১৩ নিয়ে তাড়না
৫ এপ্রিল ২০১৪যীশুখ্রিষ্টের শেষ নৈশভোজনে বিশ্বাসঘাতক জুডাস বসেছিল ১৩ নম্বর আসনে, বাইবেলে তাই বলে৷ সেখান থেকেই নাকি তেরোর আতঙ্কের সূচনা৷ প্রথমে ধরা হতো, কোনো টেবিলে তেরোজনকে বসানোটাই অমঙ্গলজনক৷ পরে তেরো যুক্ত সব কিছুই আতঙ্ক ও ভীতির উৎস হয়ে ওঠে৷ স্ক্যান্ডিনেভিয়ার ভাইকিং যোদ্ধাদের কিংবদন্তিতে অপদেবতা ‘লোকি' হলেন ত্রয়োদশ দেবতা৷ ভাগ্য গণনার ‘ট্যারট' তাসের পাতাতেও তেরো নম্বর তাসটি হল – মৃত্যু৷
কোনো মাসের তেরো তারিখ শুক্রবারে পড়লে ইউরোপের মানুষদের ভীতি আবার অনেক বেড়ে যায়, কেননা যীশুখ্রিষ্টকে শুক্রবারে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল৷ অপরদিকে তেরো তারিখ শুক্রবার হলে সেদিন নাকি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে কম, কেননা মানুষজন এমন অশুভ দিনে সেদিন যাত্রা না করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করেন৷
কোনটা কাকতালীয় আর কোনটা কুসংস্কার, তাই বা কে বলবে? নাসা-র অ্যাপোলো তেরো চন্দ্রাভিযান রকেটের অক্সিজেন ট্যাংক বিস্ফোরিত হওয়ার পর তা বন্ধ করতে হয়৷ তার আগেই সংখ্যাবিদরা রকেট নিক্ষেপের দিন-তারিখ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, কেননা তারিখটা ছিল ৪-১১-৭০৷ সংখ্যাগুলো যোগ করলে দাঁড়ায়: ৪ + ১ + ১ + ৭ = ১৩! অক্সিজেন ট্যাংকটি ফাটেও ১৩ই এপ্রিল৷
সংস্কার যে কতদূর ছড়াতে পারে ও গড়াতে পারে, তার প্রমাণ: এয়ারলাইনগুলিকেও যাত্রীদের স্পর্শকাতরতার কথা মনে রেখে চলতে হয়; যেমন এয়ার ফ্রান্স গোত্রীয় বিমান সংস্থাগুলির প্লেনে ১৩ নম্বর বলে কোনো আসনের সারিই থাকে না৷ যুক্তরাষ্ট্রে অনেক বহুতল ভবনে তেরো তলা অনুপস্থিত৷ এমনকি কোনো কোনো বিমানবন্দরে বিমানে চড়ার তেরো নম্বর কোনো গেটই নেই৷
তবে তেরোর আতঙ্ক পশ্চিমেই বেশি প্রকট৷ এশিয়ার দেশগুলিতে অন্যান্য সংখ্যা নিয়ে চিন্তা, যেমন চীনে চার সংখ্যাটি অমঙ্গল ডেকে আনে, বলে লোকের বিশ্বাস৷ এই টেট্রাফোবিয়া অর্থাৎ চারের আতঙ্কের কারণ কিন্তু ভাষাগত: চীনা ভাষায় ‘চার'-এর উচ্চারণ অনেকটা ‘মৃত্যু' কথাটির মতো শোনায়৷ ফলশ্রুতি: চীনের অনেক অফিসের লিফটে ‘চার তলা' বলে কিছু পাওয়া যাবে না৷
তবে সংখ্যা মাত্রেই যে আতঙ্কের উৎস হবে, এমন কোনো কারণ নেই৷ উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে: ‘আট' সংখ্যাটি চীনা এবং জাপানি ভাষায় খুব পয়া, কেননা সংখ্যাটির উচ্চারণ নাকি ‘সমৃদ্ধি' কিংবা ‘সম্পদ' কথাটির সঙ্গে মেলে৷
এসি/এসবি (এপি)