1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তাজিকিস্তানে পুরুষদের বহুগামিতা

১১ সেপ্টেম্বর ২০১০

মধ্য এশিয়ার দেশ তাজিকিস্তান৷ সে দেশটিতে পুরুষের চেয়ে মহিলার সংখ্যা বেশি৷ এ কারণেই দেখা যায় একজন পুরুষের একাধিক স্ত্রী রয়েছে৷ মহিলারা পুরুষের এই বহুগামীতাকে মেনে নিয়েছে কারণ এর প্রতিকারে কিছুই নেই ৷ কিন্তু আসলেই কী তাই?

https://p.dw.com/p/P9j2
তাজিকিস্তান, পুরুষ, বহুগামিতা, নারী, যৌন জীবন,
ছবি: DW

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দারিদ্রপীড়িত দেশগুলোর মধ্যে তাজিকিস্তান অন্যতম৷ তাজিকিস্তানের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান, উজবেকিস্তান, কিরগিজিস্তান এবং চীন৷ ১৯৯১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর দেশের পুর্নগঠনে অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হয়েছে দেশটিকে৷ দীর্ঘদিন ধরে দেশটি সংস্কারপদ্ধতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে৷ একই সঙ্গে বিভিন্ন ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে নারীরা৷ তারা প্রতিনিয়ত শিকার হচ্ছে বৈষম্যের৷ সোভিয়েত ইউনিয়নে তাদের অবস্থা খুব ভাল ছিল না৷ তবে এখন অবস্থা আগের চেয়ে অনেক বেশি শোচনীয়৷ এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পড়াশোনার সুযোগের অভাব৷ এর পাশাপাশি রয়েছে গৃহ নির্যাতন এবং পুরুষের বহুগামিতা৷

উমেদার কাহিনী

উমেদা খুশরাকতোভার বয়স ২৫৷ ছাত্রী এবং সে সবসময়ই বিষন্ন হয়ে থাকে৷ কারণ হল সে এমন একজন পুরুষকে পছন্দ করে যে বিবাহিত এবং যার পরিবার রয়েছে৷ এই সমস্যা পৃথিবীতে নতুন নয় কিন্তু উমেদা বিষয়টি ভিন্ন৷ কারণ ভদ্রলোকের সঙ্গে পরিচয় এবং ভাললাগার পরই তিনি উমেদাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন৷ তখনই প্রথমবারের মত উমেদা জানতে পারে যে তিনি বিবাহিত৷ সে খুব স্বাভাবিকবাবেই উমেদাকে বলে এটা কোন সমস্যাই নয় কারণ উমেদা খুব সহজেই তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী হতে পারবে৷ কারণ তাদের সম্পর্কের কথা সবাই মোটামুটি জানে৷ কোন কিছুই গোপন নেই৷ উমেদা বলল, ‘‘আমার বন্ধুর সবচেয়ে বড় সন্তানের বয়স ১১৷ সেই ছেলেটিও জানে আমি কে৷ ছেলেটির বাবাকে বিয়ে করবো ? আমি এখনো ভাবছি৷ আমি প্রায়ই তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলি৷ আমি বেশ কয়েকবারই তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছি কারণ তিনি ভীষণ অসুস্থ ছিলেন৷ কিন্তু তিনি জানেন না৷ পরিবারের অন্য সবাই জানে, বাবা, ভাই – প্রতিটি মানুষ জানে শুধু তিনিই জানেন না৷''

মূল সমস্যা কোথায়?

তাজিকিস্তানের অন্য সব মেয়ে উমেদার মত বিয়ে নিয়ে এত চিন্তা ভাবনা করেনা৷ দ্বিতীয় স্ত্রী হতে হবে তা খুবই স্বাভাবিক অন্য মেয়েদের জন্য৷ এর মূল কারণ হল তাজিকিস্তানের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট বয়স পার হলেই মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়৷ এছাড়া বিয়ের জন্য সহজে ছেলেও পাওয়া যায় না৷ ১৯৯২ সাল থেকে ১৯৯৭ সালের গৃহযুদ্ধের পর দেশে পুরুষের সংখ্যা কমে গেছে৷ এরপর অনেক পুরুষই কাজের জন্য রাশিয়ায় চলে গেছে৷ তারা ফিরে আসছে না সহজে৷ এর ফলে দেশে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেড়ে গেছে৷ ফলস্বরূপ বেড়েছে পুরুষদের বহুগামিতা৷ যদিও দেশের আইন অনুযায়ী বহুগামিতা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে কিন্তু তারপরেও তা বন্ধ করা যাচ্ছে না৷ নারীবাদী গুলনারা পেট্রভা জানালেন সমস্যগুলো কোথায়৷ গুলনারা আক্ষেপের জঙ্গে জানান, ‘‘ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় দুই স্ত্রী দুটি ভিন্ন বাড়িতে থাকে৷ অনেক সময় তারা এক জন আরেক জনের অস্তিত্ব সম্পর্কেও জানতে পারে না৷ যেমন ধরা যাক একজন পুরুষ গ্রাম থেকে রাজধানী দুশানবে এল৷ গ্রামে তার স্ত্রী এবং সন্তান রয়েছে৷ তারপরেও সে শহরে এসে আরেকটি বিয়ে করল৷ অবশ্যই স্ত্রীরা খুবই ঈর্ষাপরায়ণ হয় কিন্তু তারা কখনোই আরেকজনের কথা জানতে পারে না৷ অনেকে আবার ইচ্ছে করেই স্বামীদের কিছু বলে না কারণ তাহলে স্বামী হয়তো তৃতীয়বারের মত বিয়ে করে বসবে৷ তখন প্রথম দু'জনের সঙ্গে কোন যোগাযোগই রাখবে না৷''

তাজিকিস্তানে বেশিরভাগ বিয়েই রেজিস্ট্রি করা হয় না৷ ঐতিহ্য অনুযায়ী ‘নিকাহ' নাম দিয়ে সব কিছু করা হয়৷ এর মাধ্যমেই মেয়েদের নিয়ে খেলা করছে পুরুষরা৷ কারণ বিয়ে রেজিস্ট্রি না হওয়ায় কোন স্ত্রী তাঁর আইনগত অধিকারগুলোও স্বামীর কাছ থেকে আদায় করতে পারে না৷ আইনগতভাবেও এসব মহিলাকে সাহায্য করা সম্ভব হচ্ছে না৷

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা : সঞ্জীব বর্মন