1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘হিংলিশ’ নয় ‘ভারতীয় ইংলিশ’ এর সম্ভাবনাই বেশি

৪ মার্চ ২০১০

দক্ষিণ এশিয়ায় যে-ইংরেজিতে মানুষ কথা বলে তা বিবর্তিত হচ্ছে৷ কিন্তু বিষয়টি এমন নয় যে তা আলাদা একটি উপভাষার রূপ নিচ্ছে বা অন্যান্য মহাদেশের ইংরেজিভাষীরা তা বুঝতে পারবেন না৷

https://p.dw.com/p/MJEx
ভারতীয় বংশোদ্ভূত জার্মান ভাষাতাত্ত্বিক জয়ব্রত মুখার্জিছবি: picture-alliance/ dpa

জার্মানির একজন শীর্ষ ভাষাতাত্ত্বিক জয়ব্রত মুখার্জি এমনই মনে করেন৷ একইসঙ্গে তাঁর ধারণা হিন্দির সঙ্গে ইংরেজির মিশ্রণে ‘হিংলিশ' এর চেয়ে নতুন ইংরেজি ক্রিয়াপদ এবং ভাষার অন্যান্য মৌলিক সংযোজনের মধ্য দিয়ে যে ‘ভারতীয় ইংলিশ' এর প্রসার ঘটছে তার সাফল্য এবং সম্ভাবনাই বেশি৷

জার্মানির গিসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক ভারতীয় এবং দক্ষিণ এশিয়ার অন্য পাঁচ ধরণের ইংরেজির প্রায় ১০ লাখ শব্দ নমুনা নিয়ে কম্পিউটার বিশ্লেষণের সাহায্যে একটি গবেষণা করেন৷ উদ্দেশ্য, এই ইংরেজি ভাষার আঞ্চলিক প্রকরণগুলোর বিশিষ্টতা এবং অঞ্চলভেদে তাদের ব্যকরণের সামান্য পার্থক্যগুলো খুঁজে বের করা৷

ব্রিটিশ উপনিবেশের সঙ্গে ইংরেজি ভাষা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে৷ ভাষাতত্ত্ববিদরা বলেন, কর্তৃত্বশীল মান ইংরেজি বলে কিছু নেই৷ কিছুটা ভিন্নতাসহ সব রূপই পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে এবং যারা তা বলছে সেই মানুষদের জন্য সেটাই ‘সঠিক'৷

ইংল্যান্ডের ইংরেজির চেয়ে ভারতের ইংরেজি একটু ভিন্নভাবে ক্রিয়াশীল৷ ধরা যাক ‘প্রিপোন' শব্দটির কথাই, যা কিনা ‘পোস্টপোন' এর বিপরীত শব্দ৷ অন্য ইংরেজিভাষীরা এ শব্দটিই কখনো শোনেনি৷ অধ্যাপক মুখার্জি ব্যাখ্যা করছিলেন, ‘‘ব্রিটিশ ইংরেজিতে আপনাকে বলতে হবে ‘ব্রিং ফরোয়ার্ড ইন টাইম'৷ এতে বোঝা যাচ্ছে ভারতের ইংরেজিভাষীদের দৃষ্টিভঙ্গি অনেক বিশ্লেষণাত্মক৷ তারা ‘পোন' এর সঙ্গে ‘প্রি' উপসর্গটির মিশিয়ে এই ‘প্রিপোন' শব্দটি তৈরি করেছে৷ এখন এই প্রশ্নই ওঠা উচিৎ যে, কেন ব্রিটিশ ইংরেজিতে ‘প্রিপোন' শব্দটি নেই৷ এটাই তো অনেক সহজ৷''

মুখার্জি বলেন, ‘‘ভারতীয় ইংরেজিতে আপনি ভুরি ভুরি শব্দ পাবেন যা ডাবল-‘ই' দিয়ে শেষ হয়েছে৷ যেমন ‘রিওয়ার্ডি' অর্থাৎ যিনি ‘রিওয়ার্ড' পাচ্ছেন৷ ব্রিটিশ ইংরেজিতে এটা প্রচলিত নয় অথচ ভারতে বহুল প্রচলিত৷ তারা ভাবে ‘ডাবল-ই' ব্যবহারের সুযোগ আছে আর এই শব্দটা আছে তো আমি দু'টোকে মিলিয়ে এটা বানাতে চাই৷ এটা পুরোপুরিই যৌক্তিক৷''

ভারতীয় বংশোদ্ভূত হলেও মুখার্জি জার্মানিতে জন্মেছেন এবং শিক্ষালাভ করেছেন৷ মাত্র ৩৬ বছর বয়সে তিনি এখন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট বা প্রধান নির্বাহী৷ বিদ্যায়তনিক ভাষাতাত্ত্বিকদের মধ্যে মুখার্জি সেই দলে পড়েন যারা মনে করেন ভারতীয় ইংরেজি ‘স্থিতাবস্থায়' আছে৷

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, এর মানে এই নয় যে ভারতীয় ইংরেজি ‘ফসিল' হয়ে গেছে৷ ‘স্টেডি স্টেট' বা ‘স্থিতাবস্থা' শব্দবন্ধটি রসায়ন বিদ্যা থেকে নেওয়া হয়েছে৷ যার অর্থটা এরকম যে, এতে নতুন অনেক কিছু আসছে এবং অনেক কিছু চলেও যাচ্ছে, কিন্তু ভারসাম্যটা বজায় থাকছে৷ তিনি বলেন, ভারতীয় ইংরেজির নিজস্ব অনেক অদ্ভুত বিষয় আছে কিন্তু তা অন্যান্য ইংরেজির সঙ্গে ‘সাধারণ মৌলিকতা' বজায় রেখেছে৷ মুখার্জি বলেন, ভারতীয় ইংরেজিভাষীরা অন্য ইংরেজিভাষীদের সঙ্গে আদান-প্রদানের স্বাভাবিকতা ধরে রাখতে চান৷

অধ্যাপক মুখার্জি জানান, ‘‘সবচেয়ে কাছাকাছি অনুমানে বলা হয়ে থাকে ৫ কোটি সক্ষম ভাষাভাষী আছেন যারা ইংরেজি-মাধ্যম স্কুলে লেখাপড়া করেছেন এবং ‘মান ভারতীয় ইংরেজি'তে কথা বলতে পারেন৷''

হিন্দি ভাষায় ইংরেজির মিশেল দেওয়ার সাম্প্রতিক প্রবণতা সম্পর্কে কথা বলেন এই অধ্যাপক৷ তিনি বলেন, ‘টিকেট-ওয়ালা' এর মতো ভুরি ভুরি ‘হিংলিশ' শব্দের কথা বলা যাবে৷ একত্রে এই দুই ভাষার ব্যবহার এতাটাই বেশি যে একটি ‘যোগাযোগ ভাষা' হিসেবে ‘হিংলিশ' হিসেবে কথিত এই ধারার সৃষ্টি স্বাভাবিক৷ ব্রিটিনেও একই প্রবণতা আছে এবং সেখানে কিশোরকিশোরীদের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়া জনপ্রিয় শব্দগুলো একসময়ে ঠিকই মান ভাষায় ঢুকে পড়ছে৷

তবে, হিন্দি বা অন্য কোনো ভাষা থেকে না নিয়েই ভারতীয় ইংরেজিতে অনেকে অনেক দারুণ ক্রিয়াপদের উদ্ভবকে একটা ‘মৌলিক সৃষ্টি' বলে চিহ্নত করেন এবং একেই ভারতীয় ইংরেজি বিকাশের চালিকাশক্তি বলে মনে করেন অধ্যাপক মুখার্জি৷ তাঁর ধারণা ‘হিংলিশ' এর চেয়ে ‘ভারতীয় ইংলিশ'-এর সম্ভাবনাই বেশি৷

প্রতিবেদক : মুনীর উদ্দিন আহমেদ

সম্পাদনা : আব্দুল্লাহ আল-ফারূক