এডিএইচডি রোগীর জগত
১৫ মার্চ ২০১৬বছরখানেক আগের কথা৷ স্কুলে বারবার সমস্যায় পড়ছিল নিকলাস৷ ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারছিল না, মন সবসময় অন্য জায়গায় পড়ে থাকতো৷ সে এত অস্থির অবস্থায় থাকতো যে মাঝেমধ্যে চেয়ার থেকে পড়ে যেত৷ ঐ সময় সম্পর্কে এখন আর ভাবতে চায় না নিকলাস৷ শিক্ষকদের কাছে সে ছিল সমস্যা সৃষ্টিকারী একজন এবং সেজন্য তাকে শাস্তিও দেয়া হতো৷ শেষে একদিন নিকলাস অসুস্থ হয়ে পড়লে স্কুল কর্তৃপক্ষকে চিকিৎসক ডাকতে হয়েছিল৷
সমস্যার কারণ এডিএইচডি (অ্যাটেনসন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসওর্ডার)৷ এটি মস্তিষ্কের মনোযোগ সংক্রান্ত এক অসুস্থতা৷ এই রোগে আক্রান্ত শিশুদের তাদের মন সামলাতে বেগ পেতে হয়৷ নিকলাসও সবসময় তার স্বপ্নের জগতে চলে যায়৷ শিক্ষকদের কথা শোনার চেয়ে সে উত্তেজনাপূর্ণ কিছুর অভিজ্ঞতা নিতে কিংবা রহস্য গল্পে ডুবে যেতে পছন্দ করে৷ এডিএইচডি আক্রান্ত শিশুদের কাছে বাস্তবতার চেয়ে কল্পনার জগতটা বেশি আনন্দদায়ক৷
অধ্যাপক মিশায়েল শুলটে-মার্কভোর্ট নিকলাসের চিকিৎসা করেন৷ তিনি তাঁর রোগীর মাথার ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এডিএইচডি রোগীদের মনের ভেতরটা উত্তেজনায় ভরা৷ তারা বেশ মনোযোগী হয়৷ তবে একটা কাজ পুরোপুরি শেষ করতে পারে না৷ কারণ হঠাৎ করে নতুন কিছুর আবির্ভাব হলে তারা আবার সেই কাজটায় লেগে যায়৷''
এডিএইচডি যে শুধু আক্রান্ত শিশুদের জন্য সমস্যা তা নয়৷ বাবা-মা ও শিক্ষকরাও শিশুদের অদ্ভুত আচরণের কারণে সমস্যায় পড়েন৷ তবে এই অসুস্থতাকে বাগে আনার উপায় আছে৷
অধ্যাপক শুলটে-মার্কভোর্ট বলেন, ‘‘এডিএইচডি চিকিৎসার শুরুতে রোগী সম্পর্কে তথ্য জানতে হবে৷ বাবা-মা আর শিক্ষকদের বুঝতে হবে যে, শিশুরা যে মনোযোগী হচ্ছে না, তার জন্য তাঁরা দায়ী নয়৷ একেকটা দিন শিশুরা কীভাবে কাটাবে, সেই পথ তাদের দেখিয়ে দিতে হবে৷''
অবসর সময়ে সে তাঁর অতিরিক্ত শক্তি নিঃশেষ করতে পারে৷ চারপাশে ঘুরে বেড়ানোর কারণে স্কুলে সে স্থির হয়ে বসতে পারে৷ চিকিৎসার ফলে নিকলাস তার মাথায় আসা চিন্তাগুলোর মধ্য থেকে কয়েকটি বাছাই করে শুধু সেগুলোতে মনোযোগ দিতে পারে৷ চিকিৎসা ও স্কুল পরিবর্তনের কারণে সে এখন কার্যকরভাবে দৈনন্দিন জীবনযাপন করতে পারছে৷
জেডএইচ/ডিজি