1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লোকালয়ে হরিণ পালনের জন্য অনুমতি দিতে বাংলাদেশে নতুন নীতিমালা হচ্ছে

১৬ জানুয়ারি ২০১০

বাংলাদেশ সরকার এবার লোকালয়ে হরিণ পালনের জন্য অনুমতি দিতে একটি নীতিমালা প্রনয়ণের উদ্যোগ নিয়েছে৷ নির্ধারিত ফি দিয়ে আগ্রহীরা জনবসতিতে হরিণ পালন করার সুযোগ পাবেন৷

https://p.dw.com/p/LXjj
ছবি: AP

হরিণ না মেরে, বাঁচিয়ে রেখে কাজে লাগানোর সুযোগ

এর আগে বানরের ক্ষেত্রে এ ধরনের একটি নীতিমালা করেছিল ঢাকা চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ৷ চিড়িয়াখানায় জন্ম নেয়া বাড়তি বানর কেনা যায় পালনের জন্য কিছু নিয়ম কানুন মেনে৷ এবার সরকার এমনি এক উদ্যোগ নিল হরিণের জন্য৷ বন বিভাগের অগোচরে কিংবা চোরাকারবারিতে এখনও হরিণ শিকার সেখানে যে বেড়ে গেছে, এ কথা সকলের জানা৷ হরিণ না মেরে, বাঁচিয়ে রেখে কাজে লাগানোর সুযোগ সৃষ্টির করতে জনসচেতনতা তৈরির আহ্বানও জানাচ্ছেন পরিবেশবাদীরা৷ নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার আওতায় নিঝুম দ্বীপের বনাঞ্চল থেকে অতিরিক্ত হরিণ সরানোর সিদ্ধান্ত হলে নতুন হরিণ নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে অনেকেই হরিণ লালন-পালনে আগ্রহী হবেন বলেই অনেকে মনে করছেন৷

১৯৭৩ সাল থেকে বন্যপ্রাণী শিকার নিষিদ্ধ

বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৩ সালে বন্যপ্রাণী অধ্যাদেশ করে যথেচ্ছ শিকার নিষিদ্ধ করে৷ পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে সুন্দরবনের ১৪ লাখ ৯০ হাজার একরের বনে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার হরিণ রয়েছে৷ আর নিঝুম দ্বীপের ৫ হাজার একর বনে আছে ২০ হাজারের বেশি হরিণ৷ নিঝুম দ্বীপে হরিণের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তা কমানোর পরিকল্পনা হচ্ছে৷ কারণ বাড়তি হরিণের জন্য খাদ্যাভাব দেখা দিতে পারে৷ এরই পদক্ষেপ হিসাবে গত বছরের শেষদিকে 'বাংলাদেশে হরিণ লালন-পালন নীতিমালা ২০১০'-এর খসড়া তৈরি করা হয়৷

Hirsch
ছবি: AP

কি আছে নীতিমালায়

বর্তমানে তা রয়েছে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায়৷ তবে এ নীতিমালা কেবল চিত্রা হরিণের জন্যই শুধু প্রযোজ্য৷ ২০০৫ সাল থেকে বাংলাদেশে চিত্রা হরিণসহ অন্যান্য হরিণ শিকার নিষিদ্ধ৷ প্রধান বন সংরক্ষক মোঃ আবদুল মোতালেব বলেন, হরিণ লালন-পালন নীতিমালা-২০১০ বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে৷ আর এ নীতিমালা প্রণীত হলে লাইসেন্সধারীরা লোকালয় বা জনবসতিতে হরিণ পালনের সুযোগ পাবেন৷ এতে বিষয়টি বন বিভাগের নজরদারিতেও থাকবে৷

লাইসেন্স ফি পাঁচশ টাকা

প্রস্তাবিত নীতিমালা অনুযায়ী হরিণ লালন-পালনের জন্য উপযুক্ত শর্ত পূরণ করে আগ্রহী ব্যক্তিকে ফির বিনিময়ে বন বিভাগ থেকে লাইসেন্স নিতে হবে৷ লাইসেন্স ফি ধরা হয়েছে পাঁচশ' টাকা৷ তবে প্রতিটি হরিণের জন্য প্রাথমিকভাবে একশ' টাকা করে পজেশন ফি দিতে হবে৷ পরবর্তী প্রতি বছর একশ'টাকায় তা নবায়ন করা যাবে৷ উল্লেখ্য, বর্তমানে প্রতি জোড়া হরিণের জন্য পজেশন ফি ১০ হাজার টাকা৷ আর প্রতি বছর নবায়ন ফি জোড়াপ্রতি ৫ হাজার টাকা৷ ২০০৭ সালের ৩ জানুয়ারি হরিণ লালন-পালনের জন্য এক আদেশে এ ফি নির্ধারণ করে সরকার৷

Hirsch im Wasser
ছবি: AP

দু্ই প্রজাতির হরিণ বিলুপ্তির তালিকায়

বাংলাদেশে মোট ৫ প্রজাতির হরিণ রয়েছে৷ এর মধ্যে দুই প্রজাতির হরিণ, যথাক্রমে হগ ডিয়ার ও সোয়াম্প ডিয়ার চলে গেছে বিলুপ্তির তালিকায়৷ বাকী তিন প্রজাতির মধ্যে প্রায় হারিয়ে যাওয়ার পথে বারকিং হরিণ ও সাম্বার হরিণ৷ এখন সিলেটের গভীর বন ও কাপ্তাই এবং বান্দারবানে কদাচিৎ দেখা যায়৷ চিত্রা হরিণ এদেশে অন্যান্য হরিণের চেয়ে এখনও বেশ ভালো৷ চট্টগ্রাম পাহাড়ী এলাকা, মধুপুর বন ও সিলেটের গভীর বনে হাতে গোনা কিছু চিত্রা হরিণ থাকতে পারে৷ সর্বশেষ সরকার হরিণ সংকট মোকাবেলায় নিঝুম দ্বীপে হরিণ ছাড়ে৷ এ বনে হরিণের খাবার সংকট ও প্রিডেটর সমস্যা না থাকায় মাত্র এক যুগেই হরিণ বেড়ে যায় হাজারে হাজার৷ চিত্রা হরিণের প্রজননের নির্দিষ্ট কোনো ঋতু নেই৷ এদের গর্ভধারণকাল সাত মাস৷ প্রতিবারে এরা একটি বাচ্চা প্রসব করে, কখনও কখনও দুটি৷ দুই বছরের মধ্যে এরা প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ওঠে৷ পূর্ণবয়স্ক একটি হরিণের ওজন প্রায় ৮৫ কেজি৷

যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ নীতিমালার সফল বাস্তবায়ন ঘটানো সম্ভব হলে দেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে হরিণ চাষ বাড়বে৷ অনেকে শখ করেও হরিণ পালন করবেন৷ এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ রয়েছে৷ তবে সরকারের এ পদক্ষেপে পরিবেশবাদীরা নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না৷ তারা দেশের মূল বনভূমির হরিণের ভবিষ্যত্ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন৷

পরিবেশ সংরক্ষণ আন্দোলনকর্মী বার্ড ক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড হালদার বলেন, হরিণ লালন-পালনের জন্য নীতিমালা যদি ভালো কিছু করার জন্য হয়, তা হলে আপত্তি নেই৷ তবে আমাদের ভয়, এ নীতিমালার সুযোগ নিয়ে একটি শ্রেণী বনাঞ্চল থেকে হরিণ উজাড়ের উত্সবে নামতে পারে৷ অতীতে রফতানির কথা বলে দেশের ব্যাঙ, কচ্ছপকে এভাবে বিপন্নতার মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন এই পরিবেশবিদ৷

প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার

সম্পাদনা: আবদুস সাত্তার