মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ও পশ্চিমা বিশ্ব
৩১ জুলাই ২০১৬এরর্ফুট বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি পাকিস্তানের চারটি মাদ্রাসার ১২ জন শিক্ষার্থীকে জার্মানিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল৷ ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সপ্তাহব্যাপী এক কর্মশালায় পাকিস্তানি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নানান বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন৷
পশ্চিমা সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়ার মাধ্যমে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের মনে ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বীজ বপনের আশা করেছেন কর্মশালার আয়োজকরা৷
প্রায় ২০ হাজার মাদ্রাসা
পাকিস্তানে নিবন্ধিত মাদ্রাসার সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার৷ তবে নিবন্ধিত নয় এমন অনেক মাদ্রাসাও আছে৷ এ সব মাদ্রাসার বেশিরভাগই দেওবন্দ ধারায় বিশ্বাসীদের দ্বারা তৈরি৷ অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, ইসলামের এই অংশটি অসহিষ্ণুতা ও সহিংসতা সমর্থন করে৷
দেশটির সাবেক সামরিক শাসক পারভেজ মুশাররফ তাঁর শাসনামলে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় সংস্কার আনার চেষ্টা করেছিলেন৷ কিন্তু বিভিন্ন ইসলামি দল ও পণ্ডিতদের বিরোধিতার কারণে তাঁর উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হয়েছে৷ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক সংগঠনও বিভিন্ন সময় মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে মূলধারার সঙ্গে মেলানোর উদ্যোগ নিয়েছিল৷ কিন্তু সরকারের সমর্থনের অভাব ও মাদ্রাসা প্রশাসনের বাধার কারণে সেটি সম্ভব হয়নি৷
কাজটি কঠিন ছিল
এই অবস্থায় জার্মানিতে এমন একটি কর্মশালা আয়োজন করতে গিয়ে বেশ কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে আয়োজকদের৷ আয়োজকদের প্রধান অধ্যাপক জামাল মালিক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘গত দু'বছর ধরে আমরা এই কর্মশালা আয়োজনের চেষ্টা করেছি৷ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জার্মানিতে আসার ভিসার ব্যবস্থা করতে যেমন বেগ পেতে হয়েছে, তেমনি নারী শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের কাছ থেকে তাঁদের সন্তানদের জার্মানিতে আসতে দেয়ার অনুমতির ব্যবস্থা করাও কষ্টসাধ্য ছিল৷''
অংশগ্রহণকারীদের প্রতিক্রিয়া
এরর্ফুট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পাট্রিৎসিয়া জন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শুরুতে কর্মশালায় অংশ নেয়ার ব্যাপারে সংশয়ে ছিলাম৷ পরে দেখলাম, সব সাধারণ মানুষের সঙ্গেই কথা হচ্ছে৷ এটি ভেবে তারপর ভালোই লেগেছে৷''
লাহোরের একটি মাদ্রাসার নারী শিক্ষার্থী উমনা ফাতিমা বলেন, ‘‘এখানে আসার আগে মনে হয়েছিল জার্মানরা আমার হেডস্কার্ফ পছন্দ করবে না৷ কিন্তু আসার পর আমার সেই ধারণা পাল্টে যায়৷ জার্মান নারীদের আমার খুব বন্ধুবাৎসল ও সহযোগী মনোভাবাপন্ন মনে হয়েছে৷ সবসময় মুখে হাসি নিয়ে তাঁরা আমাদের স্বাগত জানিয়েছে৷''
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এসেছিলেন শিক্ষকও
পাকিস্তানের জামিয়া সালাফিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক আরসালান জাফর কর্মশালার সময় শিক্ষার্থীরা যে শিক্ষকদের কাছে স্বাচ্ছন্দ্যে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছেন, তা দেখে অবাক হয়েছেন৷ এখন থেকে তিনি পাঠদানের এই কৌশলটি অনুসরণ করবেন বলেও জানিয়েছেন৷
তিনি মনে করেন, মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার পাঠ্যসূচিতে পরিবর্তন আনতে হবে৷ ‘‘আমরা শুধু ইসলামি বিষয় শেখাই৷ এ ব্যাপারে সংস্কার এনে শিক্ষার্থীদের অন্যান্য বিষয়ও শেখাতে হবে'', বলেন জাফর৷
বন্ধু, আপনিও কি জার্মানিতে পড়তে চান? লিখুন আমাদের, জানান আপনার পছন্দের বিষয়গুলোর কথা৷