1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শ্রমের সুরক্ষা কোথায়?

২৮ আগস্ট ২০১৭

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বক্তব্য একটি বিষয় পরিষ্কার করে দিয়েছে৷ তা হলো, শ্রম, মজুরি ও শ্রমের সুরক্ষা নিয়ে কথা বলা দরকার৷ বিশেষ করে ব্যক্তি খাতে একটা কাঠামো দাঁড় করানোর বিষয়ে ভাববার সময় এসেছে৷

https://p.dw.com/p/2iswJ
ছবি: picture alliance/dpa/M.Hasan

জার্মানির শ্রম আইনে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারিত আছে৷ এ বছর জানুয়ারিতে সেখানে কিছুটা পরিবর্তনও এসেছে৷ যেমন, ন্যূনতম মজুরি ঘণ্টাপ্রতি ৮.৫০ ইউরো থেকে বাড়িয়ে ৮.৮৪ ইউরো করা হয়েছে৷

এছাড়া অস্থায়ী কর্মচারীদের সুরক্ষাও বাড়ানো হয়েছে৷ ১৮ মাসের বেশি কাউকে অস্থায়ী রাখা যাবে না৷ স্থায়ী করতে হবে৷ আর ন'মাস পরই অস্থায়ী কর্মচারীদের স্থায়ীদের মতো সুযোগ সুবিধা দিতে হবে৷

এসব ব্যবস্থা রাখার কারণ হলো, কেউ যেন অস্থায়ী কর্মচারীদের শ্রমের অপব্যবহার করতে না পারেন৷

বাংলাদেশের আইনে এতসব সুরক্ষা নেই৷ যা-ও আছে তা ঠিকমত মানা হয় না৷ মজুরির প্রশ্নে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন কাঠামো থাকলেও বেসরকারি খাতে যেন এক অরাজকতা চলছে৷

সরকারি না বেসরকারি, কারা বেশি বেতন পান এই বিতর্ক আজীবনের৷ এ লেখায় সেই বিতর্ক অর্থহীন৷ বাংলাদেশে সরকারি কর্মচারীদের বেতন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা সম্প্রতি বর্তমান সরকার অনেকটাই বদলেছে৷ এখন সরকারি চাকরিতে সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২৫০ টাকা এবং সর্বোচ্চ স্কেলের মূল বেতন ৭৮ হাজার টাকা৷ এই বেতন ২০টি গ্রেডে বিভক্ত৷

এ কাঠামোতে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা পদে যোগ দেওয়া একজন চাকরিজীবীর মূল বেতন হবে মাসে ২২ হাজার টাকা, যা ঠিক আগের কাঠামোতে ১১ হাজার টাকা ছিল৷ এর সঙ্গে যুক্ত হবে এলাকা অনুযায়ী বাড়িভাড়া এবং গ্রেড অনুযায়ী চিকিৎসা ও অন্যান্য ভাতা৷ এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়৷

কিন্তু বেসরকারি চাকরিজীবীদের বিষয়টি কি একেবারেই আড়ালে থেকে যাবে? অর্থমন্ত্রী বলেছেন, পোশাক শিল্প ছাড়া আর কোথাও ওয়েজবোর্ড নেই৷ প্রশ্ন হলো, কেন নেই? তিনি যেসব উত্তর দিয়েছেন, তা বেসরকারি খাতের বড় কর্তাদের ক্ষেত্রে খাটে৷ কিন্তু নিম্ন ও মধ্যম শ্রেণির কর্মচারীদের ক্ষেত্রে তাঁর বক্তব্য একেবারেই অসাড়৷

জার্মানির সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনীতির অনেক ফারাক৷ তাই তুলনা অনেক ক্ষেত্রেই খাটে না৷ কিন্তু তারপরও কল্যাণ রাষ্ট্রের ধারণাটিই হলো জনগণকে সুরক্ষা দেয়া৷ যে রাষ্ট্র যে অবস্থানে থাকবে, সে রাষ্ট্র তার সাধ্য অনুযায়ী জনগণের সুরক্ষা দেবে৷ সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখা বেসরকারি চাকরিজীবীরা নিশ্চয় সেই সুরক্ষার আওতা থেকে বাদ যাবেন না৷

অর্থনীতির প্রয়োজনেই সরকার ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করে থাকে৷ ব্যবসায়ীরা এতে লাভবানও হন৷ উদাহরণস্বরূপ, পোশাক শিল্পের কথাই ধরা যাক৷ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের এই বাণিজ্যিক খাতে ব্যবসায়ীরা নানা সুযোগ-সুবিধা পান৷

কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না যে, স্বল্প মূল্যের শ্রমই এই খাতকে এত বড় করার পেছনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে৷ কিন্তু যুগ যুগ ধরে এই খাতে শ্রমজীবীদের স্বার্থ অনেক মালিকের দ্বারাই লঙ্ঘিত হয়েছে৷ বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে এই শ্রমজীবীদের ন্যূনতম মজুরিও বাড়ানো হয়েছে, যা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে৷

কিন্তু ব্যক্তি খাতের অন্যান্য জায়গাগুলোতে অনেক নৈরাজ্য চলছে৷ বিশেষ করে ‘ইনফর্মাল' শ্রমের ক্ষেত্রে৷ বাড়ির বুয়া বা দারোয়ান বা একজন কৃষি শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি কত হওয়া উচিত, তার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই৷

ন্যূনতম মজুরি নির্ধারিত করে বাজার ব্যবস্থা৷ অর্থাৎ চাহিদা, যোগান ও প্রতিযোগিতাই নির্ধারণ করে শ্রমের মূল্য৷ এটিই পুঁজিবাদী সমাজের নিয়ম৷ কিন্তু কল্যাণ রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে এ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়, শ্রমদাতাদের সুরক্ষার বিষয়টি, যা বাংলাদেশে অনুপস্থিত৷

মালিকদের মর্জির ওপর নির্ভর করে অনেক কিছু৷ এর একটি বড় কারণ, শ্রমের বাড়তি জোগান৷ প্রতি বছর দেশের বাজারে যুক্ত হন ২৬ থেকে ২৭ লাখ নতুন শ্রম৷ যোগানের আধিক্য একদিকে যেমন শ্রমের মূল্য কমায়, তেমনি কমায় শ্রমের মান৷ আর মালিকরা এই সুযোগে কম পয়সায় বেশি মুনাফার সুযোগ খোঁজেন৷ আর এখানেই দরকার সরকারের হস্তক্ষেপ৷

Zobaer Ahmed
যুবায়ের আহমেদ, ডয়চে ভেলেছবি: Zobaer Ahmed

শুধু বাজারই শ্রমের দাম নিয়ন্ত্রণ করবে, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এমন ধারণা পোষণ করলে তা দেশের অর্থনীতির ক্ষতিই করবে৷ লাভ কিছু হবে না৷ তাই ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির বাংলাদেশেও সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে, সংস্কারের প্রস্তাব নিয়ে৷

জার্মানি বা উন্নত দেশগুলোতে আট ঘন্টার বেশি কাজ করানো হলে, তা অপরাধের পর্যায়ে পড়ে৷ কিন্তু বাংলাদেশের ব্যক্তিখাতে শুধু শ্রমই কেনা হয় না, প্রতিষ্ঠানগুলো যেন শ্রমিককেই কিনে নেয়৷

এ অবস্থার উত্তরণ দরকার৷ হয়ত একদিনেই হবে না৷ কিন্তু এর উপায় বের করতে হবে৷

‘ফর্মাল' খাতগুলোতে একটা সিস্টেম এরই মধ্যে আছে৷ ইন্ডাস্ট্রি বিশেষে অন্তত ন্যূনতম মজুরি ও কর্মঘণ্টা নির্ধারণ করা সম্ভব৷ সেই সঙ্গে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় ইউনিয়ন বাধ্যতামূলক করতে হবে৷ সেই ইউনিয়ন মালিকদের সঙ্গে আঁতাত রক্ষার ইউনিয়ন নয়, সত্যিকারের শ্রমের স্বার্থরক্ষার ইউনিয়ন হতে হবে৷ আর ‘ইনফর্মাল' খাতগুলোতেও সমিতি বা ইউনিয়নের মাধ্যমে মজুরি নির্ধারণ ও সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে৷

একটা বিষয় মনে রাখা দরকার, শ্রমিক বাঁচলেই শ্রম বাঁচবে৷ আর শ্রম বাঁচলেই শিল্প বাঁচবে, বাঁচবে অর্থনীতি, বাঁচবে রাষ্ট্র৷ তাই রাষ্ট্র হোক সবার জন্য কল্যাণকর৷

এই বিষয়ে আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য