1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রোহিঙ্গা সংকটের যত অস্পষ্টতা

৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর সেনাবাহিনীর রাগ ও ক্ষোভ খুবই স্পষ্ট৷ তবে তারপরও রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে গ্রেপ্তার ও বিচারের যে প্রচারণা চালু আছে তা থেকে বিরত থাকা উচিত বলে মনে করছেন রোডিয়ন এবিগহাউসেন৷

https://p.dw.com/p/2jUxN
Bangladesch Rohingya Flüchtlinge bei Cox’s Bazar
ছবি: Reuters/M. Ponir Hossain

সরল চোখে দেখলে, মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলের রাখাইন রাজ্যের অবস্থা কালো আর সাদা বলে মনে হয়৷ একটি জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠী আছে যারা বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত সম্প্রদায়গুলির মধ্যে অন্যতম৷ এরা দিনের পর দিন নির্মমভাবে নিপীড়িত হচ্ছে৷ অধিকাংশ বৌদ্ধ এবং মায়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীই অত্যাচারী আর রোহিঙ্গারা হচ্ছে তার শিকার৷

এই দ্বন্দ্ব নিয়ে নির্ভেজাল তথ্য ও সঠিক বিবরণীর অভাব সব সময়ই ছিল৷ সেই অবস্থাতেই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এ সব তথ্য প্রচার করা হয়৷ মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর অপরাধ প্রমাণ করাতে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো রোহিঙ্গাদের ভয়াবহ সব ছবিতে ভাসছে৷ এই ছবির অনেকগুলো আবার মিথ্যা সংবাদ বানাতে ব্যবহার করা হচ্ছে৷

Bangladesch Rohingya Flüchtlinge bei Cox’s Bazar
ছবি: Reuters/M. Ponir Hossain

প্রচারের জন্য বিশ্বের অন্যান্য জায়গার দ্বন্দ্ব-সহিংসতার ছবিও ব্যবহার করা হচ্ছে৷ অন্যদিকে, মিয়ানমারের কার্যনির্বাহী নেত্রী অং সান সু চির নেতৃত্বে সরকার কোনো ধরনের অন্যায় কাজকে অস্বীকার করেন এবং ইসলামি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে অঙ্গীকারবন্ধ৷

একটি জটিল পরিস্থিতি

সারা বিশ্বের রাজনীতিবিদ, নানা সংগঠন এবং তারকারা রাখাইন সংকটের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন৷ সেই সাথে সহিংসতা বন্ধে মিয়ানমার সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন৷ কিন্তু মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক, ইন্দোনেশিয়ায় রাষ্ট্রপতি জোকোভি, চেচনিয়ার রমজান কাদিরভ এবং তুরস্কের রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ানের মত কিছু রাজনীতিবিদ রোহিঙ্গাদের কষ্টের চেয়ে মুসলিম ভ্রাতৃত্বের অ্যাজেন্ডা নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন৷ আর এভাবেই, এই নেতারা রাখাইনদের মধ্যেকার সংঘর্ষ নিয়ে  নিজেদের মতো করে অপ্রচলিত ও তাত্ত্বিক চিন্তাভাবনা প্রচার করছেন৷

কিন্তু সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের ব্যাপারে যারা আসলেই আগ্রহী, তারা দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের জটিলতা বিবেচনা করে এবং দ্রুত বিচার এড়ানোর কথাই বলবেন৷

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কয়েক দশক ধরে মিয়ানমারের ‘রোহিঙ্গা‘ শব্দটি নিয়ে বিতর্ক আছে৷ রাখাইনের মুসলমানরা তাদের কর্মী, রাজনীতিবিদ এবং প্রতিনিধিরা ‘রোহিঙ্গা‘ নামে পরিচিত৷ মিয়ানমার সরকার ‘রাখাইন রাজ্যে মুসলিম' শব্দটির ওপর জোর দেয়৷ তবে ইসলামের কিছু মৌলবাদী প্রতিপক্ষ প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে আসার জন্য তাদের ‘বাঙালি' বলে৷

ঔপনিবেশিক যুগের পর থেকে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে জাতীয়তা ও নাগরিক অধিকারকে জাতিগতভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে৷ ‘রোহিঙ্গা' শব্দটির ব্যাপারে মতপার্থক্য থাকায় রাষ্ট্রের অন্য অনেক সমস্যার মতো এটি এখনো আলোচনার বিষয় বলে বিবেচিত হয়৷ কারণ এতে শান, কাচিন বা চিনের মতো রাজ্যগুলির মতো বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীকে নির্দেশ করবে৷ কেবল যারা আদিবাসী জাতিগত গোষ্ঠীর সদস্য, তারাই দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পাবে৷

রোডিয়ন এবিগহাউসেন
রোডিয়ন এবিগহাউসেন, ডয়চে ভেলেছবি: DW

স্বীকৃতির জন্য লড়াই

এই পরিস্থিতিতে, এটাই যৌক্তিক যে রোহিঙ্গারা একটি আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃত হয়ে উঠেছে যাদের পূর্বপুরুষরা আজকের মিয়ানমারের অংশে সব সময় বসবাস করত৷ হংকং-ভিত্তিক গণমাধ্যম এশিয়া টাইমসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে রোহিঙ্গা জঙ্গিরা জানিয়েছে,  নাগরিক অধিকার পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে৷

তবে সত্যটা এই যে, রাখাইনরা বৌদ্ধধর্মের দ্বারা বছরের পর বছর ধরে শাসিত হয়েছে আর সবসময়ই সেখানে বিভিন্ন ধরনের মুসলিম সংখ্যালঘুদের দ্বারা বেষ্টিত থেকেছে৷

বিদ্বেষের চক্র ভাঙা

‘রোহিঙ্গা' শব্দটি নানা কারণে ভীষণ রাজনৈতিক শব্দ৷ মিডিয়া, অ্যাক্টিভিস্ট বা রাজনীতিবিদরা এটি ব্যবহার করে একটি রাজনৈতিক অবস্থান থেকে৷ একইসাথে, ‘রাখাইন রাজ্যে মুসলমান' শব্দটি কোনোভাবে নিরপেক্ষ নয়৷

এই দ্বন্দ্বই বলে দিচ্ছে যে, এই সমস্যার সমাধান নিরপেক্ষভাবে হওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই৷ তবে মানবিক বিপর্যয়ের বেলায় নীরবতা কোনো বিকল্প হতে পারে না৷ কিন্তু যারা এ ব্যাপারে এখন মতামত দেবে তারাও যে এই  দ্বন্দ্বের অংশ হয়ে উঠবে তা পরিষ্কার৷

তবে কোনোক্ষেত্রেই রাজনীতিবিদ বা অ্যাক্টিভিস্টরা যেন নিজেদের স্বার্থে এই ইস্যুকে ব্যবহার না করেন৷ তাহলে ২০১২, ১৯৯২ এমনকি ১৯৭৮ সালের আগেও যেসব সহিংসতা হয়েছিল তা সেগুলোর মতোই সহিংসতা কেবল বাড়তেই থাকবে আর সমাধানের উদ্যোগ ব্যর্থ হবে৷

রোডিয়ন এবিগহাউসেন/এএম