কবি শহীদ কাদরীকে বাংলাদেশের অভিবাদন
৩৮ বছর পর দেশে ফিরে শ্রদ্ধা, ভালোবাসায় সিক্ত হলেন সদ্যপ্রয়াত কবি শহীদ কাদরী৷ যিনি লিখেছিলেন, ‘তোমাকে অভিবাদন, প্রিয়তমা’, তাঁকে অভিবাদন জানালো বাংলাদেশ৷ ছবিঘর প্রিয় কবি এবং তাঁকে শ্রদ্ধা জানানোর কিছু মুহূর্ত নিয়ে৷
প্রত্যাবর্তন
বুধবার সকালে কবির মরদেহ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঢাকায় আসে৷ সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত খরচে কবিকে স্বভূমে নিয়ে আসা হয়৷ তবে প্রধানমন্ত্রী কবিকে সশরীরে উপস্থিত হয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পারেননি৷ তাঁর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন ও বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল৷
তখন হাসপাতালে
শহীদ কাদরী দীর্ঘদিন ধরে কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন৷ অনেকদিন ধরেই তাঁর ডায়ালিসিস চলছিল৷ হুইলচেয়ারে চলাফেরা করছিলেন তিনি৷ সম্প্রতি অবস্থার আরো অবনতি হওয়ায় কবিকে নিউ ইয়র্কের নর্থ শোর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ সেখানেই তাঁর চিকিৎসা চলছিল৷
প্রয়াণ
গত রবিবার নিউ ইয়র্কের সময় সকাল সাড়ে ৭টায় নর্থ শোর হাসপাতালেই তিনি মারা যান৷ বিরলপ্রজ এ কবির বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর৷
নিউ ইয়র্ক থেকে যাত্রা
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৩) ও একুশে পদক (২০১১) প্রাপ্ত কবিকে নিউ ইয়র্ক থেকে বিমানে তোলার আগের মুহূর্ত৷
স্ত্রীর শেষ শ্রদ্ধা
সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে কবি ঢাকা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান৷ বিমানবন্দর থেকে তাঁকে বারিধারার ডিওএইচএস-এ তাঁর বড় ভাই শাহেদ কাদরীর বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়৷ সেখান থেকে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য ১১টা ২০ মিনিটে কবিকে নিয়ে যাওযা হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে৷ স্ত্রী নীরা কাদরীও সেখানে কবিকে শেষ শ্রদ্ধা জানান৷
সর্বস্তরের শ্রদ্ধা
বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, জাতীয় কবিতা পরিষদ, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে কবিকে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়৷ কবি, কবিতানুরাগী, সাংস্কৃতিক কর্মী, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যান কবির প্রতি তাঁদের শ্রদ্ধা নিবেদন করতে৷
দীর্ঘ প্রবাসজীবন
১৯৭৮ সালে দেশ ছেড়ে জার্মানিতে পাড়ি জমান কবি শহীদ কাদরী৷ এরপর যুক্তরাজ্য হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যান তিনি৷ প্রবাসজীবনের বাকিটা সময় সেখানেই কেটেছে তাঁর৷ ওপরের ছবিতে প্রবাস জীবনের নিকটজনদের সঙ্গে কবি৷
কবিতায় শহীদ কাদরী
জীবনের বেশির ভাগ সময় দেশের বাইরে কাটানো কবির প্রকাশিত কবিতা বা কাব্যগ্রন্থ খুব বেশি নয়৷ কাব্যগ্রন্থ মাত্র চারটি –উত্তরাধিকার, তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা, কোথাও কোনো ক্রন্দন নেই এবং আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও৷ চারটি কাব্যগ্রন্থই বাংলা সাহিত্যে সবিশেষ সমাদৃত৷
‘ইচ্ছাপূরণ’
১৯৪২ সালের ১৪ই আগস্ট ভারতের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন শহীদ কাদরী৷ দশ বছর বয়সে তিনি পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় চলে আসেন৷ ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত ঢাকাতেই ছিলেন৷ প্রবাসজীবনে স্বদেশ প্রবলভাবেই টানতো তাঁকে৷
তোমাকে অভিবাদন
দেশ ছাড়ার আগেই প্রকাশিত হয়েছিল কাব্যগ্রন্থ, ‘তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা’৷ তিনি লিখেছিলেন, ‘‘আমি এমন ব্যবস্থা করবো যাতে সেনাবাহিনী/গোলাপের গুচ্ছ কাঁধে নিয়ে/ মার্চপাস্ট করে চলে যাবে/এবং স্যালুট করবে/কেবল তোমাকে প্রিয়তমা৷’’ তখন (১৯৭৮) সামরিক কর্মকর্তার শাসনই চলছিল দেশে৷ ‘তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা’ কবিতাটি গান হিসেবেও জনপ্রিয়৷ নিজের সুরে গানটি গেয়েছেন কবীর সুমন৷