1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানিতেও ‘গরিবি হটাও'

মার্কুস ল্যুটিকে/এসি২৮ জুন ২০১৪

গরিবি হটানোর মানে গরিব হটানো, যা উন্নয়নের নামে, বিশ্বকাপের নামে কিংবা শৃঙ্খলা ও সুন্দর পরিবেশের নামে করা যায় – যেমন ধনী দেশ জার্মানিতে৷ এখানে রাস্তায় বাস করা নিরাশ্রয় মানুষদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে৷

https://p.dw.com/p/1CRVB
Obdachlose im Winter
ছবি: picture-alliance/dpa

হামবুর্গ, বার্লিন, ফ্রাংকফুর্ট অথবা মিউনিখ, জার্মানির সব বড় শহরেই এদের পাওয়া যাবে: সেই সব মানুষ, যাঁরা চাকরি হারিয়ে, স্ত্রী-সন্তানের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে, শেষমেষ মাথা গোঁজার স্থানটুকুও হারিয়ে রাস্তার ভবঘুরেতে পরিণত হয়েছেন৷ এঁরা যে ঠিক বুভুক্ষু, এমন নয়৷ অসুখ করে রাস্তায় পড়ে থাকলে এঁদের তুলে নিয়ে গিয়ে হাসপাতালে রাখা হয়, প্রয়োজনে চিকিৎসা এমনকি অস্ত্রোপচার করা হয়৷ কিন্তু সেরে উঠলে আবার রাস্তায়৷

জার্মান ভাষায় এঁদের বলে ‘পেনার', অর্থাৎ সহায়-সম্বলহীন নিষ্কর্মা মানুষ৷ কাজকর্ম নেই, সরকারি ভাতা-ভরতুকি নিয়ে বেঁচে থাকা৷ অনেকেরই ধূমপান ও মদ্যপানের প্রতি আসক্তি৷ একটা মানুষ সমাজের সিঁড়ি দিয়ে গড়িয়ে নীচে পড়তে পড়তে যতদূর নামতে পারে আর কি! কিন্তু বিগত কয়েক দশকে এই জীবনযুদ্ধে পরাজিতদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাড়ি থেকে পালিয়ে আসা কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরণী৷ চাকরি, পরিবার, আশ্রয় হারিয়ে রাস্তায় নেমে এসেছেন বহু মানুষ৷ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, শৃঙ্খলাবদ্ধ জার্মানির পথেঘাটে এঁরা যেন বেমানান৷ তাই এঁদের জনসমক্ষ থেকে, লোকচক্ষু থেকে সরানোর প্রয়াস৷

জার্মানি শীতের দেশ, এখানে রাস্তায় শোয়াটা বছরের অধিকাংশ সময় কষ্টকর, শীতে তো প্রায় অসম্ভব৷ তাই পোড়োবাড়ি অথবা কারখানা, পার্কিং হাউসের আনাচ-কানাচ, বাজারের বড় দোকানের সামনের অ্যালকোভ – সর্বত্র কাঁথা-কম্বল পেতে রাত কাটান এই সব মানুষ৷ কখনো কোনো পেট্রোল স্টেশনের বাথরুম পরিষ্কার করে কিছু খেতে পান; কখনো পুরনো বোতল কুড়িয়ে কিছু টাকা রোজগার৷ দিন কাটে৷

জার্মানি ধনী দেশ৷ ২০১২ সালে এখানকার বেসরকারি পরিবারগুলির মোট সম্পত্তি ছিল ৬ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ইউরো, অর্থাৎ পরিবার প্রতি ৮৩ হাজার ইউরো৷ এ তো হলো সামগ্রিক পরিসংখ্যান, কিন্তু জার্মান অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিবরণে এ-ও বলা হয়েছে যে, ইউরো মুদ্রার আর কোনো দেশে ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান এত দৃষ্টিকটু নয়৷ জার্মানির জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশের কোনো সম্পদই নেই৷ সাত শতাংশের সম্পত্তির চেয়ে ঋণ বেশি৷

জার্মানিতে বাড়ি ভাড়া নিতে গেলে যে ধরনের স্থায়ী চাকরি, আর্থিক সঙ্গতি ইত্যাদি দেখাতে হয়, তা না থাকার ফলে ‘নিরাশ্রয়' – বস্তুত স্থায়ী ঠিকানাহীন মানুষদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে৷ পরিসংখ্যান বলে, ২০১০ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে এ ধরনের নিরাশ্রয় মানুষদের সংখ্যা বেড়েছে ১৫ শতাংশ৷ তা সত্ত্বেও, এই ‘নিরাশ্রয়'-দের সংখ্যা সাকুল্যে দু' লাখ চুরাশি হাজার – আট কোটি মানুষের দেশে৷ ২০১৬ সাল অবধি তা নাকি বেড়ে দাঁড়াবে তিন লাখ আশি হাজারে৷

মধ্য ইউরোপের আবহাওয়া, সমাজ ও সংস্কৃতি যাঁরা জানেন, তাঁরা বুঝবেন, সব পেয়েছির দেশেও ‘সর্বহারা' মানুষ থাকে এবং সমাজ ও সংস্কৃতির কল্যাণের জন্যই তাঁদের দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন৷ জার্মানিতে নজর দেওয়া হচ্ছে ঠিকই: দেখা হচ্ছে, কোন পন্থায় এই নিরাশ্রয় মানুষগুলোকে যেখানে তাঁরা শীতের রাতে মাথা গোঁজেন, সেখান থেকে সরিয়ে রাখা যায়৷ কোথাও হয়ত কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হচ্ছে; কোথাও ব্রিজের নীচে তোষক পেতে শোয়া নোটিশ লাগিয়ে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে৷ রেলওয়ে স্টেশন কি সাবওয়ে থেকে তাঁদের তাড়ানোর জন্য লোক আছে৷ বড় বড় দোকানের ঢোকার মুখটায় কল থেকে জল ছিটিয়ে নিরাশ্রয়দের বিতাড়ন করা হচ্ছে৷ লন্ডনে দোকানের গেটের সামনে স্পাইক, অর্থাৎ কাঁটা বসিয়ে নিরাশ্রয়দের দূরে রাখা হচ্ছে৷

কি দোকানপাট, কি রেলওয়ে স্টেশন, সর্বত্রই এখন অর্থকরী ‘বাণিজ্যিকীকরণের' যে প্রক্রিয়া চলেছে, সেই প্রক্রিয়ায় গরিব মানুষদের কোনো স্থান নেই – শুদ্ধ বাংলায় যাকে বলে কিনা ‘গরিবি হটাও'৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য