1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তারেক অণুর ভ্রমণ নেশা

২১ জুলাই ২০১৩

বাংলাদেশের পর্যটক তারেক অণু কথাটা বলেছেন উত্তর মেরু সম্পর্কে৷ ২০০৭ সালে আরেক বাংলাদেশি ইনাম আল হকের সঙ্গে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন৷ কেউ কেউ বলেন, বিশ্বের অনেক দেশ ভ্রমণ করা অণুর নাকি ইবনে বতুতা হতে আর সময় বেশি নেই!

https://p.dw.com/p/19B7t
ছবি: Tareq Onu

ভ্রমণ বোধ হয় প্রায় সব মানুষেরই প্রিয়৷ তবে কারো কারো কাছে সেটা নেশার মতো৷ তারেক অণু এমনই একজন৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের সময় তিনি মনে করতে পারলেন না ঠিক কয়টি দেশে তিনি গেছেন৷ শুধু বললেন অস্ট্রেলিয়া আর অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে যাওয়া হয়নি!

বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ মাচু পিচুর দেশ দক্ষিণ অ্যামেরিকার পেরু থেকে শুরু করে ইউরোপের সর্বোচ্চ পর্বতচূড়া মঁ ব্লঁ'য় আরোহণ, স্নরকেলিং করে সাগরের তলদেশের সৌন্দর্য উপভোগ করা, পৃথিবীর ষষ্ঠ সর্বোচ্চ চূড়া চো ইয়ো'তে ওঠার চেষ্টা, উত্তর মেরুর মতো চরম ঠান্ডা স্থানে গিয়ে ম্যারাথন দৌড়ে অংশ নেয়া – এসবই করেছেন অণু৷

Bildergalerie Reise Urlaub Tourismus Tareq Onu
উত্তর মেরুতে ‘নর্থ পোল ম্যারাথন' দলের সঙ্গেছবি: Tareq Onu

উত্তর মেরুতে ৬০ ঘণ্টা

২০০৭ সালে অণু আর ইনাম আল হক ‘নর্থ পোল ম্যারাথন' দলের অংশ হয়ে উত্তর মেরু গিয়েছিলেন৷ ‘‘এর ফলে কিছু কম খরচে সেখানে যেতে পেরেছিলান,'' সরল স্বীকারোক্তি অণুর৷ তিনি বলছেন, উত্তর মেরুতে এমনিতে যাওয়া বেশ ব্যয়সাপেক্ষ৷

সেখানকার অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে বলতে বললেন, ‘‘উত্তর মেরুতে আমরা প্রায় ৬০ ঘণ্টা ছিলাম৷ পুরোটা সময় সূর্য আমাদের সঙ্গেই ছিল৷ কখনো ডুবেনি৷ কারণ ছোটবেলা থেকেই আমরা জানি উত্তর মেরুতে ছয়মাস দিন আর ছয়মাস রাত থাকে৷ তো আমরা গিয়েছিলাম যখন দিনের সময় তখন৷ এটা খুবই স্মরণীয় একটা ব্যাপার, যা আমার সারাজীবন মনে থাকবে৷''

Tareq Onu auf dem Mont Blanc
ইউরোপের সর্বোচ্চ পর্বতচূড়া মঁ ব্লঁ'য় আরোহণ করেছেন অণুছবি: Tareq Onu

অণুরা উত্তর মেরুতে গিয়েছিলেন এপ্রিল মাসে, অর্থাৎ গ্রীষ্মকালে৷ এই সময়টায় ছয়মাস দিনের কেবল শুরু৷ তাপমাত্রা ছিল প্রায় মাইনাস ২৫-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ তবে অণু বলছেন উত্তর মেরুর প্রায় পুরোটাই যেহেতু ফাঁকা জায়গা তাই অনুভূত তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ৫০-৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো৷

‘‘এমন ঠান্ডার মধ্যে ম্যারাথন দৌড়ের সময় অনেকের এমন হয়েছে যে, চোখে ঘামের ফোঁটা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটা বরফ হয়ে গিয়ে চোখ বন্ধ করে দিয়েছে৷ পরে হালকা গরম পানি দিয়ে সেটা সরিয়ে আবার দৌড় শুরু করতে হয়েছে,'' বলেন অণু৷ ‘‘আমি এখন ফিনল্যান্ডের মতো অত্যন্ত ঠান্ডার একটা দেশে থাকলেও ঐ যে অভিজ্ঞতা সেটা ভোলার নয়৷''

তারপরও বাংলাদেশ

২০০২ সালে উচ্চশিক্ষার্থে ফিনল্যান্ডে যান অণু৷ এখনো সেখানেই আছেন৷ এর মধ্যে ২০০৬ সালে জার্মানিতে যখন বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল তখন গাড়ি নিয়ে ফিনল্যান্ড থেকে সেখানে গিয়েছিলেন খেলা দেখতে৷ পথে ঘুরেছিলেন প্রায় নয়টি দেশ৷ ‘‘এটা এক হিসেবে আমার জীবনের জন্য একটা মাইলস্টোন৷ এর আগে দেশে থাকতেও ঘোরাঘুরি করেছি৷ কিন্তু সেটা ছিল, বোঝেনই তো, যেহেতু ছাত্র ছিলাম সামর্থ্য মতো৷''

তারেক অণুর সাক্ষাৎকার

আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, পেরু, বলিভিয়া, মেক্সিকো, কিউবা, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে রাশিয়া, ফ্রান্স, ইটালি, জার্মানি, স্পেন, নরওয়ে, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র সহ পূর্ব ইউরোপের কয়েকটি দেশ চষে বেড়িয়েছেন৷ মেক্সিকোয় গিয়ে সেখানকার খাবার, প্রকৃতি, পাহাড়, জঙ্গল দেখে মোহিত হয়ে দেশ হিসেবে মেক্সিকোকে পর্যটকদের জন্য একশোতে একশো দিয়েছেন৷ প্রশংসা করলেন হিমালয় কন্যা নেপালেরও৷

কিন্তু বারবার তাঁর কথায় ফিরে আসছিল বাংলাদেশের কথা৷ তিনি বলছেন, ছোট্ট একটা দেশ যে কী পরিমাণ বৈচিত্র্যময় হতে পারে বাংলাদেশ তার উদাহরণ৷ ‘‘সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর, সুন্দরবন, ভোলা ও পটুয়াখালির ডুবো চর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে অপরূপ নকশার বাড়িঘর – এমন অনেক বৈচিত্র্যময় স্থান রয়েছে বাংলাদেশে যেখানে আমি ঘুরতে খুব পছন্দ করি৷''

Bildergalerie Reise Urlaub Tourismus Tareq Onu
টাঙ্গুয়ার হাওরের সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ অণুছবি: Tareq Onu

ফিনল্যান্ডে বসবাস আর বিশ্ব ঘুরলেও সঙ্গে সবসময় থাকে সবুজ টি-শার্ট যার পেছনে ইংরেজি ও বাংলায় লেখা প্রিয় মাতৃভূমির নাম৷ ‘‘ঘোরাঘুরির সময় এই টি-শার্ট দেখে অনেকেই বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে চায়,'' বলেন অণু৷

ন্যাশনাল জিওগ্রাফির প্রতিযোগিতায় অণু

যারা ঘোরাঘুরি করতে ভালবাসেন তাদের মধ্য থেকে কয়েকজনকে বেছে ‘ট্র্যাভেলার অফ দ্য ইয়ার' খেতাব দেয় ন্যাশনাল জিওগ্রাফি৷ পাঠকদের পাঠানো পর্যটকের নাম ও তাঁরা কেন তার নাম পাঠাচ্ছেন সেসব কারণ বিবেচনা করে জুরি বোর্ড বিজয়ী নির্ধারণ করে থাকে৷ সে ক্ষেত্রে কে বেশি ভোট পেল তা বিবেচ্য নয়, বরং কোন পর্যটক তার ঘোরাঘুরির মাধ্যমে অন্যকে উৎসাহিত করতে পারছে বা কোনো মহৎ কারণে সেই ঘোরাঘুরি কি না এসব নানা কারণ বিবেচনা করে থাকে জুরি বোর্ড৷

Bildergalerie Reise Urlaub Tourismus
পেরুর মাচু পিচুতে বাংলাদেশের তারেক অণুছবি: Tareq Onu

এবছর এই প্রতিযোগিতায় তারেক অণুকে ভোট দিয়েছেন অনেকে৷ অথচ অণু নিজে এই প্রতিযোগিতা সম্পর্ক অবহিত ছিলেন না বলে জানান৷ ‘‘আমার এক পাঠক একদিন আমাকে এটা সম্পর্কে জানায় এবং বলে যে তারা ভোট দিতে চায়৷ আমি বললাম ভালো তো! ন্যাশনাল জিওগ্রাফি একটি নামকরা প্রতিষ্ঠান৷''

ভোটপর্ব শেষ হয়ে গেছে গতমাসে৷ নভেম্বরের দিকে বিজয়ীর নাম প্রকাশ করা হবে৷ ‘‘আমি জানি জিততে পারব না৷ কিন্তু আমার জানা অজানা অনেকেই যে আমাকে ভোট দিয়েছেন তাতেই আমি মনে করি যে আমি জিতে গেছি৷''

সাক্ষাৎকার: জাহিদুল হক

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য