থাইল্যান্ডে ছাতা-ধরা বই বাঁচাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা
৪ জানুয়ারি ২০১২থাইল্যান্ডের বর্তমান রাজধানী ব্যাংককের উত্তরে আয়ুত্থায়া, কোন সুদূর অতীতের আরেক রাজধানী৷ এই আয়ুত্থায়া দিনের পর দিন ঘোলাজলে ডুবে ছিল সাম্প্রতিক বন্যায়৷ কাজেই সেখানকার মাহা চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেসমেন্ট, অর্থাৎ মাটির তলার ঘরগুলির যে কি অবস্থা, তা বলাই বাহুল্য৷ দরজা খুললেই একটা ভ্যাপসা গন্ধ৷
কোথায় ইউরোপের কোন কোণে জার্মানি৷ সেখানে লাইপজিশ শহর৷ সেই লাইপজিশের বই সংরক্ষণ কেন্দ্র থেকে আসা বই সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞ মানফ্রেড আন্ডের্স প্রথমেই বেসমেন্টের জানলাগুলো খুলে দিলেন৷ ‘‘এখানে হাওয়া ঢোকা দরকার৷ নয়তো ছাতা ধরার পক্ষে আদর্শ পরিবেশ হয়ে দাঁড়াবে,'' বললেন আন্ডের্স৷
গোটা বেসমেন্টটাই ছিল আগে লাইব্রেরি৷ সব দেয়াল জুড়ে প্রায় দেড় মিটার উচ্চতা অবধি বন্যার পানি ওঠার চিহ্ন৷ মঠের বৌদ্ধ ভিক্ষুরা জল বাড়তে দেখে প্রায় দু'লক্ষ বই ওপরতলায় নিয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু সব বই বাঁচাতে পারেননি৷ এখনও বেসমেন্টের ঐ প্রাক্তন লাইব্রেরিতে শত শত ভেজা বই ছাতা ধরে পচছে৷ তার মধ্যে যে কতো দুষ্প্রাপ্য, পুরনো বই রয়েছে, তা কেউ জানে না৷
মানফ্রেড আন্ডের্স, অলিভার মেসারস্মিট এবং ইয়ানা মোচার্স্কি৷ থাইল্যান্ডে জার্মানির গ্যোটে ইনস্টিটিউট লাইপজিশ থেকে আনায় বই সংরক্ষণের এই তিন বিশেষজ্ঞকে৷ বলতে কি, বই বাঁচানোয় এরা জার্মানির সেরা দল বলা চলতে পারে৷ লাইপজিশের বই সংরক্ষণ কেন্দ্রটি চালু হয় নব্বই'এর দশকে, লাইপজিশ পাবলিক লাইব্রেরির অঙ্গ হিসেবে৷ পরে ২০০২ সালে উত্তর জার্মানিতে এলবে নদীর বন্যার পর দলটি বন্যার পানিতে ভেজা হাজার হাজার বহুমূল্য পুঁথি ও কেতাব পুনরুদ্ধারের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে৷ কি ২০০৪ সালে ভাইমার'এর আনা আমালিয়া লাইব্রেরিতে অগ্নিকাণ্ড, কি কোলোনে ২০০৯ সালে নগর মহাফেজখানার অংশ ধসে যাওয়া, সর্বত্রই বই, পুঁথি, দলিল বাঁচানোয় ডাক পড়েছে লাইপজিশের এই বিশেষজ্ঞ দলের৷
আয়ুত্থায় আন্ডের্স প্রথমেই প্লাস্টিকের ব্যাগে মুড়ে রাখা বইগুলোকে মুক্তি দিলেন৷ বললেন, এটা হল বই'এর পক্ষে বিষ৷ বই'এর নাকি প্রথমেই দরকার মুক্ত বাতাসের৷ মঠের ভিক্ষুরা অসহায়ভাবে মাথা নাড়লেন৷ আন্ডের্সও জানেন, থাইল্যান্ডের মানুষরা এখনও বন্যার বিভীষিকায় যেন জবুথবু হয়ে বসে আছেন৷
লাইপজিশের বিশেষজ্ঞরা এর আগে গিয়েছিলেন এক থাই লেখকের নিজস্ব লাইব্রেরি দেখতে৷ সেখানে হাজার পঞ্চাশেক বই নাকি বন্যার পানিতে ডুবে ছিল৷ তার মধ্যে ১০টি মূল্যবান বই লাইপজিশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন আন্ডের্সের দল৷ লাইপজিশে বইগুলোকে শূন্যের নীচে তাপমাত্রায় জমিয়ে আর্দ্রতা-মুক্ত করা হবে, তারপর গামা রশ্মি দিয়ে ছত্রাক ইত্যাদি মারা হবে৷ প্রক্রিয়াটির খরচ হল কিলোপ্রতি ৩৫ ইউরো৷
আয়ুত্থাতেও এলাকার নানা জায়গা থেকে লাইব্রেরিয়ানদের ডাক পড়েছে লাইপজিশের বিশেষজ্ঞদের কাজ দেখতে৷ মোচার্স্কি হাইজিনিক মাস্ক পরে একটা প্রায় শুকিয়ে আসা বই'এর ওপর পানি ঢালছেন আর বলছেন, ‘‘বইগুলো যদি শুকনো করার পর ফ্ল্যাট না হয়, তাহলে সেগুলো আবার ভেজান৷ ভিজিয়ে আবার চাপ দিয়ে ফ্ল্যাট করুন৷ আর ছাতা সরানোর জন্য কনসেন্ট্রেটেড অ্যালকহল ব্যবহার করবেন৷'' মোচার্স্কি'র হাতে দস্তানা পরা৷
প্রতিবেদন: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারূক