1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও লড়ছেন সাবরিনা

২৮ মার্চ ২০১১

চট্টগ্রামের ব্লগার সাবরিনা সুলতানা৷ শৈশবে শারীরিক প্রতিবন্ধকতার শিকার হলেও তিনি দেখিয়েছেন যে, প্রতিবন্ধকতা মানেই সবকিছু থেমে যাওয়া নয়৷ বরং প্রতিবন্ধীদের অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে ব্লগকে হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেন৷

https://p.dw.com/p/10iwh
আমার ব্লগ-এ সাবরিনা সুলতানাছবি: sabrina.amarblog.com

প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি

আমার ব্লগ-এ সাবরিনা সুলতানার প্রথম পোস্টের শিরোনাম ছিল, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে একজন প্রতিবন্ধী মানুষের খোলা চিঠি'৷ ২০০৯ সালের নভেম্বরে লেখা সেই চিঠিতে সাবরিনা তুলে ধরেছিলেন তাঁর প্রতিবন্ধী জীবনের অনেক কথা৷ লিখেছিলেন, ‘‘আমাদের দেশে পনেরো কোটি মানুষের মধ্যে প্রায় দেড় কোটি শুধুমাত্র প্রতিবন্ধী৷ গড়ে আড়াই লক্ষ প্রতিবন্ধী প্রতিবৎসর বাড়ছে এবং তারা আমার মতোই চারদেয়ালের আবদ্ধ ঘরে বেড়ে উঠছে৷ তাদের নেই আর দশজন সুস্থ ছেলেমেয়ের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশ গড়ার স্বাভাবিক পরিবেশ৷''

সাবরিনার বেড়ে ওঠা

জীবনের প্রথম ব্লগ পোস্টে সাবরিনার আক্ষেপ ছিল, ‘‘বাইরের দেশগুলোতে দেখুন, প্রতিবন্ধীরা পরিবার থেকে অনেক সাপোর্ট পায়৷'' এ যেন সবাইকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া, বাংলাদেশে কতটা অসহায় প্রতিবন্ধীদের জীবন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, আমার জীবনের ২৫ বছর পর্যন্ত কেটে গেছে ঘরের মধ্যেই৷ কখনো বের হওয়ার তেমন সুযোগ পাইনি, কারণ বেরোতে গেলেই সিড়ি দিয়ে ওঠানামার সমস্যা, তারপর বাসে চড়া, অথচ যে বাসে উঠবো, সেই বাসে ব়্যাম্প নেই, হুইল চেয়ার তোলা যাবেনা৷ গাড়িতে ওঠা বা যেকোন জায়গায় যাওয়া খুবই সমস্যা৷ একারণেই আমরা ঘর থেকে বের হওয়া হতো না৷

ইন্টারনেট লেখনি

সাবরিনা সুলতানা একজন ব্লগার, বলা যেতে পারে প্রতিবন্ধীদের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ের এক অনলাইন যোদ্ধা তিনি৷ তাঁর ব্যক্তিগত ব্লগের ঠিকানা সাবরিনাডট আমারব্লগ ডটকম৷ তাঁর কাছে জানতে চাই, প্রতিবন্ধীদের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরতে ইন্টারনেট লেখনি কতটা সহায়তা করছে? তিনি বলেন, ব্লগাররা বিভিন্নভাবে আমাদেরকে সহায়তা করেছেন৷ আমি তাদেরকে লিখে জানিয়েছিলাম যে, আমাদের দু'জন প্রতিবন্ধী শিশু পড়তে পারছেন না৷ আমরা তাদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে চাই৷ ব্লগ থেকে অনেক সাড়া পেয়েছি৷ অনেক প্রতিবন্ধী মানুষকে আমরা হুইল চেয়ার দিয়ে সহায়তা করেছি৷ কয়েকজন প্রতিবন্ধী শিশুর পড়াশোনার জন্য খরচ দিয়েছি৷ এখনো কয়েকজনকে দিচ্ছি৷

কঠিন জীবন

জীবন বড় কঠিন সাবরিনার জন্য৷ ডয়চে ভেলেকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময়ও মুঠোফোনটা হাতে রাখতে পারেননি তিনি৷ তাঁর মা সহায়তা করেছেন এই কাজে৷ এতটা প্রতিবন্ধকতার মাঝেও নিজের সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছেন সাবরিনা৷ চাইছেন, বাংলাদেশের প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি সুবিধাজনক, নিরাপদ এবং চমৎকার পরিবেশ গড়ে তুলতে৷ এজন্য তিনি গড়ে তুলেছেন বি-স্ক্যান নামক একটি সংগঠন৷ তিনি বলেন, আমাদের দেশে এখনো মাত্র ৪ শতাংশ প্রতিবন্ধী শিশু স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পায়৷ আমরা চাই আমাদের দেশের প্রতিবন্ধী শিশুদের মধ্যে প্রত্যেকটি শিশু যেন স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পায়৷

Symbolbild Rollstuhl Flash-Galerie
সাবরিনা চান বাংলাদেশের প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি সুবিধাজনক, নিরাপদ পরিবেশছবি: Picture-Alliance/KEYSTONE

সেরা ব্লগ প্রতিযোগিতা

সাবরিনার ব্যক্তিগত ব্লগ এখন ডয়চে ভেলের সেরা ব্লগ অনুসন্ধান প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে লড়াই করছে৷ তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ইংরেজি, জার্মান, চীনাসহ দশটি ভাষার সেরা ব্লগাররা৷ এই প্রতিযোগিতায় তাঁকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইলে এই মুহূর্তে প্রয়োজন বেশি বেশি ভোট৷

ভোট দেওয়ার কাজটা বেশ সহজ৷ এজন্য ভিজিট করুন thebobs.com ওয়েবসাইট৷ এরপর সেখানে লগ ইন করুন ফেসবুক বা টুইটার আইডি দিয়ে৷ ‘ইন দ্য কেটিগরি' ঘরে বাছাই করুন ‘বেস্ট ব্লগ' আর ‘আই ভোট ফর' ঘরে বেছে নিন সাবরিনা ৷ ব্যাস, ঠিকঠাক বাছাইয়ের পর চেপে দিন ভোট বোতামটি৷

সাবরিনা বাংলাদেশকে একটি প্রতিবন্ধীবান্ধব দেশ হিসেবে দেখতে চান৷ যেখানে, প্রতিবন্ধীরা পাবেন সমান অধিকার, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলবেন সবার সঙ্গে৷

প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন