ইন্দোনেশিয়ায় মৃতদের নিয়ে উৎসব
ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপ সুলায়েসি থেকে বেশ খানিকটা দূরে তোরজ অঞ্চল৷ সেখানকার বাসিন্দারা মৃতদেহকে কফিনে পুরে অনেকদিন বাড়িতে রাখার পর একরকম উৎসব উদযাপনের মাধ্যমেই সমাধিস্থ করে৷ ‘মানেনে’ নামের এ উৎসব নিয়েই আজকের ছবিঘর....
ছয় বছর পর
তোরজা অঞ্চলের বেশিরভাগ বাসিন্দাই খ্রিস্টান৷ তাঁরা ঐতিহ্যে বিশ্বাস করেন এবং তার মর্যাদা রক্ষায় এখনও প্রাচীন নানা রীতি মানেন৷ প্রিয়জনের মৃত্যুতে শুধু শোক না করে তা উদযাপনও সেরকম এক রীতি৷ ইয়োসেফিনা নামে ছবির এই ব্যক্তি ছয় বছর পর কফিন থেকে বের করা তাঁর এক আত্মীয়ের মৃতদেহের দিকে তাকিয়ে বলছিলেন, ‘‘তোমাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে৷’’
পরিবারের জন্য
সবাই মনে করেন, পরিবারের মৃত ব্যক্তিটি শারীরিকভাবে তাঁদের সঙ্গে নেই, কিন্তু কোথাও একটি সংযোগ আছে৷ রয়টার্স জানাচ্ছে, লোকোমাটা নামক একটি জায়গায় একাধিক পরিবার জড়ো হয় কফিন নিয়ে আসতে৷ এটি বিশাল একটি পাথরের ভাস্কর্যের মতো দেখতে৷ তার মধ্যেই রাখা থাকে কফিন৷
এখনও বেঁচে আছে
মৃতদেহকে সমাধিস্থলে পৌঁছানোর আগে কফিনে করে নিজের বাড়ীতে কয়েক মাস এমনকি বছর পর্যন্ত রাখা হয়৷ আত্মীয়স্বজনরা মৃতদের সাথে কথা বলে, তাদেরকে খাবার, পানীয় দিতে চাওয়া হয় যেন তারা এখনও বেঁচে আছে৷ পরিবারের সাথেই আছে৷
নতুন করে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া
যাদের সামর্থ্য আছে তারা সমাধিস্থ করার আগে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করে৷ এই অনুষ্ঠানের নাম ‘রাম্বু সলো’৷ পুরো গ্রামের মানুষকে দাওয়াত দেয়া হয় এতে৷ ঝলসানো শূকরের মাংস দিয়ে আপ্যায়ন করা হয় তাদের৷ আর পরিবারের সদস্যরা এমনভাবে কাঁদতে থাকেন যেন সদ্য মারা গেছেন কেউ৷
কফিনের সাজ
কফিনগুলো সাধারণত উজ্জ্বল লাল রং ও আঁকানো কাপড় দিয়ে মোড়ানো থাকে৷
ঐতিহ্যধারণ
সাধারণত পরিবারের বয়স্ক কেউ ছোটদের বা পরের প্রজন্মকে এসময় এ ঐতিহ্য মেনে চলতে নানাভাবে উৎসাহিত করেন৷ আনুষ্ঠানিক বক্তব্যও দেন৷
শ্রদ্ধা নিবেদন
কফিনের ভেতরে মৃত ব্যক্তিটির মৃত্যুর আগের একটি ছবি রাখা হয়৷ সাধারণত মাথার কাছে রাখা হয় ছবিটি৷ সেই ছবির মতো করেই মৃতদেহকে সাজানোর চেষ্টা করা হয৷ সবাই আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে শ্রদ্ধা জানায়৷ ইন্দোনেশিয়া মূলত মুসলিমপ্রধান দেশ হলেও সে দেশে অনেক হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান এবং ভিন্ন ঐতিহ্যে বিশ্বাসী গনগোষ্ঠিও রয়েছে৷