ফিচার অফ দ্য উইক
১১ জানুয়ারি ২০১৩এই যেমন ‘‘শ্রাবণের পুরো ভাদ্রের বার; এর মধ্যে যত পার''৷ অর্থাৎ খনা বলছেন, সারা শ্রাবণ মাস ধরে ধান রোপন করা গেলেও ভাদ্রের যাবে ১২ তারিখ পর্যন্ত৷ আবার কৃষিকাজের ক্ষেত্রে আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানা জরুরি একটি বিষয়৷ সেটা নিয়েও খনার বচন রয়েছে৷ খনা বলছেন, ‘‘চৈত্রেতে খর খর; বৈশাখেতে ঝড় পাথর৷ জ্যৈষ্ঠতে তার ফুটে; তবে জানবে বর্ষা বটে৷''
কিন্তু কে এই খনা? এ সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ও বাংলা একাডেমীর সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ বললেন, ‘‘খনা কে তা নিয়ে নানা মত রয়েছে৷ এবং সেগুলোর কোনোটাকেই বৈজ্ঞানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়নি৷ কেউ বলেন, খনা সিংহলরাজের মেয়ে ছিলেন, কারও মতে তিনি ছিলেন ওডিশা রাজার মেয়ে বা সেখানকার বাসিন্দা, কেউ বলেন খনার জন্ম পশ্চিমবঙ্গের বারাসাত এলাকায়৷ আবার কোনো কোনো পন্ডিতের মতে, বচনগুলোর সঙ্গে যেহেতু দিনক্ষণের একটা সম্পর্ক আছে সেখান থেকে ‘খনা' শব্দটা এসেছে৷''
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সহ কয়েকজন পন্ডিতের লেখার বরাত দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক বলেন, প্রায় নয়শো বছর আগে অত্র অঞ্চলে মুসলমানদের রাজ্য জয়ের আগে থেকেই কিছু কিছু খনার বচন প্রচলিত ছিল৷ তবে খনার বচন বলে যা পরিচিত তার সবগুলোই যে খনার মুখ থেকে এসেছে তা নয়৷ অধ্যাপক শাহেদ বলেন, ‘‘লোকসাহিত্যের ক্ষেত্রে যেটা হয় যে একজন কিছু একটা শুরু করে৷ যেমন খনার ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে৷ খনা হয়তো শুরু করেছেন৷ তারপর এ সম্পর্কিত আরও যা এসেছে সেগুলো খনার নামেই পরিচিতি পেয়েছে৷''
খনা জ্যোতির্বিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন৷ তাই আবহাওয়া বা কৃষি সংক্রান্ত যে বচনগুলো তিনি দিয়েছেন সেগুলো বেশ কার্যকর৷ কিন্তু এতকাল আগে খনা কীভাবে পূর্বাভাসগুলো দিতেন৷ অধ্যাপক শাহেদ বলছেন, ‘‘দর্শন এবং বিজ্ঞান আবিষ্কারের আগে থেকেই মানুষ লোকদর্শন আর লোক-প্রযুক্তির ব্যবহার করতো৷ লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, আমরা যারা শহরে বাস করি তারা মেঘ দেখলে বলতে পারবো না কখন বৃষ্টি হবে, বা আদৌ হবে কিনা৷ কিন্তু একজন কৃষক সেটা বলে দিতে পারবে৷ আসলে এগুলো হলো দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার ফল৷ খনার বচনগুলোতেও দীর্ঘদিনের লোক অভিজ্ঞতা প্রসার ঘটেছে৷''
বাংলা একাডেমীর সাবেক মহাপরিচালক বলেন, বর্তমানে প্রায় শ দুয়েক খনার বচনের প্রচলন রয়েছে৷ তবে অধ্যাপক আলী নেওয়াজের একটি গবেষণা প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঐ প্রতিবেদনে অধ্যাপক নেওয়াজ গবেষণার সময় কোনো কোনো কৃষকের কাছে হাজার খানেক খনার বচন থাকার কথা জানতে পেরেছিলেন বলে উল্লেখ করেছেন৷
অধ্যাপক শাহেদের মতে, আজকের এই আধুনিক যুগেও খনার বচনের কার্যকারিতা শেষ হয়ে যায়নি৷ বরং গ্রামে গঞ্জের কৃষকরা এখনো যেভাবে কাজ করছেন তাতে খনার বচনের প্রভাব রয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি মনে করি, একজন কৃষিবিজ্ঞানী বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে লেখাপড়া শেষ করে তাত্ত্বিক যেসব কথা বলবেন তার চেয়ে একজন কৃষক বেশি বাস্তব কথা বলবেন৷ কৃষকদের এই জ্ঞানের পেছনে খনার বচন বলে পরিচিত যে জ্ঞানের সংকলন সেটার একটা প্রভাব আছে৷''