1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ওয়ার্ল্ড চিলড্রেন’স প্রাইজ

৯ জুন ২০১২

২০১২ সালের ‘দ্য ওয়ার্ল্ড চিলড্রেন’স প্রাইজ’ পেলেন তাঞ্জানিয়ার আনা মোলেল৷ এক ধরনের বিকল্প নোবেল পুরস্কার এটি৷ শিশুকল্যাণমূলক কাজে বিশেষ অবদানের জন্য ২০০০ সাল থেকে প্রতি বছর সুইডেনে দেয়া হচ্ছে পুরস্কারটি৷

https://p.dw.com/p/15BE3
Anna Mollel Presentation of the World's Children's Prize for the Rights of the Child, Gripsholm Castle 2012-05-23 (c) Rickard Eriksson / IBL
Anna Mollelছবি: picture alliance/IBL Schweden

‘দ্য ওয়ার্লড চিলড্রেনস প্রাইজ'এর অর্থমূল্য এক লাখ ডলার৷ তাঞ্জানিয়ার প্রতিবন্ধী শিশুদের কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ আনা মোলেল'কে তাঁর কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ দেয়া হল এবছরের পুরস্কারটি৷ বিশ্বের আড়াই লাখ ছোট ছেলেমেয়ে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে বিজয়ীকে৷ সম্প্রতি সুইডেনের রানি সিলভিয়ার কাছ থেকে পুরস্কারটি গ্রহণ করলেন আনা মোলেল৷

বৈষম্য রোধের আকাঙ্ক্ষা

ছোটবেলা থেকেই বৈষম্যের শিকার শিশুদের জন্য কিছু করার স্বপ্ন দেখতেন আনা মোলেল৷ স্বদেশ তাঞ্জানিয়ায় অহরহ চোখে পড়ত এক ধরনের রোগে আক্রান্ত প্রতিবন্ধী বহু শিশুকে, যা ভাবিয়ে তুলতো আনাকে৷ বড় হয়ে নার্সিং পেশাকে গ্রহণ করেন তিনি৷ সহায়তা করেন প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি পুনর্বাসন কেন্দ্র গড়ে তোলার কাজে৷ ১৯৯০ সালে এই কেন্দ্রে কাজ শুরু করেন আনা৷ কয়েক বছর পর দায়িত্ব গ্রহণ করেন পরিচালনার৷ অবসর নেয়ার পরও এই কেন্দ্রের কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত মানব দরদী এই নারী আজও৷

ফ্লোরাইডজনিত রোগ

তাঞ্জানিয়ায় এক ধরনের রোগের প্রকোপ প্রায়ই লক্ষ্য করা যায়৷ অতিরিক্ত ফ্লোরাইড মিশ্রিত পানি পান করার ফলে এই সব অসুখ বিসুখ দেখা দেয়৷ যাকে ফ্লোরোসিস বলা হয়৷ এতে দাঁত ও হাড়ের মারাত্মক ক্ষতি হয়৷ অল্প পরিমাণে ফ্লোরাইড দাঁত ও হাড়ের জন্য ভাল হলেও মাত্রা ছাড়িয়ে গেলেই ফল হয় উল্টো৷ দাঁতের মসৃণতা নষ্ট হয়ে ছোপ ছোপ দাগ পড়ে৷ ভঙ্গুর হয়ে পড়ে৷ হাড়ের গঠনে পরিবর্তন ঘটে৷ বিকৃত হয়ে পড়ে হাড়ের কাঠামো৷ পরিণামে দেখা দেয় শারীরিক প্রতিবন্ধকতা৷ এছাড়া ফ্লোরাইডের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতিতে থাইরয়েড গ্রন্থির স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা কমে গিয়ে শারীরিক নানা সমস্যা দেখা দেয়৷

This child has lost his eyesight as result of war, On Wednesday September 14, 2011, Mogadishu, Somalia *** Bild von DW-Korrespondent Abdulkadir Fooday, September 2011
সোমালিয়ায় প্রতিবন্ধী শিশুছবি: DW

পুনর্বাসন কেন্দ্রটিতে সাধারণত এই সব রোগে আক্রান্ত প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েদের চিকিত্সা করা হয়ে থাকে৷ লোমনিয়াকি ওলোমডুনি এই রকমই এক ভুক্তভোগী কিশোর৷ তাঞ্জানিয়ার মাসাই উপজাতির ছেলে সে৷ ছোটবেলায় সমবয়সীরা যখন গরু-ছাগল চরাতে যেত, তাকে তখন বসে বসে দেখতে হতো৷ লোমনিয়াকি বলে, ‘‘আমি শারীরিক ত্রুটি নিয়ে জন্ম গ্রহণ করি৷ হাঁটতে পারতাম না৷ কেউ দেখে ফেলতে পারে, এই আশঙ্কায় আমার বাবা বাড়ি থেকে বের হতে দিত না আমাকে৷ সারা দিন রাত বাড়ির ভেতরে মেঝেতে শুয়ে কাটাতে হতো আমাকে৷ আমার কোনো খেলার সাথী ছিল না, সব সময় একা থাকতে হতো৷''

আনা মোলেল যখন লোমনিয়াকি'কে প্রথম দেখেন, তখন তার বয়স নয় বছর৷ আজ পনেরো বছরের এক কিশোর সে এবং পুনর্বাসন কেন্দ্রের সহায়তায় অনেকটাই স্বাবলম্বী৷

প্রতিবন্ধীরা অধিকার বঞ্চিত

আনা মোলেল বলেন, ‘‘প্রতিবন্ধী শিশুদের অধিকার তাঞ্জানিয়ায় অত্যন্ত ক্ষুণ্ণ করা হয়৷ মা বাবারা তাদের স্কুলে পাঠান না, চিকিত্সাও করান না৷ তাদের লুকিয়ে রাখা হয় এবং অন্যান্য বাচ্চাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগও রাখতে দেয়া হয় না৷''

সরকারি তথ্য মতে, তাঞ্জানিয়ায় ২০ লক্ষ শিশু মানসিক বা শারীরিক প্রতিবন্ধী৷ আনা মোলেল মনে করেন, সংখ্যাটা আরো অনেক বেশি হবে৷ অনেক প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েকে এমন ভাবে লুকিয়ে রাখা হয়, যে তাদের দেখাই যায় না৷ আনা মোলেল'এর ভাষায়, ‘‘১৯৯০ সাল থেকে আমরা এইসব শিশুর জন্য লড়াই করে আসছি৷ একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে এক্ষেত্রে তত্পরতা চালাতে চেষ্টা করি আমরা৷ গ্রামের মাতবর ও মা বাবাদের বোঝাতে চেষ্টা করি যে, অন্যদের মত স্কুলে যাওয়ার অধিকার আছে অসুস্থ বাচ্চাদেরও৷ আমরা ক্রাচ ও হুইলচেয়ার দেয়ার জন্য প্রতিবন্ধী শিশুদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে আসি৷ এ সব সাহায্য সামগ্রীর মাধ্যমে বাড়িতে ফিরে গিয়েও স্কুলে যেতে পারে তারা৷''

ছয় বছর আগে লোমনিয়াকি'কে দেখে তার মা-বাবার সঙ্গে কথা বলেন আনা মোলেল৷ ছেলেটির পা তখন এতই বাঁকা ছিল, যে তার পক্ষে হাঁটাচলা করা ছিল প্রায় অসম্ভব৷ আনা মোলেল চিকিত্সার জন্য তাকে নিয়ে পুনর্বাসন কেন্দ্রে আসেন৷ লোমনিয়াকি জানায়, ‘‘চিকিত্সা কেন্দ্রে আমার অপারেশন হয়৷ তারপর থেকে আমি সুখী এক মানুষ৷ আমি এখন হাঁটতে পারি, আমার পরিবারকে সাহায্যে করতে পারি৷ জীবজন্তুর দেখাশোনা করতে পারি৷ স্কুলে যেতে পারি এবং অন্যান্য ছেলেমেয়েদের সঙ্গে খেলাধুলাও করতে পারি৷''

প্রতিবেদন: বেটিনা ব়্যুল / রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য