1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চট্টগ্রামে বাড়ছে জলাবদ্ধতা

সুলাইমান নিলয়
২৫ জুলাই ২০১৭

রাস্তায়-ঘরে জল-পানিতে নাকাল চট্টগ্রাম৷ এই সমস্যার সমাধানে ৯০'র দশকের মাঝামাঝি সময়ে করা ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যানে ফিরতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন৷

https://p.dw.com/p/2h7N0
Bangladesch water logging at Dhaka, Chittagong
ছবি: bdnews24.com

ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এই সমস্যাকে দেখিয়ে চট্টগ্রামের বিভিন্ন সেবাদানকারী সংস্থা পৃথক পৃথকভাবে নানা প্রকল্প নিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এটা উলটো ফল বয়ে আনতে পারে৷ এটা না করে দরকার সমন্বিত একটি উদ্যোগ৷

ভারী বর্ষণ আর জোয়ারে বাংলাদেশের বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বহু এলাকাই এখন কোমর থেকে বুক পরিমাণ পানিতে ডুবে আছে৷ এটাকে স্মরণকালের ভয়াবহ জলাবদ্ধতা বলে আখ্যায়িত করছেন অনেকে৷

সমুদ্র উপকূলে অবস্থিত এই নগরীর প্রাকৃতিকভাবে সাগর-নদী-খালের সাথে যুক্ত৷ অল্প জোয়ারে ভেসে যায় অনেক এলাকা৷ এবারে সেই জোয়ারের উচ্চতাও বেশি৷ তার সাথে যুক্ত হয়েছে বৃষ্টি৷ নগরীর আবর্জনায় ভরা ড্রেন, দখল হয়ে যাওয়া খাল পরিস্থিতিকে করেছে শোচনীয়৷ ডয়চে ভেলের সাথে আলাপে চট্টগ্রামের এই প্রকৌশলীর মুখে উঠে এসেছে এ সব কারণ৷

‘চমৎকার একটা মাস্টার প্ল্যান, কিন্তু কেউ এটাকে ধারণ করে না’

তিনি বলেন, ‘‘বৃষ্টিপাতের পানি এবং দৈনন্দিন ব্যবহারের পানি নামার জন্য যে নালা, সেটা সংকীর্ণ হয়ে গেছে৷ হয়েছে অপদখলও৷ বদ অভ্যাসের কারণে আমরা ড্রেনকে ডাস্টবিন হিসেবে ব্যবহার করছি৷''

শুধু তাই নয়, ড্রেন ভরে যাওয়ার জন্য পাহাড় থেকে ক্ষয়ে আসা বালুকেও দায়ী করেছেন তিনি৷ তাঁর কথায়, ‘‘অন্যদিকে চট্টগ্রাম শহরের কিছু কিছু এলাকা সমুদ্র-পৃষ্ঠ থেকে আড়াই থেকে তিন মিটার উঁচু৷ কিন্তু এখানে সাড়ে ৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়ে জোয়ার আসার ইতিহাস রয়েছে৷''

দেলোয়ার জানান, গতকাল এখানে জোয়ারের পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ৮৮ মিটার৷ সে কারণে শহরে জোয়ারের পানি প্রবেশ করছে৷ এ সময় ড্রেনের পানিও নদী বা সাগরে নামতে পারে না৷ ড্রেনগুলো ভরাট হয়ে সক্ষমতা হারানোর কারণে ভাটা পড়লেও সেই সময়টা ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারে না৷ তখন দেখা যায় কর্ণফুলী খালি, কিন্তু পানি নামতে পারছে না৷

চট্টগ্রামের এই সমস্যা সমাধানে ১৯৯৫ সালে করা মাস্টার প্ল্যানে ফিরতে বললেন এই প্রকৌশলী৷ বলেন, ‘‘এটা চমৎকার একটা মাস্টার প্ল্যান৷ এটা সংসদেও অনুমোদিত হয়েছে৷ কিন্তু এখন কেউ এটাকে ধারণ করে না৷'' এখানে পাহাড় থেকে আনা বালি ব্যবস্থাপনার কথাও বলা হয়েছে৷

দেলোয়ারের নিজের ভাষায়, ‘‘ড্রেন-খাল অপদখলকে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ কোথাও পর্যাপ্ত খাল না থাকলে খনন করার কথা বলা হয়েছে৷ একইভাবে বৃষ্টি ও জোয়ার ব্যবস্থপনার কথা বলা হয়েছে৷''

‘‘বৃষ্টি এবং জোয়ার একসাথে হলে জোয়ারকে নগরীর বাইরেই আটকে দেয়া এবং বৃষ্টির পানির সরিয়ে নিতে জলাধার নির্মাণের কথা বলা হয়েছে এখানে৷ খুব প্রতিকূল অবস্থার জন্য পাম্প রাখার প্রস্তাবও রয়েছে এতে৷''

‘‘পানির লাইন, গ্যাস লাইন যে সব প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে, সেটা অপসারণ করতে বলা হয়েছে৷ আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এটা বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম নগরীর সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে৷''

বর্তমানে প্রতি বছর ৫০০-৭০০ কোটি টাকা করে বরাদ্দ দিলে ১২ বছরে এই মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন করা যাবে বলেও নিজের হিসাব তুলে ধরেন তিনি৷ এছাড়া এই সমস্যার সমাধান না হওয়ার পেছনে ‘রাজনৈতিক সদিচ্ছাকে' কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন দেলোয়ার৷ চট্টগ্রামের সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় না থাকায়ও এই সমস্যা সমাধানে বাধা হিসেবে কাজ করছে বলে মনে করেন তিনি৷

আমলাতান্ত্রিক জটিলতাও কিভাবে কাজকে পিছিয়ে দেয়, তাঁর দৃষ্টান্ত দিতে গিয়ে তিনি বলেন, বিগত মেয়রের আমলে বড়ইপাড়া থেকে কর্ণফুলী পর্যন্ত একটি খাল খনন প্রকল্প পাস হয়ে আসে৷ এটি এখনো শুরুই হয়নি৷

‘‘এ জন্য ভূমি অধিগ্রহণের বিষয় আছে৷ এ জন্য পুরো টাকা হাতে না পেলে জেলা প্রশাসন অধিগ্রহণের কাজ শুরু করে না৷ আর অর্থ মন্ত্রণালয় পুরো টাকা এক সাথে ছাড় দেয় না৷''

‘‘সময় চলে গেলে রিভাইজড প্রকল্প পাঠাতে হয়৷ তখন পাস হয়ে আবার খন্ডিত টাকা আসে৷ তখন আবার একইভাবে অধিগ্রহন আটকে যায়৷''

তিনি বলেন, অন্যান্য সেবাদানকারী সংস্থাগুলো তাদের কাজের মাধ্যমে অনেক সময় পানি নামার পথে বাধা সৃষ্টি করে, তাদের উপর সিটি কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণ নেই৷

‘‘ইদানীং নতুন একটা সমস্যা দেখা দিচ্ছে৷ সরকারের বিভিন্ন বিভাগ নানা প্রকল্প নিচ্ছে৷ এতে প্রজেক্ট ওভারলেপিং হবে৷ কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প আগে হয়ে যেতে পারে৷ এই ধরনের নতুন একটি সংকট দেখা দেখা দিচ্ছে৷ এ কারণে মনে হচ্ছে, চটগ্রামের জলাবদ্ধতা সমস্যা প্রলম্বিত হবে৷''

সমস্যা সমাধান পথ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকারকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে৷ পর্যাপ্ত তহবিল দিতে হবে৷ ভূমি অধিগ্রহণে হয় সরকার সমুদয় অর্থ একত্রে দেবেন বা সমুদয় অর্থ না দিয়েও যাতে কাজ শুরু করা যায় সেই ব্যবস্থা করবেন৷

‘‘সিটি কর্পোরেশন প্রকল্প নিলে ৩০ শতাংশ নিজেদের অর্থায়ন করতে হয়৷ বর্তমানে ১৬শ' কোটি টাকার প্রকল্প পাইপলাইনে আছে৷ তাঁর জন্য ৪০০ কোটির বেশি টাকা দিতে হবে৷ এই সামর্থ্য তাদের নেই৷''

তাই ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন করার আহ্বান জানান তিনি৷ বলেন, এটা বাস্তবায়নে সরকারকে সিটি কর্পোরেশনের পাশে দাঁড়াতে হবে৷ আইনি জটিলতা দূর করতে হবে৷ পর্যাপ্ত বাজেট দিতে হবে৷ তাতে তিন বছরে সহনীয় পর্যায়ে আনা যাবে৷ সাত বছরে মোটামুটি মুক্ত হতে পারবো৷ ১২ বছরে ৫০-৬০ বছরের জন্য এই নগরকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দেয়া সম্ভব৷

দেলোয়ার হোসেন বলেন, এ শহরের বিরাট অংশের মালিক চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ৷ বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং সশস্ত্র বাহিনীও বিশাল বিশাল অংশের ভূমির মালিক৷ এদেরকে এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত করতে হবে৷ তাঁর কথায়, ‘‘রাস্তাঘাট নষ্ট করবে সবাই, আর মেরামত করবে সিটি কর্পোরেশন৷ এটা হতে পারে না৷ বন্দরের কারণে এখানে মানুষ আসে৷ গাড়ি আসে৷ নর্দমা ভরে যায়৷ তারা দায়িত্ব নেয় না৷ তাদের আর্থিক সামর্থ্য আছে৷ তাদেরকে দায়িত্ব নিতে হবে৷ অথবা আয়ের একটা অংশ সিটি কর্পোরেশনকে দিতে হবে৷ এখন তারা কেবল ভূমিকর দিচ্ছেন৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য