1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

২৫ বছর পর ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনার রায় - আট অভিযুক্ত দোষী সাব্যস্ত

৭ জুন ২০১০

মধ্যপ্রদেশের ভোপালে ইউনিয়ন কার্বাইডের কীটনাশক কারখানায় বিশ্বের ভয়াবহতম বিষাক্ত গ্যাস দুর্ঘটনার জন্য সোমবার আট অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দেন স্থানীয় এক আদালত৷ রায় হলো ২৫ বছর পর৷

https://p.dw.com/p/NjnU
মানুষের প্রতিবাদছবি: AP

শাস্তি হিসেবে দুবছর জেল এবং এক লাখ টাকা জরিমানা৷ গ্যাস পীড়িতরা এই রায়ে অসন্তুষ্ট৷ এজন্য তাঁরা দায়ী করেন সরকারকে৷

বহুজাতিক মার্কিন কোম্পানি ইউনিয়ন কারবাইডের তত্কালীন ম্যানেজমেন্টের ৮জন ভারতীয়কে কারখানার রক্ষণাবেক্ষণে গাফিলতির অপরাধে দুবছর জেল ও এক লাখ টাকা করে জরিমানা কেন ভোপাল আদালত, তাও ২৫ বছর ৬-মাস পর৷ আটজন আসামির একজন ইতিমধ্যেই মৃত৷ অপর সাতজন শুক্রবারই জামিন পেয়ে যান৷ আদালত ১৭৮ জনের সাক্ষ্য নেন এবং সাড়ে তিন হাজার নথিপত্র পরীক্ষা করেন৷ কিন্তু আদালত কোম্পানির তত্কালীন চেয়ারম্যান মার্কিন নাগরিক ওয়ারেন এন্ডারসন সম্পর্কে নীরব৷ উল্লেখ্য, দুর্ঘটনার পর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়, কিন্তু কয়েক ঘন্টার পরই তিনি জামিন পেয়ে যান৷ পরে ভারত ছেড়ে পালিয়ে যেতেও সক্ষম হন৷ তারপর থেকে তিনি ফেরার৷

ভোপাল গ্যাস পীড়িত সংস্থার কর্তাব্যক্তি আব্দুল জব্বর ভোপাল থেকে এই রায় সম্পর্কে ডয়েচে ভেলেকে বলেন, বিচারের নামে আমাদের সঙ্গে ঠাট্টা করা হয়েছে৷ এই দুর্ঘটনায়, তাঁর মতে ৩৫ হাজারের মত লোক মারা গেছে ৫ লাখের মত লোক নানা মারণব্যধিতে ভুগছে৷ দুবছরের সাজা আর সামান্য জরিমানার কোন মানে হয়না৷ দ্বিতীয়তঃ ভবিষ্যতে এই রকম দুর্ঘটনা ঘটলে এই রায়কে ব্যবহার করা হবে৷ এর জন্য মূলতঃ দায়ী সরকার ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলির মধ্যে যোগসাজস৷ সরকার চায় বিদেশি বিনিয়োগ, আর বিদেশি কোম্পানিগুলি চায় মুনাফা৷ তারজন্য মানুষের প্রাণহানি হলে কিংবা পরিবেশ দুষিত হলে তাদের কিছু এসে যায়না- বলেন ভোপাল গ্যাস পীড়িতদের একজন আব্দুল জব্বর৷

Unglück in Indien Bhopal 1984
গ্যাসে অন্ধ দুই শিশুকে নিয়ে যাচ্ছেন স্বজনেরা (ফাইল ফটো)ছবি: AP

১৯৮৪-এর ২রা ও ৩রা ডিসেম্বর রাতে ভোপালের ইউনিয়ন কার্বাইডের কীটনাশক কারখানা থেকে বিষাক্ত মিথাইলআইসোসাইনেট গ্যাস উচ্চ তাপে জলের সঙ্গে মিশে যায়৷ কারখানার কর্মীদের কাছে এটা বন্ধ করার না ছিল কোন সাজসরঞ্জাম না ছিল জ্ঞান৷ ফলে সেই মারণ গ্যাস বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে৷ আশপাশের কয়েক হাজার ঘুমন্ত মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে৷ এদের মধ্যে ছিল বহু নারী ও শিশু৷ যাঁরা বেঁচে যায় তাঁরা চিরদিনের মত হয় পঙ্গু হয়ে যায়, না হয় পরবর্তিকালে ক্যান্সার ও অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হন৷সরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যা বলা হয় ৩৭৮৭ কিন্তু যেসব এন জিও দুর্গতদের জন্য লড়াই শুরু করে তাদের হিসেবে এই সংখ্যা হবে এর ৫-৬ গুণ বেশি৷

জাতীয় বিপর্যয় পরিচালন প্রতিষ্ঠানের সদস্য ডঃ চন্দন ঘোষ ডয়েচে ভেলেকে এই রায় সম্পর্কে বলেন,এতবড় বিপর্যয়ের নিরিখে এটা ন্যায়বিচার হয়নি৷শুরু থেকেই ব্যাপারটাকে যতটা গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল তা দেওয়া হয়নি৷ একটা উদ্দেশ্য এর পেছনে কাজ করে গেছে৷ এমন কী উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পর্যন্ত দুর্গতদের দেওয়া হয়নি৷ সাধারণ মানুষকে এজন্য আরো সোচ্চার হতে হবে৷ ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট ভবিষ্যতে এই ধরণের বিপর্যয় রোধে একটা নির্দ্দেশিকা প্রকাশ করেছে, সেটা ঠিকঠাক মানা হচ্ছে কিনা তা দেখার দায়িত্ব সরকারের৷ তবে আশার কথা, আগের তুলনায় মানুষ এখন অনেক বেশি সচেতন, বলেন ডঃ ঘোষ৷

প্রতিবেদনঃ অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুনদিল্লি

সম্পাদনাঃ সাগর সরওয়ার