1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রুগেজিতে জলার নাম জীবন

১৪ ডিসেম্বর ২০১৬

রুয়ান্ডার রুগেজি জলাভূমির নৈসর্গিক দৃশ্য যেমন সুন্দর, তেমনই এলাকার মানুষদের বাঁচন-মরণের প্রশ্ন জড়িত এর সাথে৷ রুয়ান্ডার অর্থনীতিতেও রুগেজির গুরুত্ব আছে, কেননা এই পানি থেকেই নাকাতুরু জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের শক্তি আসে৷

https://p.dw.com/p/2UEk5
Rwanda EcoHero: Conservationist, IUCN, Rugezi Marsh
রুগেজি জলাভূমি রক্ষায় কাজ করছে আইইউসিএনছবি: DW/EcoAfrica

জলাভূমির সাথে জড়িত বাঁচন-মরণের প্রশ্ন!

রুয়ান্ডার উত্তরে রুগেজি জলাভূমি প্রায় বিশ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে৷ ফ্রান্সিস মুসোকে হলেন এই এলাকার সবচেয়ে নামকরা পরিবেশ সংরক্ষণকারী৷ আইইউসিএন-এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার মুসোকে বলেন, ‘‘এই জলাভূমি জলকে ফিল্টার করে, জীববৈচিত্র্যের জন্য যা খুব জরুরি৷ আবার এই জলাভূমি থেকে বিভিন্ন নদীতে জল যায়৷ এছাড়া পাহাড়ের অন্যদিকে আরো দু'টি হ্রদের পানিও আসে এই জলাভূমি থেকে৷ নাতারুকা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জলও আসে এই জলাভূমি থেকে৷ কাজেই এই জলাভূমি বাঁচানোটা খুব দরকার৷’’

এই জলাভূমিতে বহু বন্যপাখি বাসা বাঁধে, তাদের মধ্যে পাটকিলে রংয়ের ঝুঁটিওয়ালা সারস বা আইবিস পাখির মতো বিরল প্রজাতিও আছে৷ কিন্তু প্রকৃতি এখন চাপের মুখে৷ ডিম পাড়া থেকে শুরু করে বাচ্চা মানুষ করা পর্যন্ত, এ সব কাজের জন্য পাখিদের চাই নিরিবিলি পরিবেশ, নির্জনতা৷ মুসোকে জানালেন, ‘‘একটা বড় বিপদ হলো, মানুষজন লুকিয়ে-চুরিয়ে এখানে ঢুকে পড়ে, কেননা সব কিছু সুরক্ষিত করা, সব জায়গায় প্রহরী রাখা সম্ভব নয়৷ ওরা ঢুকে ঘাস কাটে, যা জলাভূমির পক্ষে ভালো নয়, কেননা এর ফলে রোদে-তাপে আরো বেশি জল উপে যায়৷ কিন্তু মাটির ক্ষয় আরো খারাপ৷ বর্ষায় ক্রমেই আরো বেশি মাটি ধুয়ে ভ্যালিতে নেমে আসে, কেননা পাহাড়ের ঢালগুলোকে বাঁচানোর মতো গাছ নেই৷’’

স্থানীয় বাসিন্দাদের ঘাস চাই তাদের গরুবাছুরের জন্য৷ এখনই ঘাস খুঁজে পাওয়া মুশকিল৷ পাহাড়ের ঢালগুলোয় আর গাছ নেই বললেই চলে৷ মাটি আর জল ধরে রাখতে পারে না, যা শুধু এই এলাকাতেই নয়, গোটা রুয়ান্ডাতেই একটা বিরাট সমস্যা৷ তার ফলে পানি, জলাভূমি, হ্রদ, সব কিছুই বিপন্ন হচ্ছে৷ ফ্রান্সিস মুসোকে নিয়মিত চাষিদের সঙ্গে দেখা করে সমাধান খোঁজেন, যদিও সহজ সমাধান বলে কিছু নেই৷ অপরদিকে এখানকার মানুষরাও জানেন যে, এভাবে চললে তাদের অস্তিত্বের সংকট দেখা দেবে৷ চাষি ইমাকুলে মাকানগারাম্বে বলেন, ‘‘বিশ বছর আগে এখানে বড় বড় গাছ ছিল, অনেক জঙ্গল ছিল৷ লোকে অনেক গাছ কেটে ফেলেছে৷ আজ তাদের রান্নার কাঠ দরকার, জনসংখ্যাও বেড়ে চলেছে৷ এখন এখানে জন্তুজানোয়ার প্রায় দেখাই যায় না৷’’

সমাধান

একটা সম্ভাবনা হলো পুনর্বনানীকরণ৷ নতুন গাছ লাগিয়ে মাটির ক্ষয় রোধ করা হবে, আবার তা মানুষেরও কাজে লাগবে৷ যেমন হ্যাজেল বাদামের ঝাড় বসিয়ে সেখানে সবজির চাষ করা চলে৷ বাদামগাছের ডালপালা গরুবাছুরের খাদ্য হতে পারে, কাজেই জলাভূমি থেকে ঘাস কাটার দরকার পড়বে না৷ মুসোকে জানালেন, ‘‘আগে লোকে ভাবত, গাছপালা বাগানের পক্ষে ভালো নয়; ভাবত, গাছ লাগালে তা তাদের ফলের গাছ, সবজির গাছ ইত্যাদির বাড় আটকে দিতে পারে৷ কিন্তু ক্রমে ক্রমে, বহু আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ওদের বোঝানো গেছে যে, গাছ লাগানো চাষবাসের পক্ষে উপকারী৷’’

প্রকৃতি সুরক্ষা সংগঠন আইইউসিএন ইতিমধ্যে পাঁচটি নার্সারিতে গাছের চারা বড় করছে, যেমন ইউক্যালিপ্টাস গাছের চারা৷ এই সব নার্সারিতে মানুষজন কাজ করছে৷ এভাবে চার লক্ষ গাছের চারা তৈরি করা সম্ভব হয়েছে৷ কিছু কিছু গাছ রাখা হবে, অন্যগুলো রান্নার কাঠ হবে৷ তবে গোটা এলাকাতে আরো বেশি করে গাছ লাগানো প্রয়োজন৷ নয়ত প্রকৃতির ‘জলচক্র' বিপন্ন হবে৷ জলবিদ্যুৎ রুয়ান্ডার পক্ষে ক্রমেই আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে৷ ইতিমধ্যে দেশের ৪০ শতাংশ জ্বালানি শক্তি আসে জলবিদ্যুৎ থেকে৷ বৃষ্টি না হওয়ার ফলে তাও বিঘ্নিত হচ্ছে৷ নাতাকুরু হাইড্রোপাওয়ার-এর ম্যানেজার জঁ তোয়াজামহোরো বললেন, ‘‘আজকাল জলের উচ্চতা আগের চেয়ে কম, কাজেই পাওয়ার স্টেশনটা চালানো আগের থেকে শক্ত হয়ে পড়েছে৷ জলাভূমি একটি নাজুক পরিবেশ প্রণালী৷ কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আমাদের বিশেষভাবে পানির প্রয়োজন৷’’

জলাভূমি থেকে যে জলধারাগুলি আসে, তাদের আগের মতো বেগ নেই৷ কাজেই জলাভূমি রক্ষা করা আরো জরুরি হয়ে পড়েছে৷ মুসোকে বলেন, ‘‘আমি চাই যে, জলাভূমি বেঁচে থাকুক৷ জলাভূমি আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ করে, জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রকে দেয় শক্তি৷ অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আমাদের পানি চাই৷ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও এই পরিবেশ প্রণালীকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে৷’’

রুগেজি জলাভূমি রুয়ান্ডার একটি গুরুত্বপূর্ণ পানির আধার এবং ভবিষ্যতেও তা থাকবে৷

ইউলিয়া হেনরিশমান/এসি