বার্লিন প্রাচীরের পতনের ১৯তম বার্ষিকী
৯ নভেম্বর ২০০৮জার্মানীর পশ্চিম অংশ থেকে পূর্বাংশকে আলাদা করতে ১৯৬১ সালে বার্লিনের এই দেয়াল নির্মাণ করেছিলো তত্কালীন পূর্ব জার্মানির কমিউনিস্ট সরকার৷ মূল উদ্দেশ্য, পূব পারের লোকজনের পশ্চিম পারে যাওয়া ঠেকানো৷ তবে কমিউনিস্ট শাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে তা থেকে মুক্তির পথ খুঁজতে পশ্চিমের হাতছানিতে দেয়াল টপকাতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে বহু জার্মানের৷ অবশেষে ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে ১৯৮৯ সালের ৩ নভেম্বর ভেঙ্গে ফেলা হয় ৯৭ মাইল দীর্ঘ বার্লিনের দেয়াল৷ এর পরের বছরই পুনরেকত্রীত হয় দুই জার্মানি৷
তবে পূর্ব জার্মানির এই ইতিহাস সম্পর্কে খুব বেশি আগ্রহী নয় জার্মান তরুণরা৷ তাদের অনেকেই জানে না আসলে কারা নির্মাণ করেছিলো এই দেয়াল৷ শুধু তাই নয় প্রবীনরাও যেন ভুলতে শুরু করেছেন সেসব দিনের কথা৷ বিষয়টিকে খুব ভালোভাবে দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা৷ জার্মান রাষ্ট্র বিজ্ঞানী উবে হিলমারের মতে, বিগত বছরগুলোতে প্রবীনদের মনেও তত্কালীন পূর্ব জার্মানী কেমন চমত্কার এক স্থান হয়ে উঠেছে৷ অনেকের কাছেই এখন মনে হচ্ছে সেখানে কত শান্তি ছিলো, কর্মসংস্থানের সুযোগ ছিলো৷ গোপন পুলিশ বাহিনী শ্টাসির কর্মকান্ডের কথাও ভুলে যাচ্ছে অনেকে৷
সম্প্রতি বার্লিন ফ্রি ইউনিভার্সিটির চালানো এক জরিপে দেখা গেছে, জার্মানির পূর্বাংশের ১৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের অর্ধেকই মনে করে না পূর্ব জার্মানিতে স্বৈরশাসন ছিলো৷ আর পশ্চিম জার্মানির প্রতি তিন জনের একজন তরুণ মনে করে এমনটা৷ এমনকি অনেকে মনে করে পূর্ব জার্মানি শাসন করতেন আডল্ফ হিটলার!
৫২০০ কিশোর-কিশোরীর উপর চালানো জরিপে আরো দেখা গেছে, তাদের অর্ধেকই শ্টাসিকে সাধারণ গোয়েন্দা সংস্থা বলেই জানে৷ কিন্তু শ্টাসি সদস্যরা যে লোকজনের বাড়িতেও আড়ি পাততো তা জানে না তারা৷ জার্মান স্কুল শিশুদের মাত্র তিন ভাগের এক ভাগ জানে তত্কালীন পূর্ব জার্মান সরকার নির্মাণ করেছিলো বার্লিনের দেয়াল৷ বাকিদের ধারণা, এই দেয়াল পশ্চিম জার্মানি নয়তো তাদের পশ্চিমা মিত্ররা নির্মাণ করেছিলো৷
বিশেষজ্ঞদের মতে, এর জন্য শিক্ষা পদ্ধতিও কিছুটা দায়ি৷ কারণ, অনেক শিক্ষকই মনে করেন পূর্ব জার্মানিতে কমিউনিস্ট শাসন অতটা খারাপ ছিলো না৷ আর তাই শিশুরা সঠিক বিষয়টি জানতে পারছে না৷
পূর্ব জার্মানির একটি জাদুঘরের কিউরেটর সম্প্রতি এক নিবন্ধে লিখেছেন, তখন ক্ষমতাসীন দল জনগণের দাম্পত্য সম্পর্ক, বিয়ে বিচ্ছেদ, অ্যালকোহল গ্রহণ, বাচ্চাদের ছোট খাট ভুলসহ সমস্ত বিষয়েই মাথা ঘামাতো৷
রাষ্ট্র বিজ্ঞানী হিলমার বলছেন, এত কিছুর পরও জনগণ সব ভুলে যাচ্ছে৷ কারণ, ইতিহাসকে কমই আমল দেয় তারা, মন্তব্য হিলমারের৷