হৃদপিণ্ডের সংক্রমণ
১ ডিসেম্বর ২০১২ডা. উরসুলা হিল্ডেব্রান্টের প্রতিপক্ষ অত্যন্ত ক্ষুদ্র, যা অনুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া দেখা যায় না৷ এত ছোট হওয়া সত্ত্বেও মানুষের মৃত্যু ডেকে আনতে পারে এগুলি৷ এরা হল রোগ জীবাণু, যারা রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হার্টে ঢুকে বাসা বাঁধতে পারে৷ যার ফলাফল মারাত্মক হতে পারে৷
ড. হিল্ডেব্রান্ট কোলনের স্পোর্টস বিশ্ববিদ্যালয়ে হার্টের পেশির সংক্রমণে আক্রান্ত রোগীদের চিকিত্সা করেন৷ হার্টের পেশি রক্ত পাম্প করে সঞ্চারিত করে সারা শরীরে৷ আর এই পেশিতে সংক্রমণ দেখা দিলে শরীরের গঠন প্রণালীতে বৈকল্য দেখা দেয়৷
খেলোয়াড়দের ঝুঁকি বেশি
ড. হিল্ডব্রান্ড জানান, ‘‘হার্টের পেশির সংক্রমণে আক্রান্ত হতে পারেন খেলোয়াড় বা আয়েশী মানুষ যে কেউ৷ তবে খেলোয়াড়দেরই এই ঝুঁকিটা বেশি৷ বিশেষ করে কোনো সংক্রণ বা অসুখবিসুখের পরপরই আবার ট্রেনিং শুরু করলে৷''
সাধারণত খেলাধুলা বা শারীরিক পরিশ্রম করার পর শরীর নাজুক থাকে৷ ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসরা এই সুযোগটা গ্রহণ করে শরীরের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়ায় ঢোকার চেষ্টা করে৷ খেলাধুলার সময় হার্টে রক্তচলাচল হয় দ্রুত৷ হার্টের চারটি প্রকোষ্ঠ থাকে, যেগুলি হার্টের ভাল্ভের সঙ্গে সংযুক্ত৷ এখানে রক্ত চলাচল করে দ্রুত প্রবাহিত নদীর মত৷ জগিং বা ফুটবল খেলার সময় হৃদপিণ্ডে রক্ত সঞ্চারের গতি বেড়ে যায়৷ এর ফলে রোগজীবাণু হার্টের ভাল্ভের পেছনে সেঁটে থাকতে পারে৷ ফলে দেখা দেয় সংক্রমণ৷
প্রতিরক্ষার সহজ উপায়
হার্টের পেশির সংক্রমণ রোধ করতে হলে বিশেষ জরুরি হল, যে কোনো রোগকে ভালোভাবে সারানো৷ বলেন ড. হিল্ডেব্রান্ড৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘সহজ কথায় বলা যায়, জ্বর ভালো হলেও কমপক্ষে দুদিন অপেক্ষা করতে হবে৷ এছাড়া হলদে সবুজ রঙের কফ থাকলে, তা ভালো হতে হবে৷ কেননা এতে বোঝা যায় বিপজ্জনক জীবাণু শরীরে এখনও রয়ে গেছে৷''
ড. উরসুলা হিল্ডেব্রান্ডের কাছে একটা সমস্যা হল, হার্টে সংক্রমণ হলে বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে৷ যেমন বুকে ব্যথা বা শ্বাসকষ্ট থেকে শুরু করে, পাল্স বেড়ে যাওয়া কিংবা রাতে ঘেমে যাওয়া ইত্যাদি৷ তাই এই রোগটি হলে শনাক্ত করতে দেরি হয়ে যায়৷ আর অসুখটি ধরতে যতই দেরি হয়, ততই বেড়ে যায় মৃত্যুর ঝুঁকি৷ ২০০৯ সালে জার্মান লাইট অ্যাথলেট রেনে হ্যার্মসকে মৃত অবস্থায় তাঁর বাড়িতে পাওয়া গিয়েছিল৷ ময়নাতদন্তের পর জানা যায়, ২৬ বছর বয়স্ক এই খেলোয়াড় হার্টের পেশির সংক্রমণে ভুগছিলেন, যা শনাক্ত করা হয়নি৷ মৃত্যুর দিন তিনি ট্রেনিংয়ে অংশ নিয়েছিলেন৷
ফাবিয়ানের ভাগ্য ভালো
অন্যদিকে আরেক তরুণ অ্যাথলেট ফাবিয়ান শ্পিনরাথ অল্পের জন্য রক্ষা পেয়ে যান৷ একবার দৌড় প্রতিযোগিতা থেকে এসে খুব ক্লান্ত বোধ করেন ফাবিয়ান৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘সাধারণত খেলার পর দশ মিনিট বিশ্রাম নিলেই চলে৷ কিন্তু আমি পাঁচ ঘণ্টা ঘুমিয়েছি৷ ডাক্তার ভেবেছিলেন, এটা বুঝি কোনো ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ৷ তাই অ্যান্টিবায়োটিকের প্রেসক্রিপশন দেন৷ কিন্তু দেড় মাস পরেও যখন উপসর্গগুলি দূর হল না, তখন আবার পরীক্ষা করে বোঝা গেল, হার্টে সংক্রমণ৷''
এই তরুণ দৌড়বিদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে৷ ছয় মাস কোনো শারীরিক পরিশ্রম থেকে বিরত থাকতে হয় তাকে৷ সিঁড়ি ভেঙে ওপরে ওঠার বদলে লিফটে চলার অভ্যাস করতে হয়, ট্রামে যাতায়াত করতে থাকেন একেবারে গন্তব্যস্থল পর্যন্ত৷ আগে কিছুটা পথ দৌড়ে পাড়ি দিতেন তিনি৷ ট্রেনিংয়ের চিন্তা একেবারেই মাথা থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে হয়৷ ছয় মাস পর ধীরে ধীরে আবার খেলাধুলা শুরু করতে থাকেন ফাবিয়ান৷ ইতিমধ্যে তার হৃদপিণ্ডের সংক্রমণ ভালো হয়ে গেছে৷ ড. হিল্ডেব্রান্ট বলেন, ‘‘আমরা হার্টের যাতে স্থায়ী ক্ষতি না হয়, সে দিকে লক্ষ্য রেখেছি৷ সম্পূর্ণ ভালো হওয়ার আগেই শারীরিক তত্পরতা শুরু করলে হার্টের কার্যক্ষমতা সারা জীবন ধরে সীমিত হয়ে যেত৷''
রোগটি বিভিন্ন রকমের হয়
হৃদপিণ্ডের পেশির সংক্রমণ বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে৷ রোগ অনুযায়ী থেরাপিও দিতে হয়৷ তবে সাধারণত যে নিয়মটা মেনে চলতে হয়, তা হল, মাস ছয়েক যে কোনো ধরনের শারীরিক তত্পরতা থেকে বিরত থাকা৷ এছাড়া কোনো অ্যালকোহল চলবে না৷ স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে হবে৷ ঘুমাতে হবে প্রচুর৷
হার্টের পেশির সংক্রমণ শুধু শিল্পোন্নত দেশেরই সমস্যা নয়, উন্নয়নশীল দেশেও দেখা যায় এই রোগ৷ তবে সেসব দেশে সাধারণত ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক দ্বারা সংক্রমিত হয় এই অসুখ৷ ধনী দেশগুলিতে ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে হার্টের পেশির সংক্রমণ৷
এইসব জীবাণুকে প্রতিহত করতে হলে ছোটখাট ঠাণ্ডা লাগলেও তা উপেক্ষা করা ঠিক হবে না৷ এছাড়া নিজের শরীরের সতর্ক সংকেতকে ভালোভাবে শুনতে হবে৷