1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রাসায়নিক এড়িয়ে অরগ্যানিক চাষই আখেরে লাভজনক

৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

খেতে আগাছা ও কীটপতঙ্গের মোকাবিলায় প্রায়ই নানা রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগ করা হয়৷ তাতে দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে নানা রকম সমস্যা দেখা যায়৷ অরগ্যানিক পদ্ধতিতে চাষের ক্ষেত্রে যান্ত্রিক সমাধানসূত্র সাহায্য করছে৷

https://p.dw.com/p/34HfT
Bangladesch Biologische Landwirtschaft
ছবি: Delowar Jahan

কীটনাশকের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব

খেতে আগাছা, কীটপতঙ্গ, ছত্রাক দূর করতে ফ্রাংক স্টুট বিশ বছর ধরে বিষাক্ত কীটনাশক স্প্রে করে আসছেন৷ বেশ কিছুকাল তাতে কাজ হয়েছে৷ কিন্তু এত রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগ করার ফলে তাঁর খেতে ‘সুপারউইড' বা এমন আগাছা সৃষ্টি হয়েছে, যা সবকিছু প্রতিরোধ করতে পারে৷ ফসল তোলার কয়েক সপ্তাহ আগেই সেটি গম নষ্ট করে দেয়৷ ফ্রাংক বলেন, ‘‘একে বলে ব্ল্যাক গ্রাস বা কালো ঘাস৷ আসল সমস্যা হলো, সেগুলি দ্রুত বেড়ে উঠে ছড়িয়ে পড়ে৷ ফলে ৫০ শতাংশেরও বেশি আয় কমে যায়৷''

বায়ার, বিএএসএফ বা সিনজেন্টা কোম্পানি সেই আগাছার মোকাবিলায় প্রতিরোধক তৈরি করেছে বটে, কিন্তু তা সত্ত্বেও এই আগাছা কিছুতেই নির্মূল করা যাচ্ছে না৷ তাদের বংশবৃদ্ধি অব্যাহত থাকছে৷ ফ্রাংক স্টুট বলেন, এক বর্গমিটার এলাকায় তিন থেকে চারশ' এমন আগাছা গজালে ফসলের আর বিশেষ কিছু অবশিষ্ট থাকে না৷''

এই খেতও শীঘ্র ধ্বংস হয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে৷ জার্মানির লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের কৃষি চেম্বারের ল্যুডার বর্নেমানের সঙ্গে স্টুট কয়েক বছর ধরে কীটনাশক সত্ত্বেও ‘সুপারউইড'-এর প্রসার নথিভুক্ত করছেন৷ কিছুতেই কাজ হচ্ছে না৷ এমনকি মারাত্মক বিষও তাদের নির্মূল করতে ব্যর্থ হচ্ছে৷ ল্যুডার বলেন, ‘‘গ্লিফোসেট, যার কিনা ব্ল্যাক গ্রাসসহ সব ধরনের আগাছা ধ্বংস করার কথা, তাতেও কাজ হচ্ছে না৷ শ্লেসভিক হলস্টাইন রাজ্যে কিছু জায়গায় তা প্রয়োগ করে কোনো কাজ হয়নি৷ সেখানে কালো ঘাস দিব্যি বেঁচে রয়েছে৷ তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা দেখে সত্যি অবাক হতে হয়৷'' 

এই প্রতিরোধ ক্ষমতাই আগাছার ‘সুপার পাওয়ার'৷ মানুষ নিজেই তাদের সেই ক্ষমতা দিয়েছে৷ জিনের মধ্যে আচমকা পরিবর্তন ঘটালে কোনো উদ্ভিদ উদ্ভিদনাশকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে পারে৷

কালো ঘাসের কুফল

খেতে এমন প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্ল্যাক গ্রাস থাকলে এবং তা দূর করতে উদ্ভিদনাশক প্রয়োগ করলে উলটে তার আশেপাশের প্রতিদ্বন্দ্বী আগাছাগুলি মরে যায়৷ তখন ব্ল্যাক গ্রাস বিনা বাধায় বেড়ে উঠতে ও বংশবৃদ্ধি করে যেতে পারে৷ এই প্রক্রিয়ায় যে আগাছা একের পর এক বিষের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে, তাদের ‘সুপারউইডস' বলা হয়৷ সেগুলি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে৷ এমন মাল্টিরেজিস্ট্যান্ট আগাছা গোটা বিশ্বে বড় সমস্যা হয়ে উঠেছে৷ লোয়ার স্যাক্সনি কৃষি চেম্বারের ল্যুডার বর্নেমান বলেন, ‘‘রাসায়নিক শিল্পের প্রতিনিধিরা বলেন, ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে এমনটা ঘটতে পারে৷ বিগত বছরগুলিতে সত্যি এমনটা দেখা গেছে৷ ৫ থেকে ১০ বছর পর পর নতুন করে এমনটা ঘটতো৷ অর্থাৎ ব্ল্যাক গ্রাস বিশেষ ধরনের অ্যাকটিভ সাবস্টেন্সের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুললেই বার বার নতুন উদ্ভিদনাশক বাজারে এসেছে৷ তাতে কাজও হয়েছে৷ কিন্তু চাষের প্রণালীতে রদবদল করা হয়নি৷''

রাসায়নিক পদার্থের কল্যাণে সাধারণ চাষিরা এমন সব ফসল ফলাতে পারতেন, যাতে সবচেয়ে বেশি আয় হয়৷ এখন তাঁরা অরগ্যানিক চাষিদের কার্যকলাপ লক্ষ্য করতে শুরু করেছেন৷ অথচ এককালে তাঁরাই হাসির পাত্র ছিলেন৷

আগাছা দূর করার বিকল্প পদ্ধতি

অরগ্যানিক চাষের খেতেও আগাছা জন্মায় বটে, কিন্তু বিষ প্রয়োগ করে তা দূর করা হয় না৷ রাইনার বোনহর্স্ট তাঁদেরই একজন৷ তিনি প্রাচীনকাল ধরে চলে আসা কৌশল প্রয়োগ করেন৷ রাইনার বলেন, ‘‘এটা হলো ‘হেয়ারি ভেচ', যা খেতে ভরে গেলে ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হয়৷ কিন্তু আমরা সেগুলি ছেঁটে ফেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি৷ এখন ফসল বেশ ভালো বলে আমার মনে হচ্ছে৷ এখানে যান্ত্রিক উপায়ে আগাছা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে৷''

অরগ্যানিক চাষের ক্ষেত্রেও বেশ কিছুকাল ধরে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে৷ ক্যামেরা, জিপিএস ও লেন ডিপার্চার ওয়ার্নিং সিস্টেম কাজে লাগিয়ে যন্ত্রই খেতের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় আগাছা তুলে দিচ্ছে৷ অবশ্যই কোনো বিষাক্ত পদার্থ স্প্রে করতে হচ্ছে না৷ অথচ সাধারণ চাষিরা অরগ্যানিক চাষিদের অবজ্ঞা করে এতকাল সেই পথে যেতে চাননি৷ তাঁদেরই একজন মার্কুস ম্যুকে৷ তিনি বলেন, ‘‘কাজটা খুবই সহজ ছিল৷ ট্যাংক ভর্তি করে স্প্রে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেই হলো৷ দ্রুত কাজ শেষ হয়ে যায়৷ যান্ত্রিক পদ্ধতিতে আগাছা কাটার কৌশলকে বার বার অত্যন্ত ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ হিসেবে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে৷ ফলে দাবি করা হয়েছে যে, অর্থনৈতিক কারণে এমন যন্ত্র ব্যবহার অর্থহীন৷''

অতীত থেকে শিক্ষা

তবে শুধু আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করলেই তাকে অরগ্যানিক চাষ বলা চলে না৷ রাসায়নিক দ্রব্য ছাড়াই আগাছা ও ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাইনার বোনহর্স্ট-কে প্রকৃতির নিয়ম মেনে চলতে হয়৷ বাজারের নিয়ম মানলে চলে না৷ সেই খেতের আলুর চাহিদা উৎপাদনের তুলনায় অনেক বেশি হলেও চার বছর পর পর খেতে সেই আলু গজায়৷ ফ্রাংক স্টুট বলেন, ‘‘ফসলের সব ধরনের সুরক্ষার জন্য শুধু ব্যবহার করবো – এমন ধারণা থেকে আমাদের বিদায় নিতে হবে৷ বরং আগের মতো ফসল পরিবর্তন করতে হবে এবং আরো অনেক পরিশ্রম করে মাটির আরো যত্ন নিতে হবে৷ আমাদের পূর্বপুরুষরা এমনটাই করতেন৷''

এমন উপলব্ধি সত্ত্বেও বিষাক্ত স্প্রে রাতারাতি খেত থেকে বিদায় নেবে বলে মনে হয় না৷ তবে ফ্রাংক স্টুট নতুন ফসল চাষ করতে চান৷ হয়তো গমের বদলে মটরশুঁটি৷ আয় কম হলেও সেই উদ্ভিদ অনেক বেশি সহনশীল৷

ইয়ুলিয়া শ্ভেন/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান