‘ভুয়া জঙ্গি’ থেকে আরো সাবধান!
২৬ অক্টোবর ২০১৬একসময় ধনাঢ্য ব্যক্তিদের বাড়ির গেটে লেখা থাকতো, ‘কুকুর হইতে সাবধান’৷ পাড়ায় পাড়ায় দেখা যেতো এমন গেট৷ হালে কুকুর, বিড়াল পোষার প্রবণতা কমেছে৷ ফলে ‘কুকুর হইতে সাবধান’ হওয়ার আর খুব একটা প্রয়োজন পড়েনা৷ এখন বরং ‘ক্ষতিকর মানুষ’ হইতে সাবধান হওয়াই বেশি জরুরি৷
সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে ক্ষতিকর, সবচেয়ে ভয়ংকর হয়ে উঠেছিল জঙ্গিরা৷ বেশ কিছু সফল অভিযানের পর দৃশ্যত দেশে জঙ্গি তৎপরতা আপাতত বন্ধ৷ আবার যাতে শুরু না হয়, সে জন্য বিকল্প পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে৷ জঙ্গি তৎপরতায় জড়িয়ে পড়াদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার প্রয়াস সেরকমই এক পদক্ষেপ৷ কোনো জঙ্গি আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চাইলে তাকে ৫ লাখ টাকা দেয়া হচ্ছে৷ ইতিমধ্যে কয়েকজন জঙ্গি আত্মসমর্পণ করে ৫ লাখ টাকার চেক গ্রহণ করেছেন৷
আত্মসমর্পণকারী জঙ্গিরা জঙ্গিবাদ-বিরোধী সুধী সমাবেশে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার বিষয়ে অনুশোচনা নিয়ে বক্তব্যও দিয়েছেন৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘‘সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে জঙ্গিরা দল বেঁধে আত্মসমর্পণের জন্য যোগাযোগ করছে৷''
সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গি তৎপরতা সত্যিই কমেছে৷ সেই সুবাদে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে জনমনে৷ কিন্তু অভিযানে কিছু জঙ্গি নিহত হলে বা কয়েকজন আত্মসমর্পণ করলেই কি জঙ্গিবাদ নির্মূল হয়ে যায়? জঙ্গিবাদ তো যতটা না সাংগঠনিক, তার চেয়ে অনেক বেশি মানসিক৷ মানসিকতা থেকে ওই বিষ দূর না করলে সমাজকে বিষমুক্ত করা কি সম্ভব?
জঙ্গি পরিবারের সদস্য বা আত্মসমর্পণ করা জঙ্গিদের পুনর্বাসনের যুগোপযোগী ব্যবস্থা নেই৷
সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে চোখে পড়ার মতো জঙ্গিবাদ বিরোধী প্রচারণা নেই৷ কয়েকজন জঙ্গি হত্যা করে এবং ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে কিছু জঙ্গিকে আত্মসমর্পণ করালেই জঙ্গিবাদের অভিশাপ থেকে বাংলাদেশ মুক্ত হতে পারবে কিনা এ প্রশ্নটি তাই থেকেই যাচ্ছে৷ পাশাপাশি অন্য যে প্রশ্নটা উঠে আসছে, তা হলো, টাকার লোভে অনেকে আবার জঙ্গি সাজতে শুরু করবে না তো?
প্রতারণার অনেক বড় বড় দৃষ্টান্তই তো আমরা দেখেছি৷ দেখেছি গাছ থেকে পড়ে গিয়ে আহত হওয়া একজনকে রানা প্লাজার আহত উদ্ধারকারী সেজে কোটি টাকা কামিয়ে নিতে৷
রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দের ইউনুস আলী সর্দার নামের এক ব্যক্তির রাতারাতি কোটিপতি হয়ে যাওয়ার খবর সংবাদ মাধ্যমেও এসেছে৷ দেরিতে হলেও সবাই জানতে পেরেছেন রানা প্লাজা ধসের ঘটনার আহত উদ্ধারকারী পরিচয় দিয়ে ইউনুস আলী সর্দার ওরফে ইউসুফ ১৬ কোটি মানুষের সহানূভুতি আদায়ের পর কীভাবে প্রধানমন্ত্রীর অনুদানও আদায় করেছেন৷ প্রতারণা করে জমানো টাকার হিসাব করতে হিসাবরক্ষকও রেখেছেন তিনি৷
আমরা ‘ভুয়া পুলিশ’, ‘ভুয়া মেজর’সহ অনেক ধরণের প্রতারকই দেখেছি৷
দেশে ‘ভুয়া সাংবাদিক'ও কম নেই৷ এক পরিবারের ‘তিন ভাই ভুয়া সাংবাদিক’ এমন খবর পড়েও আমরা আর আজকাল বিস্মিত হইনা৷
কয়েকদিন ধরে দেশে এমন অনেক ভুয়া গরিবও দেখা যাচ্ছে, যারা অসৎ কিছু লোকের সহায়তায় হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দ ১০ টাকার চাল ঘরে তুলছে৷ সেই ভুয়া গরিবদের একজন আবার এমনই সম্পদশালী যে তার ঘরের সামনের গেটটি তৈরি করতেই খরচ হয়েছে দুই লাখ টাকা৷
বলতে গেলে সব রকমের ভুয়াই আমাদের দেখা হয়ে গেছে৷ কিন্তু ভুয়া জঙ্গিও দেখতে হোক তা আমরা একেবারেই চাইনা৷ অথচ সেই আশঙ্কা উড়িয়েও দেয়া যায় না৷ ১০ টাকার চালের লোভে বড় লোক হতদরিদ্র হয়ে যেতে পারলে, ৫ লাখ টাকার লোভে মানুষ জঙ্গিও সাজতেই পারে৷
সুতরাং জঙ্গি হইতে সাবধান, ভুয়া জঙ্গি হইতে আরো সাবধান!
প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? জানান নীচে মন্তব্যের ঘরে৷