ইউরোপীয় আদালতের রায় ইহুদি বসতির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করল
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১০প্রেক্ষাপট
গত প্রায় ২০ বছর ধরে ইসরায়েলের ‘সোডা-ক্লাব' নামের এক সংস্থা জার্মানি, ইউরোপ সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সোডা জল তৈরির যন্ত্র রপ্তানি করে চলেছে৷ ইসরায়েল ইউরোপের বাজারে বিনা-শুল্কে পণ্য রপ্তানির যে সুযোগ পায়, তার সদ্ব্যবহার করে ভালই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিল ‘সোডা-ক্লাব'৷ তাদের যন্ত্রের উপর লেখা থাকত ‘মেড ইন ইসরায়েল'৷ কিন্তু ২০০১ সাল থেকে ইউরোপীয় বিধিনিয়ম অনুযায়ী কোনো পণ্যের উপর শুধু দেশের নাম লেখা থাকলে চলবে না, সঙ্গে উৎপাদন কেন্দ্রের নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অবস্থানও জানাতে হবে৷ জার্মানির হামবুর্গ বন্দরের শুল্ক কর্তৃপক্ষ ‘সোডা-ক্লাব'এর কাছে যখন এই সুনির্দিষ্ট তথ্য জানতে চাইল, তখন জানা গেল, যে ইসরায়েলের মূল ভূখণ্ডে নয় – অধিকৃত পশ্চিম তীরের ‘মালে' নামের ইহুদি বসতিতে তৈরি হয় ‘সোডা-ক্লাব'এর যন্ত্র৷
ইউরোপীয় কমিশনের নির্ধারিত সংজ্ঞা অনুযায়ী ইসরায়েল রাষ্ট্রের সীমানা ১৯৬৭ সালের অবস্থানের মধ্যে সীমাবদ্ধ৷ অর্থাৎ পশ্চিম তীর, গাজা, গোলান হাইটস বা পূর্ব জেরুসালেমের মত অধিকৃত এলাকা তার মধ্যে পড়ে না৷ অধিকৃত এলাকায় উৎপাদিত পণ্যের জন্য ইসরায়েলের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাগজে-কলমে কোন চুক্তি নেই৷
আইনি জটিলতা
‘সোডা-ক্লাব' বিনা শুল্কে ইউরোপের বাজারে তাদের পণ্য যেভাবে বিক্রি করে আসছিল, তা অবৈধ – এমন কারণ দেখিয়ে হামবুর্গের শুল্ক কর্তৃপক্ষ কয়েক বছর আগেই ‘ব্রিটা' নামের এক জার্মান সংস্থার কাছে প্রায় ১৯,০০০ ইউরো বকেয়া শুল্ক দাবি করে, যারা ২০০২ সাল থেকে ‘সোডা-ক্লাব'এর কাছ থেকে সোডা জল তৈরির যন্ত্র কিনে আসছে৷ বিষয়টি ইউরোপীয় আদালত পর্যন্ত গড়ায়৷ বৃহস্পতিবার আদালত রায় দিয়েছে, যে পশ্চিম তীরের অধিকৃত এলাকায় উৎপাদিত পণ্য শুল্কমুক্ত হতে পারে না, যেমনটা ইসরায়েলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য৷ এমনকি ফিলিস্তিনি পণ্যের জন্য শুল্কের বিশেষ সুবিধাও এক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়৷
রায়ের তাৎপর্য
আপাতদৃষ্টিতে ইউরোপীয় আদালতের এই রায় সামান্য এক ঘটনা৷ কিন্তু এই রায়ের মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রথম বার অধিকৃত এলাকায় বসতি নীতির জন্য ইসরায়েলকে শাস্তি দিল৷ বহুকাল ধরেই ই.ইউ. ইসরায়েলের উদ্দেশ্যে বসতি স্থাপন বন্ধ করার ডাক দিয়ে চলেছে বটে, কিন্তু সেদেশের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেয় নি৷ এই রায়ের মাধ্যমে বিচারপতি পরোক্ষভাবে ইহুদি বসতিগুলিকে বে-আইনী ঘোষণা করলেন৷
বৃহস্পতিবারের রায়ের আরও একটি বিশেষ মাত্রা রয়েছে৷ লিসবন চুক্তি কার্যকর হওয়ার ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আন্তর্জাতিক আইন শুধু মেনে চলতেই বাধ্য নয়, এই আইনের ব্যাপক প্রয়োগ করে জাতিসংঘের সনদকে আরও শক্তিশালী করার দায়িত্বও ইউরোপকে পালন করতে হবে৷ চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর ইউরোপীয় আদালত প্রথম বারের মত আন্তর্জাতিক আইনের বিষয়ে কোন রায় দিল৷
ইহুদি বসতিগুলিতে তৈরি পণ্য সম্পর্কে ইউরোপে ইতিমধ্যেই বিতর্ক শুরু হয়ে গেছে৷ জার্মানির ‘স্যুডডয়চে সাইটুং'এ প্রকাশিত এক প্রত্যক্ষদর্শীর জবানবন্দি অনুযায়ী অধিকৃত এলাকায় ইহুদি বসতিগুলিতে বিভিন্ন উৎপাদন কেন্দ্রে ফিলিস্তিনিদের অনেক অপমান সহ্য করে নামমাত্র মজুরিতে কাজ করানো হয়৷ ব্রিটেনের সরকার এমনকি দেশের সুপারমার্কেটগুলির উদ্দেশ্যে কোন ইহুদি বসতিতে তৈরি পণ্যের উপর আলাদা নির্দেশিকা রাখার ডাক দিয়েছে৷
প্রতিবেদক: সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল ফারূক