বিএনপির নেতৃত্বে বিরোধী ১৮ দলের ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি' বা গণতন্ত্রের অভিযাত্রা কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনেও মাঠ দখল করে আছে পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা৷ ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আছে৷ এছাড়া ঢাকার ভিতরেও চলছে না কোনো বাস-মিনিবাস৷ ঢাকা পরিণত হয়েছে পুলিশ আর রিকশার শহরে৷
নয়াপল্টনে যেতে চান খালেদা জিয়া
সকাল থেকেই পুলিশ আর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা রাজধানীর সবগুলো প্রবেশ পথে অবস্থান নেয়৷ রাজধানী জুড়ে আওয়ামী লীগের কর্মীরা লাঠি হাতে মিছিল-মহড়া দিচ্ছেন৷ রাজধানীতে চলছে ব্যাপক তল্লাশি৷ অফিস যাত্রী, সাধারণ মানুষ, কেউই তল্লাশি থেকে রেহাই পাচ্ছেন না – পথচারী, রিকশা যাত্রী কেউই না৷
এরই মধ্যে সকালে সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবী এবং শাসক দলের সহযোগী সংগঠন যুব মহিলা লীগের মধ্যে ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে৷ বেলা পৌনে ১২টার দিকে বিরোধী দলীয় আইনজীবীরা একটি মিছিল নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের মূল গেটের কাছে আসেন৷ গেট বন্ধ থাকায় তাঁরা ভিতরেই মিছিল-স্লোগান দিতে থাকেন৷ তখন সেখান থেকে যুব মহিলা লীগের একটি মিছিল যাওয়ার সময় দুই পক্ষই ইট-পাটকেল মারে৷ কিছুক্ষণ এই ইট-পাটকেল ছোড়াছুড়ির পর, পুলিশের হস্তক্ষেপে তা বন্ধ হয়৷
-
গুলশানের বাসভবনে ‘অবরুদ্ধ’ খালেদা জিয়া
বাড়ি থেকে বেরোনোর চেষ্টা
‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ বা ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’য় অংশ নিতে রবিবার স্থানীয় সময় দুপুর তিনটার দিকে গুলশানের বাড়ি থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া৷ কিন্তু তাঁর পথরোধ করতে বাড়ির গেটে মানব দেয়াল তৈরি করে পুলিশ এবং ব়্যাবের সদস্যরা৷
-
গুলশানের বাসভবনে ‘অবরুদ্ধ’ খালেদা জিয়া
আটকে ছিলেন গেটে
পুলিশ এবং ব়্যাব সদস্যদের বাধার মুখে বেশ কিছুক্ষণ গাড়ির মধ্যে বসে ছিলেন খালেদা জিয়া৷ এরপর এক পর্যায়ে গাড়ি থেকে বের হয়ে আসেন তিনি৷
-
গুলশানের বাসভবনে ‘অবরুদ্ধ’ খালেদা জিয়া
ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
গাড়ি থেকে বেরিয়ে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন বিরোধী দলীয় নেত্রী৷ এসময় তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন৷ উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে খালেদা বলেন, ‘‘দেশ আজ কোথায় যাচ্ছে? এরা সবাই গোপালগঞ্জের৷ গোপালগঞ্জের নামই বদলে যাবে৷’’ দৈনিক প্রথম আলো খালেদার এই বক্তব্য প্রকাশ করেছে৷
-
গুলশানের বাসভবনে ‘অবরুদ্ধ’ খালেদা জিয়া
সোমবারও চলবে কর্মসূচি
নিরাপত্তা বাহিনীর বাধার মুখে শেষ পর্যন্ত বাড়ি থেকে বের হতে পারেননি খালেদা জিয়া৷ তবে তিনি বাড়ির মধ্যে ফিরে যাবার আগে উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, ‘‘এই সরকার জালেম এবং অগণতান্ত্রিক৷ এই সরকারের পতন হবেই৷’’ এসময় তিনি ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ সোমবারও চলবে বলে ঘোষণা দেন৷
-
গুলশানের বাসভবনে ‘অবরুদ্ধ’ খালেদা জিয়া
বালুভর্তি ট্রাকের ব্যারিকেড
খালেদা জিয়ার বাড়ির চারপাশে গত কয়েকদিন ধরেই পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছিল৷ শনিবার তাঁর বাড়ির সামনের রাস্তায় সাধারণ ব্যারিকেডের পাশাপাশি বালুভর্তি ট্রাকও যোগ করা হয়৷ কয়েকটি ট্রাক এমনভাবে রাখা হয়, যাতে খালেদার গাড়ি বাড়ির সামনের রাস্তা থেকে বের হতে না পারে৷ আমাদের ঢাকা প্রতিনিধি হারুন উর রশিদ স্বপন জানান, খালেদা জিয়াকে কার্যত গুলশানের বাড়িতে ‘অবরুদ্ধ’ করে রাখা হয়েছে৷
-
গুলশানের বাসভবনে ‘অবরুদ্ধ’ খালেদা জিয়া
পুলিশের বক্তব্য
খালেদা জিয়াকে বাড়ির বাইরে যেতে না দেয়া প্রসঙ্গে পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নয়াপল্টনে কোনো জমায়েত বা সমাবেশের অনুমতি নেই৷ তাই বিরোধী দলীয় নেত্রীকে সেখানে যেতে দেয়া হবে না৷ আর তাঁর নিরাপত্তার বিষয়টিও পুলিশের দেখার আছে৷’’
-
গুলশানের বাসভবনে ‘অবরুদ্ধ’ খালেদা জিয়া
প্রাণহানি
এদিকে, ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’কে ঘিরে সংঘর্ষ এবং বিস্ফোরণে ঢাকায় কমপক্ষে দুই ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন৷ রবিবার সকাল এগারোটার দিকে ঢাকার মালিবাগে পুলিশ আর জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রাণ হারান মনসুর আলী৷ অন্যদিকে, কমলাপুরে তল্লাশির সময় বোমার বিস্ফোরণে নিহত হন নিরাপত্তাকর্মী আবুল কাশেম৷
-
গুলশানের বাসভবনে ‘অবরুদ্ধ’ খালেদা জিয়া
সুপ্রিমকোর্টে তাণ্ডব
এদিকে, ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’য় যোগ দিতে সুপ্রিমকোর্টের বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা কোর্টের মূল গেট দিয়ে মিছিল করে নয়াপল্টনে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের জল কামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে আটকে দেয়৷ এরপর তারা ভিতরে গিয়ে পুলিশের প্রতি ইট পাটকেল ছোড়ে৷ এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের একদল সমর্থক সুপ্রিমকোর্ট চত্বরে ঢুকে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়৷ সেখানে কয়েকজন আইনজীবী আহত হন৷
-
গুলশানের বাসভবনে ‘অবরুদ্ধ’ খালেদা জিয়া
বিরল সংঘর্ষ
বলাবাহুল্য, সাম্প্রতিক সময়ে সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও বাইরে থেকে কোন দলের নেতাকর্মীরা সেখানে গিয়ে সংঘর্ষে অংশ নেয়নি৷ সেক্ষেত্রে রবিবার আওয়ামী লীগ সমর্থকদের আদালত চত্বরে প্রবেশ করে সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়াটা বিরল ঘটনা বলে অবিহিত করেন আমাদের ঢাকা প্রতিনিধি৷
-
গুলশানের বাসভবনে ‘অবরুদ্ধ’ খালেদা জিয়া
চুপচাপ নয়াপল্টন
‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ কর্মসূচির আওতায় গোটা দেশ থেকে সক্ষম নেতাকর্মীদের ২৯ ডিসেম্বর, রবিবার বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে হাজির হওয়ার আহ্বান জানান খালেদা জিয়া৷ কিন্তু রবিবার বিএনপি কার্যালয়ের সামনে বিএনপির নেতাকর্মীরা জড়ো হতে পারেনি৷ কিছু নেতাকর্মী কার্যালয়ের সামনে যেতে চাইলে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ ফলে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে দৃশ্যত পুলিশ এবং সাংবাদিক ছাড়া কেউ ছিল না৷
-
গুলশানের বাসভবনে ‘অবরুদ্ধ’ খালেদা জিয়া
পাঁচ জানুয়ারি নির্বাচন
উল্লেখ্য, আগামী পাঁচ জানুয়ারি বাংলাদেশে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট এই নির্বাচন বর্জন করায় এবার ১৫৪টি আসনে ভোটাভুটির দরকার হচ্ছে না৷ এসব আসনে একজন করে প্রার্থী রয়েছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কমনওয়েলথ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ না করার ঘোষণা দিয়েছে৷
লেখক: আরাফাতুল ইসলাম
এদিকে সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় দ্বিতীয় দিনের হাঙ্গামার ঘটনায় তীব্র প্রতিাক্রয়া জানিয়েছেন সিনিয়র আইনজীবীরা৷ ব্যারিস্টার রফিকুল হক বলেছেন, আইনজীবীদের ওপর বহিরাগতদের হামলায় সুপ্রিম কোর্টের জানাজা হয়ে গেছে৷ তবে পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ দাবি করেছেন যে, সেখানে আইনজীবীদের সঙ্গে বহিরাগতরাও ছিল৷ তিনি আরো দাবি করেন, প্রেসক্লাবে জঙ্গিরা বৈঠক করে বলে পুলিশের কাছে তথ্য আছে৷
ওদিকে দুপুর সোয়া ১টার দিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, সংসদ সদস্য রাশেদা বেগম হীরা এবং সাবেক সংসদ সদস্য নেওয়াজ হালিমা আরলি পায়ে হেঁটে গুলশানের ৭৯ সড়কে খালেদা জিয়ার বাড়ির সামনে যান৷ সেলিমা রহমান পুলিশ সদস্যদের তাঁদের ঢুকতে দিতে বলেন৷ সেলিমা রহমান তখন পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘‘খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার নন, তাঁকে আটকে রেখেছেন কেন?'' এরপরই পুলিশ সদস্যরা সেলিমা রহমানসহ ৩ নেত্রীকে আটক করে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়৷ তবে বিকেলের দিকে তাঁদের ছেড়ে দেয়া হয়৷
খালেদা জিয়ার বাড়ির সামনে পুলিশ পাহারা আরো বাড়ানো হয়েছে৷ সেখানে পুলিশ ছাড়াও ব়্যাব সদস্যদেরও মোতায়েন করা হয়েছে৷ খালেদার নিরাপত্তা কর্মীরা জানিয়েছেন যে, তিনি যে কোনো সময় নয়াপল্টনে যাওয়ার চেষ্টা করবেন৷ তিনি যদি কোনোভাবে বের হতে পারেন তাহলে তাঁকে আটকানো কঠিন হবে৷ পুলিশ খালেদা জিয়ার বাড়ির সামনে থেকে সাংবাদিকদেরও সরিয়ে দিয়েছে বলে প্রকাশ৷