বাতের অসুখে ভুগছে ৪০ হাজার শিশু-কিশোর
বাত – এই রোগটিকে বুড়োদের অসুখ মনে হলেও আসলে কিন্তু মোটেই তা নয়৷ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশুরাও খুব ভোগে৷ এমনকি হাড় ভেঙে পঙ্গুও হয়ে যেতে পারে তারা৷ বাতরোগ নিয়ে আরো কিছু তথ্য পাবেন এই ছবিঘরে৷
৪০ হাজার শিশু-কিশোর বাতের রোগী
৪০ হাজার শিশু-কিশোর বাতের রোগী জার্মানিতে ৯০ লাখ বাত রোগীর মধ্যে ৪০ হাজারই শিশু-কিশোর৷ তাদের রয়েছে নানা ধরনের বাত রোগ৷ অর্ধেকেরই হাড়ের জয়েন্টে ব্যথা থাকে দীর্ঘদিন৷ এ সমস্যা পরবর্তীতে হাড়ের ক্ষয়-ক্ষতিও করতে পারে, এমনকি এর ফলে হাড় ভেঙেও যেতে পারে৷
শিশুরা অসম্ভব সাহসী
‘‘শুধু বুড়ো বয়সেই বাতের ব্যথা হয়, এ কথা সত্যি নয়৷ বাত ছোট-বড় সবারই অসুখ, তবে শিশু-কিশোররা অসম্ভব সাহসী বলে ওদের এ রোগ হলে তেমন বোঝা যায় না৷’’ – এ মন্তব্য ডা. ইয়োহানেস পেটার হাস-এর, যিনি জার্মানির গার্মিশ-পার্টেনকির্শেনে অবস্থিত একটি হাসপাতালের সঙ্গে জড়িত৷ এটাই শিশু-কিশোরদের বাতের চিকিৎসার জন্য তৈরি প্রথম এবং একমাত্র হাসপাতাল৷
রোগ এক, তবে চেহারা অনেক
বাত হলে শরীরের নানা অংশের হাড়ে, বিশেষ করে অস্থিসন্ধি বা জয়েন্টে ব্যথা হয়৷ তবে সবচেয়ে বেশি ব্যথা হয় হাঁটু, হাত এবং পায়ের গোড়ালিতে৷ বাত সাধারণভাবে বংশগত রোগ হলেও, এটাই বাত হওয়ার একমাত্র কারণ নয়৷
যখন টের পাওয়া যায়
‘‘প্রথমে হাড়ে ইনফেকশন বা সংক্রমণ হয় যা খেলাধুলার সময়ই টের পাওয়া যায়৷ তারপর হাড়ের গ্রন্থির মধ্য দিয়ে হাড়ের ভেতরে প্রবেশ করে আস্তে আস্তে তা ছড়িয়ে পড়ে পুরো হাড় ভেঙে দিতে পারে৷ তবে ‘‘ইনফেকশনটি এতদূর যেন না যায়, সেজন্য গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসা করাই হচ্ছে আমাদের মূল লক্ষ্য’’, ডয়চে ভেলেকে এ কথা বলেন ডা. হাস৷
বাত শিশুদের অন্ধও করে দিতে পারে
কিছু কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে পাঁচটিরও বেশি হাড়ের জোড়ায় বাত হয়৷ এটাকে বলা হয় পলিআর্থরাইটিস৷ এটা একেবারে শিশু বয়সেই শুরু হয় এবং এক পর্যায়ে এতে চোখও আক্রান্ত হতে পারে৷ ফাবিও-কে দেখুন ছবিতে৷ ওর চোখের নার্ভ আক্রান্ত হয়েছিল, তখন তার অন্ধ হওয়ারও আশঙ্কা ছিল৷ ফাবিও-র তিন বছর বয়সে বাত ধরা পড়ে৷
ডাক্তারদের সময় লেগেছে
ফাবিও-র বাবা ফ্রাংক ভাগনার বলেন, ‘‘ছেলের এরকম বাত হওয়ার খবর শুনে আমরা হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম, ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম৷ তাছাড়া অসুখটি ধরতে ডাক্তারদের অনেক সময় লেগেছে৷’’
ফাবিও এখন...
ফাবিও-র বয়স এখন ১৫৷ ওর হাত, পা, চোয়াল, কোমর – অর্থাৎ শরীরের বেশ কয়েকটি অঙ্গ বাতে আক্রান্ত৷ ফাবিও-র প্রিয় মিউজিক ব্যান্ড বিলি ট্যালেন্ট৷ বড় হয়ে কী হতে চায় সে? ‘‘আমি বড় হয়ে ‘আইটি’ বিশেষজ্ঞ হতে চাই’’, বলে সে৷ ফাবিও-র মনের জোর দারুণ৷ হাতপাতালে থাকা, ইনজেকশন, ফিজিওথেরাপি ইত্যাদি নিয়ে যখন সে কথা বলে, মনে হয়, ও সর্দি-কাশি বা ঠান্ডা লাগা নিয়ে কথা বলছে৷
এ রোগে আক্রান্তরা মানসিক কষ্টও পায়
হাঁটাচলা এবং বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম বাতের থেরাপিরই একটি অংশ৷ হাঁটুর অস্ত্রোপচারের কারণে অন্য কোনো খেলাধুলা করতে না পারলেও ফাবিও সাইকেল চালাতে এবং সাঁতার কাটতে এবং মাছ ধরতে ভালোবাসে৷ ও জানালো, ‘‘যদি ফুটবল খেলতে পারতাম, তাহলে সবচেয়ে ভলো লাগতো৷ কিন্তু বাতের কারণে সেটা যে করার উপায় নেই৷’’
ব্যায়াম
‘‘বাত হলে ব্যথা হবেই৷ একটার সঙ্গে আরেকটার সম্পর্ক নিবিড়৷ বাতের চিকিৎসায় ব্যথা কমানোই প্রথম এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ৷ এ ধাপের প্রধান অংশই হচ্ছে, ফিজিওথেরাপি এবং হাঁটাচলা, ব্যায়াম করা৷ লক্ষ্য রাখতে হবে, যেন রোগী স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা করে, তা না হলে হাঁটাচলাই আবার হাড়ের জয়েন্টের ক্ষতি করতে পারে’’, মন্তব্য ডা. হাসের৷
সময়মতো সঠিক চিকিৎসা
যদি কিশোর-কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালে বাতের সঠিক চিকিৎসা করানো হয়, তাহলে তাদের বড় হলে আর বাত থাকবে না৷
ক্লিনিকে ‘ক্লাইম্বিং ওয়াল’
বাত চিকিৎসার এই বিশেষ হাসপাতালে এক বয়সের ছেলে-মেয়েদের একই ধরণের সমস্যা৷ তাই নিজেদের আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে ওরা একে অন্যের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারে, সহজেই৷ এখানে কারো নিঃসঙ্গ বোধ করার কোনো সুযোগ নেই৷ ক্লিনিকের দেয়ালে রয়েছে বিশাল এক ‘ক্লাইম্বিং ওয়াল’৷ সেখানেও সকলে মিলেই চড়ার চেষ্টা করে তারা৷
আত্মবিশ্বাস
বাতের ক্লিনিকে বেয়ে বেয়ে ওপরে ওঠার এই দেয়াল দেখে অনেকেরই প্রশ্ন, ‘‘বাত রোগীদের ক্লিনিকে ক্লাইম্বিং-এর ব্যবস্থা কেন ?’’ এ প্রশ্নে ডা. হাসের উত্তর, ‘‘কিশোর-কিশোরীদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোয় এই মজার খেলা বিরাট ভূমিকা পালন করে৷ এখানে দু’সপ্তাহের থেরাপি শেষে বাড়ি যাবার সময় এদের অনেককেই বলতে শুনি, ‘‘বাত থাকা সত্ত্বেও আমি ৬ মিটার উঁচু ক্লাইম্বিং ওয়ালে উঠতে পারি!’’