in Dhaka
ছবি: picture-alliance/dpa/NurPhoto/S. Ramany

যার কথা বলা হচ্ছে, সে কল্যাণপুরে পুলিশের রেইডে নিহত নয় সন্দেহভাজন জঙ্গির একজন৷ বাবার ভাষায় একসময়ের স্মার্ট, ভালো ব্যবহার করা ছেলেটার এই পরিণতি তাঁর কাছে এখনো অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে৷

শেহজান রউফ অর্ক, একসময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছিল সে এবং তার একটি মার্কিন পাসপোর্ট ছিল৷ তার বাবা জানিয়েছেন, সংগীত অনুরাগী পরিবারে বেড়ে ওঠা অর্ক মজা করতে ভালোবাসে এমন শিক্ষার্থী ছিল এবং গিটার বাজাতো৷ তবে চলতি বছরের শুরুর দিকে হঠাৎ করে গায়েব হয়ে যায় সে, আর মৃত্যুর আগে সে এক অডিওবার্তা রেখে গেছে বলে গণমাধ্যম জানিয়েছে, যেখানে সে নিজের পরিবারকে ধর্মত্যাগী আখ্যা দিয়ে নিন্দা জানিয়েছে৷

‘‘আমার মনের একাংশ বলছে, সে আমার সন্তান৷ কিন্তু অন্য অংশ বলছে, সম্ভবত নয়,'' ঢাকা থেকে সোমবার টেলিফোনে বার্তা সংস্থা এপি'কে একথা বলেন রউফ৷ তিনি বলেন, ‘‘কিছু দিক মিলে যাচ্ছে, কিন্তু আমি কল্পনাও করতে পারছি না যে, সে আমার ছেলে ... আমার ছেলে ওগুলোর অংশ হতে পারে৷''

২৪ বছর বয়সি অর্ক এবং অন্যান্য সন্দেহভাজন জঙ্গিরা গত ২৬ জুলাই ঢাকার কল্যাণপুরে পুলিশের রেউডে নিহত হয়৷ সেসময় এক সন্দেহভাজনকে পালানোর চেষ্টাকালে পায়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটকে সক্ষম হয় পুলিশ৷

বাংলাদেশে বেশ কয়েকমাস ধরে চলা বিভিন্ন হামলায় নাস্তিক ব্লগার, বিদেশি এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা প্রাণ হারানোর পর দেশটির ধর্মনিরপেক্ষ সরকার জঙ্গিবাদ রুখতে তৎপর হয়েছে৷ সেদেশের সবচেয়ে বড় হামলাটি হয়েছে গত পহেলা জুলাই৷ ঢাকার গুলশানের একটি রেস্তোরাঁয় হামলায় প্রাণ হারায় বিশ ব্যক্তি যাদের মধ্যে সতের জনই বিদেশি৷

আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট' হামলার দায় স্বীকার করলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা অস্বীকার করে বলেছেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত স্থানীয় জঙ্গি গোষ্ঠী জামাতুল মুজাহিদিনি বাংলাদেশের জঙ্গি ছিল তারা৷

গত ফেব্রুয়ারিতে গায়েব হয়ে যায় অর্ক৷ সেসময় ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ'র প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিল সে৷ তখন তার বাবা পুলিশের কাছে ছেলে নিখোঁজ জানিয়ে জিডি করেন৷ রউফ স্থানীয় এজেন্ট হিসেবে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে অস্ত্র এবং গোলাবারুদ বিক্রি করেন৷ তিনি জানান, তিনি এবং তাঁর স্ত্রী অর্ক এবং দুই কন্যাকে উদার পরিবেশে বড় করেছেন৷

রউফ বলেন, ‘‘আমি নিজে ড্রাম বাজাই, আমার স্ত্রী গান গাইতেন, এক কন্যা ভরতনাট্যম শিখেছে এবং অন্যজন খুব ভালো বাংলা গান গায়৷ অর্ক নিজেও খুব ভালো গিটার বাজাতো৷ ... আমি বিশ্বাস করতে পারছি না যে সে কোনো জঙ্গি গ্রুপে যোগ দিতে পারে৷ এটা আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে৷''

ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের প্রতিনিধিদেরসহ রউফ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে অর্কের মরদেহ দেখেছেন৷ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অর্কের আঙুলের ছাপের সঙ্গে তার জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা ছাপ মিলে গেছে, তবে রউফ তাঁর সন্তানকে পুরোপুরি শনাক্তে ব্যর্থ হয়েছেন৷ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা সব সন্দেহভাজনের ডিএনএ টেস্ট করবে

রউফ বলেন, ‘‘আবারো বলছি এটা বিশ্বাস করার কারণ আছে যে সে আমার সন্তান৷ বিশেষ করে আঙুলের ছাপ মিলে যাওয়াটা এক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ আমি হয়ত আবারো হাসপাতালো যাবো, পরীক্ষা করবো এবং দায়িত্ব নেবো৷''

রউফ জানান, যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর সন্তানের ‘‘একটা অবস্থান ছিল৷'' মায়ের ক্যানসার ধরা পড়ায় ২০০৯ সালে অর্ককে দেশে ফিরিয়ে আনেন তিনি৷ তবে যুক্তরাষ্ট্রে অর্কের নাগরিকত্বের বর্তমান অবস্থা কি তা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন রউফ৷ তিনি বলেন, ‘‘তার মার্কিন নাগরিকত্বের বর্তমান অবস্থা কী আমি বলতে পারছি না৷ সাতবছর আগে সে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করেছিল৷ আমার দুই মেয়ে বর্তমানে সেখানে থাকে, তারা প্রগতিশীল এবং শান্তিতে বসবাস করছে৷ আমি তাদের জীবন বিপন্ন করতে চাই না৷''

অর্ক'র নাগরিকত্বের কথা জানতে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসে ইমেলে যোগাযোগ করা হলে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি৷ মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসা করতে বলেছেন৷

তবে ঢাকার ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার জানিয়েছে, জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে অর্ক'র সম্পৃক্ততা পুলিশের তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে৷

এআই / জেডএইচ (এপি)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য