1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কি এ যুগের ‘গোবুচন্দ্র'?

আশীষ চক্রবর্ত্তী১২ আগস্ট ২০১৫

প্রাচীন কালে এক রাজ্যে দেখা দিল মহাসংকট৷ রাজার নাওয়া-খাওয়া-ঘুম হারাম৷ অবশ্য মুশকিল আসান হয়েছিল৷ এখন ভারতও নাকি সংকটে৷ সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এমন উপায়ের কথা ভাবছেন, যা দূরদৃষ্টিসম্পন্ন কোনো মন্ত্রীকে একটুও মানায় না৷

https://p.dw.com/p/1GEJT
Indien Bangladesch Fahne Flagge
ছবি: Getty Images/G. Crouch

মানায় শুধু গোবু রায়কে৷ হ্যাঁ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জুতা আবিষ্কার'-এর সেই গোবু চন্দ্র রায়৷ পৃথিবীর মানুষ তখনো জুতা কী জিনিস জানতো না৷ এক রাজ্যের রাজা হাঁটতে গেলেই পায়ে ধুলা লাগে বলে একদিন খুব ক্ষেপে গেলেন৷ ঝটপট মন্ত্রীকে ডেকে বললেন,

‘‘শুন গো গোবুরায়,
কালিকে আমি ভেবেছি সারা রাত্র—
মলিন ধূলা লাগিবে কেন পায়
ধরণীমাঝে চরণ ফেলা মাত্র!
তোমরা শুধু বেতন লহ বাঁটি,
রাজার কাজে কিছুই নাহি দৃষ্টি৷
আমার মাটি লাগায় মোরে মাটি,
রাজ্যে মোর একি এ অনাসৃষ্টি!''

তারপর তো লঙ্কাকাণ্ড শুরু হয়ে গেল৷ মন্ত্রী গোবুচন্দ্র প্রথমে ধুলো নিশ্চিহ্ন করতে সাড়ে সতেরো লক্ষ ঝাড়ু দিয়ে সারা দেশ ঝাঁট দেয়ানোর ব্যবস্থা করলেন৷ তাতে উল্টে, ‘জগৎ হলো ধুলায় ভরপুর'৷ নদী, পুকুরের সব পানি কাঁদা হয়ে গেল৷ জলচর প্রাণী মরে শেষ হতে লাগল৷ কাঁদাপানিতে গোসল করতে গিয়ে সর্দি-জ্বর হয়ে মানুষের অবস্থাও মহাকাহিল৷ ধুলা ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে গিয়ে বিপদ বাড়ে দেখে ঠিক হলো, দেশটাকেই বরং চামড়ায় মুড়ে দিতে হবে৷ এক মুচিকে ডাকা হলো৷ মুচি এলেন৷ রাজসভায় মহাক্ষমতাধর আর মহাজ্ঞানীদের ভিড়৷ তাঁদের অনেকেই মহাচাটুকার৷ রাজার প্রশংসা করাই তাঁদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ৷ এমন এক সভায় সামান্য এক মুচিকে ডেকে যখন বলা হলো, ধুলা দূর করতে সারা দেশটাকে চামড়া দিয়ে ঢেকে দিতে হবে – মুচি তো অবাক! মনে মনে নিশ্চয়ই তিনি ভাবছিলেন, ‘‘এরা কী আহাম্মক, এত ছোট একটা সমস্যাও সমাধান করতে পারেনা! সামান্য একটা সমস্যা মহা আয়োজনে দূর করতে গিয়ে দেশের জন্য আবার কী মহাসর্বনাশই না এরা ডেকে আনতে যাচ্ছে!'' মুখে অবশ্য এ সব বলেননি৷ বললে তো গর্দান যাবে৷ ভয়ে ভয়ে মুচি তাই নিজের বুদ্ধিটা রাজাকে জানানোর জন্য বললেন,

‘‘বলিতে পারি করিলে অনুমতি,

সহজে যাহে মানস হবে সিদ্ধ৷

নিজের দুটি চরণ ঢাকো, তবে

ধরণী আর ঢাকিতে নাহি হবে৷’’

ব্যস, সেই থেকে সেই রাজ্যের সবাই জুতা পায়ে দেয়া শুরু করল৷ কারো পায়ে ধুলা লাগা বন্ধ হলো৷

বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সমস্যার কারণ ‘ধুলা' নয়৷ ছিটমহল বিনিময়ের পর কোনো সমস্যাকেই তো আর দু'দেশের কাছে সমাধানের অযোগ্য মনে হওয়ার কারণ দেখি না৷ সদিচ্ছা থাকলে, আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যারই সমাধান সম্ভব৷ কিন্তু ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ যেমন আগে গুলি করে মানুষ মারে, তারপর পতাকা উড়িয়ে ফ্ল্যাগ মিটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায়, ভারতের স্বরাষ্টমন্ত্রী রাজনাথ সিংও যেন সেরকম৷ হ্যাঁ, আজকাল তাঁকে কেন জানি খুব ‘বিএসএফ বিএসএফ' মনে হচ্ছে!

Indien Schmuggel Rinder Markt
বাংলাদেশে গরুর মাংসের দাম বেড়েছে শুনে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ‘খুশি’ছবি: Shaikh Azizur Rahman

বিএসএফ-এর মূল কাজ তো সীমান্ত পাহাড়া দেওয়া৷ পাহাড়া দেয়ার মানে হলো, অবৈধভাবে পাখি বা পিঁপড়া, ইঁদুর এই জাতীয় কিছু প্রাণী ছাড়া অন্য সব দৃশ্যমান প্রাণী, সে প্রাণী মানুষই হোক কিংবা গরু, তাকে ঢুকতে বা বের হতে না দেয়া৷ কিন্তু বিএসএফ প্রায়ই গরু ছেড়ে দেয় আর মানুষ গুলি করে আটকায়৷ ফেলানীর গুলিবিদ্ধ লাশ কাঁটাতারে ঝুলতে থাকলেও বিএসএফ-এর কিছু যায়-আসে না৷

রাজনাথ সিং বোধহয় একেবারে বিএসএফ-এর মতো নন, তার চেয়ে একটু ভালো৷ তিনি বোধহয় গোবুচন্দ্রের মতো৷ মানুষ এবং গরু – দু'ধরণের প্রাণীকেই আটকাতে চাইছেন তিনি৷ এবং কাউকেই গুলি করার কথা ভাবছেন না৷ এ কারণে তাঁর প্রশংসা করতেই হবে৷ রাজনাথ সিং অবশ্যই বিএসএফ-এর মতো নন, তার চেয়ে ভালো৷

গরু নিয়ে খুব ভাবেন রাজনাথ সিং৷ কয়েকদিন আগেই তিনি বলেছেন, ‘‘বাংলাদেশের হাইকমিশনার আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন৷ আমরা গরু পাচার নিয়ে কথা বলেছি৷ রাষ্ট্রদূত জানালেন সীমান্তে কড়াকড়ি শুরু হওয়ার পর সে দেশে গরুর মাংসের দাম নাকি ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে৷ শুনে আমি খুশি হয়েছি৷''

Deutsche Welle DW Arun Chowdhury
আশীষ চক্রবর্ত্তী, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Henriksen

এবার আরো খুশি হতে চান রাজনাথ সিং৷ তাই মানুষ নিয়েও ভাবতে শুরু করেছেন৷ তিনি বলছেন, বাংলাদেশ থেকে যে হারে মানুষ অবৈধভাবে যাচ্ছে, তাতে নাকি ভারত মহাসংকটে পড়ে যাচ্ছে৷ তাই ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত একেবারে বন্ধই করে দেবেন রাজনাথ সিং৷ পায়ে ধুলা লাগে বলে গোবুচন্দ্র সারা দেশ চামড়ায় মুড়ে দিতে চেয়েছিলেন কয়েক শত বর্ষ আগে৷ এ যুগে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে রাজনাথ পুরো সীমান্তই বন্ধ করে দিতে চান!

আচ্ছা, বাংলাদেশ থেকে মানুষ অবৈধভাবে ভারতে যাচ্ছে – এই তথ্য জেনে নরেন্দ্র মোদী কি রাজনাথ সিংকে ডেকে বলেছেন, ‘‘কালিকে আমি ভেবেছি সারা রাত্র!'' তাঁর ভাবনা দূর করতে গিয়েই কি সীমান্ত সিলগালা করতে চাইছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী? তাহলে সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষর, ছিটমহল বিনিময় – এ সব করে যে দু'দেশের সম্পর্ক আরো ভালো করার আশা জাগানো হলো তার কী হবে?

রাজনাথ বাবু, আপনি বরং দিল্লির রাস্তা থেকে কোনো মুচি বা দর্জিকে ডেকে এনে তাঁর পরামর্শ চান৷ সেই মুচি বা দর্জি নিশ্চয়ই দু'দেশের সীমান্ত বন্ধ না করে সীমান্তের ‘অতন্দ্র প্রহরীদের' পকেট সেলাই করার বুদ্ধিটাই দেবেন৷ তখন আর কেউ টাকা বা রুপি পেকেটে পুরে অবৈধভাবে মানুষ বা গরু এপার-ওপার করবে না৷ সীমান্ত খোলা থাকলেও অবৈধ মানুষ, গরু, মাদক, জাল নোট বা অন্য কোনো পন্য পারাপার তখন একদম বন্ধ হয়ে যাবে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য