1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

১,৬৫২ ভাষার দেশ ভারত

২৯ এপ্রিল ২০১০

না, শিরোনাম দেখে চমকে উঠবেন না, ভাববেন না ভুল করে লেখা৷ ভারতের ১৯৬১ সালের আদমশুমারিতে ১,৬৫২ টি ভাষা ও আঞ্চলিক ভাষাকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল৷ যদিও পরে তা কমিয়ে আনা হয়েছে৷ বর্তমান সংখ্যাটিও একটি দেশের জন্যে নেহাৎ কম নয়৷

https://p.dw.com/p/N97f
সবাই ভারতীয়, কিন্তু কার ভাষা কোনটি?ছবি: AP

প্রথমেই চলুন নতুন দিল্লীর আদালতে নিয়ে যাই আপনাদের৷ এই মাসে আইনজীবী গোভিন্দার সিং করেছেন এক অবিশ্বাস্য কাণ্ড৷ মানে অবিশ্বাস্য বলছি এই জন্য, যে এই কাজ আগে কেউ করার সাহস করেননি৷ গোভিন্দার আদালতে বিচারকের সঙ্গে কথা বলেছেন হিন্দি ভাষায়৷ অবাক হচ্ছেন, ভারতে হিন্দি ভাষাতেই তো কথা হবে৷ আপনার চিন্তা ঠিকই, কিন্তু ভারতের আদালতে সেটা হয় না, সেখানে বাকবিতণ্ডার আনুষ্ঠানিক ভাষা এখনো ‘ইংরেজি'৷

আগেই তো বলেছি, ভারতে স্বীকৃত ভাষার সংখ্যা ছিল ১,৬৫২টি৷ ২০০১ সালে এই ভাষার তালিকাকে আরেকটু অর্থবহ করে তোলা হয়েছে৷ দশ লাখ বা বেশি মানুষ কথা বলে এরকম ২৯টি ভাষাকে নির্বাচন করা হয়েছে৷ আর দশ হাজার মানুষ কথা বলে এরকম ১২২ টি ভাষাকে আলাদা করা হয়েছে৷ ২০০৪ সালে অবশ্য স্বীকৃত ভাষার এই তালিকা ছোট করে ২২টি করা হয়েছে৷ তবে, এখন নাকি আবার বেড়েছে চাপ, আরো অন্তত ৩৮ টি ভাষাকে আনুষ্ঠানিক তালিকায় যোগ করতে চলছে জোর তদবির৷

Indien Bombay Geschäftsfrau FBF
ভারতের নতুন প্রজন্ম অবশ্য ইংরেজি ভাষার দিকেই ঝুঁকছে (ফাইল ফটো)ছবি: picture-alliance / dpa

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এত ভাষার এই দেশে এমন কী কোন ভাষা নেই যেটি জুড়তে পারে সবাইকে মানে সব ভারতীয়কে? আপাতত, এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না৷ তবে প্রকৃত চর্চা যেটি হচ্ছে সেটিকে বলা যায়, ‘বহুভাষিক চর্চা'৷ সাংবাদিক জয় শঙ্করকেই ধরুননা৷ নিজে তিনি কেরালার লোক, যেখানকার ভাষা মালায়ালাম৷ অন্যদিকে, তাঁর সহধর্মিনীর এলাকা গুজরাট, ভাষা গুজরাটি৷ দু'জনের কেউই একে অপরের ভাষা বোঝেন না, তাই কাজ চালান হিন্দি আর ইংরেজি মিশিয়ে৷ তাদের যখন সন্তান হলো, তখন প্রশ্ন: কোন ভাষা শিখবে সে?

সন্তানের বয়স যখন চার, তখন শঙ্করের বাস বাঙ্গালোরে৷ যেখানকার স্থানীয় ভাষা আবার কানাড়া৷ ফলে উপায়ান্তর না দেখে, শঙ্কর ছেলেকে ভর্তি করিয়ে দিলেন ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে৷ তাঁর সন্তানের বয়স এখন ১৩ এবং সে হিন্দি ও ইংরেজি ভাষায় কথা বলে, আর মা-বাবা'র মাতৃভাষা এক অক্ষরও বোঝে না সে৷

ভারতের মধ্যবিত্তের অবস্থাটা এমনই৷ বহুভাষার এক জগাখিচুড়ি তৈরি করে নিচ্ছেন তারা৷ কারণ প্রতিযোগিতার বাজারে, কখন কোথায় চাকরি মিলবে কিংবা কখন কোথায় বাস করতে হবে তার তো ঠিক নেই, তাই সব ভাষাই একটু একটু জানলে খারাপ কী?

Flash-Galerie Szene am Bahnhof in Neu Delhi
২০০৪ সালে অবশ্য স্বীকৃত ভাষার এই তালিকা ছোট করে ২২টি করা হয়েছে (ফাইল ফটো)ছবি: flickr/dlisbona

আরেকটি প্রশ্ন বেশ ভাবাবে আপনাকে৷ সেটি হচ্ছে, ইংরেজি ভাষার ব্যবহার কোন দেশে সবচেয়ে বেশি? ভাবছেন তো অ্যামেরিকা, অথবা ব্রিটেন৷ আরো বাবা, অতদূরে যাচ্ছেন কেন? উত্তরটা ভারত৷ যদিও ঠিক কি ইংরেজি ভারতে চর্চা হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে৷ কারণ, ইংরেজির রক্ষক মানে খোদ ব্রিটিশ কাউন্সিল জানাচ্ছে, ভারতে ইংরেজি ভাষার ভালো শিক্ষকের সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত কম এবং ইংরেজি শেখায় এমন মানসম্পন্ন ইন্সটিটিউটও কম৷ তাই, যে ইংরেজি শিখছে ভারতের নতুন প্রজন্ম, তা তাদের ‘জাতে তোলার' বদলে, ডোবাতেই হয়তো বেশি ভূমিকা রাখবে!

শেষ করার আগে আরেকটি ছোট্ট তথ্য দেই৷ ভারতের সবচেয়ে বড় ভাষা কোনটি? এই প্রশ্নের উত্তর চোখ বুজেই দিতে পারবেন৷ হ্যাঁ, উত্তর হিন্দি৷ এবার পরের প্রশ্ন, তাহলে দ্বিতীয় বড় ভাষা কোনটি? চিন্তায় পড়লেন, আরে ধ্যাৎ, এটার উত্তর আরো সোজা, ‘বাংলা'৷ তবে, শতকের হিসেবে দু'ভাষার ব্যবধান অনেক, একটি ৪১ শতাংশ, অন্যটি ৮.১ শতাংশ৷ তাও বা কম কিসের!

প্রতিবেদক: আরাফাতুল ইসলাম

সম্পাদনা: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী