গর্ভাবস্থায় মানসিক অসুখ
৩১ আগস্ট ২০১৪গর্ভাবস্থায় বিষন্নতা নতুন কিছু নয়৷ হরমোনগত পরিবর্তনের সঙ্গে গর্ভাবস্থায় মানসিক রোগ বা ‘ডিপ্রেশন' দেখা দিতেই পারে৷ এমনকি সন্তান জন্মের পর জন্মোত্তর বিষন্নতাও দেখা যায় কোনো কোনো মায়ের মধ্যে৷ এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে অনেক মা-ই শক্তিশালী ‘অ্যান্টি ডিপ্রেসান্ট'-এর দ্বারস্থ হন৷ আর সেখানেই দেখা দেয় সমস্যা৷
গর্ভকালীন সময়ে আপনি যদি নিয়মিত এ ধরনের ওষুধ খান, তাহলে আপনার শিশুর ‘অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডার' (এডিএইচডি), অর্থাৎ ‘মনোযোগের অভাব এবং অতি-সক্রিয়তা' হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় বহুগুণ৷ অতীতে এডিএইচডি-র সঙ্গে মূলত জিনগত সম্পর্কের কথা বলা হলেও, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের ‘মলিকিউলার সাইকিয়াট্রি' বিভাগের অধ্যাপক রয় পেরলিস-এর গবেষণায় কিন্তু এমনটাই উঠে এসেছে৷
এডিএইচডি অসুখ হলে শিশুদের মধ্যে অন্যমনস্কতা, অতিরিক্ত চঞ্চলতা বা অতি আবেগের সমস্যা দেখা দেয়৷ এতে শিশুরা অতিরিক্ত মানসিক চাপ, অনিদ্রা, পড়াশোনায় অমনোযোগিতা ইত্যাদি সমস্যায় ভোগে৷ অনেকক্ষেত্রে অন্যান্য আচরণগত সমস্যা, যেমন অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যায়৷ এমনকি কখনো সখনো এডিএইচডি-র ফলে তাদের শারীরিক বিকাশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷
চিন্তার বিষয় এটাই যে, গর্ভধারণের পর কোনো মা যদি ‘অ্যান্টি ডিপ্রেসান্ট' জাতীয় ওষুধ হঠাৎ করে বন্ধ করে দেন, তাহলে এ সমস্যা আরও বাড়তে পারে৷ তবে সাধারণ, নিত্য-নৈমিত্তিক মন খারাপের ক্ষেত্রে ‘অ্যান্টি ডিপ্রেসান্ট'-এর প্রয়োজন হয় না৷ এ রকম ওষুধের প্রয়োজন হয় ‘ক্রনিক ডিপ্রেশন'-এর ক্ষেত্রে৷ মুশকিল হচ্ছে, মনের অসুখ, মন খারাপ বা গর্ভকালীন বিষন্নতা কখন যে মানসিক রোগের আকার ধারণ করে – সেটা বোঝাই সবচেয়ে কঠিন৷ তাই গর্ভাবস্থায় মায়ের মধ্যে মানসিক অসুখের কোনোরকম লক্ষণ শনাক্ত করা গেলে, অবিলম্বে বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া অত্যন্ত জরুরি৷
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে এডিএইচডি যেন একটি সাধারণ রোগে পরিণত হয়েছে৷ দেশটিতে প্রতি বছর ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সের প্রায় ৯ শতাংশ শিশুর মধ্যে ধরা পড়ছে এ রোগ৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, স্কুলগামী শিশুদের মধ্যে ৩-৫ ভাগ শিশুই এডিএইচডি-তে ভুগছে৷
‘রিটালিন' জাতীয় উত্তেজক ওষুধ ব্যবহারে শিশুদের আচরণে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব হলেও, এর ফল হতে পারে দীর্ঘমেয়াদি – এমনটাই ধারণা চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের৷
ডিজি/জেডএইচ (এএফপি, এপি)