হারিয়ে যেতে বসেছে সাপুড়ে আর সাপের খেলা
এক সময় গ্রামে-গঞ্জে শোনা যেত বীণ৷ বীণ বাজিয়ে সাপুড়েরা সাপের খেলা দেখাতেন৷ সেই সাপুড়ে, সেই সাপের খেলা ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে৷
বাবুরাম সাপুড়ে
সাপুড়েদের নিয়ে রচিত হয়েছে অসংখ্য গল্প, ছড়া, কবিতা৷ সুকুমার রায়ের ‘বাবুরাম সাপুড়ে’ পড়েননি এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া দুস্কর৷
সাপই তাঁদের জীবিকার উৎস
গ্রাম-গঞ্জের সাপুড়েদের মূল কাজ সাপ ধরা আর সাপের নাচ বা খেলা দেখিয়ে মানুষকে আনন্দ দেয়া৷ খেলা দেখানো ছাড়া সাপের বিষ এবং চামড়া বিক্রি করেন তাঁরা৷ এভাবে যে অর্থ আসে তা দিয়েই চলে সাপুড়েদের সংসার৷
প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে
সাপুড়েদের সন্তানরাও সাধারণত সাপুড়েই হয়৷ জন্মের পর থেকেই ঘরে-বাইরে সাপ আর সাপের খেলা দেখে দেখে বড় হয় তারা৷ তাই একটু বড় হলে তারাও হাতে তুলে নেয় বীণ, দিনে দিনে তারাও হয়ে ওঠে পাকা সাপুড়ে৷
সাপে কাটলে সাপুড়ে
কয়েক বছর আগেও কাউকে সাপে কামড়ালে সাধারণ মানুষ ডাক্তারের কাছে না গিয়ে সাপুড়ে খুঁজতো৷ আজকাল বনাঞ্চল কমছে, সাপ কমছে, কমছে সাপুড়ে৷ পাশাপাশি চিকিৎসা বিজ্ঞানের দ্রুত অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে সাধারণের মাঝে সচেতনতাও বাড়ছে৷ ফলে সাপে কাটলে সাপুড়ে খোঁজার প্রবণতাও কমেছে অনেক৷
সাপ কি নাচে?
সাপুড়েরা দাবি করেন, তাঁরা বীণ বাজালে বীণের সুরে মোহিত হয়ে সাপ নাচতে শুরু করে৷ কিন্তু বৈজ্ঞানিকরা বলছেন, সাপের কান নেই৷ তাহলে? বীণ বাজালে বা চোখের সামনে হাত নাড়লেই সাপ দুলতে শুরু করে কেন? আসলে সাপের দৃষ্টিশক্তি প্রখর নয়৷ চোখের সামনে বীণ বা হাত যা-ই নাড়ানো হোক, তা ঝাপসাভাবে দেখে সে ভাবে, এই বুঝি শত্রু এলো৷ শত্রুর সম্ভাব্য আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করতেই তখন দুলতে শুরু করে সাপ৷
সাপের বন্ধু?
হিন্দুরা মনে করেন, সাপুড়েরা শিবের অনুসারী৷ ছবিতে শিবকে গলায় গোখরো সাপ জড়িয়ে বসে থাকতে দেখা যায়৷ সাপ যেন তাঁর সার্বক্ষণিক সঙ্গী৷ সাপুড়েদের বেলায়ও তাই৷ সাপ সত্যিকার অর্থেই তাঁদের সার্বক্ষণিক সঙ্গী৷
এখন দুঃসময়
দেশে দেশে বন্য প্রাণী রক্ষার উদ্যোগ জোরদার হচ্ছে৷ পরিণামে সাপুড়েদের প্রতিকুলতা বাড়ছে৷ ১৯৯১ সালে ভারতে এমন এক আইন করা হয় যে আইন অনুযায়ী, সাপ ধরে খেলা দেখানো অন্যায়৷ যত দিন যাচ্ছে দুঃসময় আরো ঘণীভূত হচ্ছে সাপুড়েদের৷
অন্য পেশার খোঁজে
এখনো যাঁরা বংশগত এই আদি পেশায় আছেন, তাঁদের অনেকেই আর সন্তানদের সাপুড়ে হিসেবে দেখতে চান না৷ নতুন প্রজন্মের অনেকেই সাপুড়ে না হয়ে নির্মাণশ্রমিক হয়ে বা রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করছেন৷