1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

উৎস কী?

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা৫ জুন ২০১৪

হবিগঞ্জের বনাঞ্চল থেকে উদ্ধার করা বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদের উৎস কী এবং এর সঙ্গে জড়িত নেপথ্যের ব্যক্তি কারা, তা এখনো জানা যায়নি৷ তবে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন এগুলো ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হতে পারে৷

https://p.dw.com/p/1CBys
Rapid Action Battalion RAB Spezialeinheit Militär Dhaka Bangladesh
ফাইল ফটোছবি: Getty Images/AFP

২০০৪ সালে চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র ধরা পড়ে৷ তদন্তে ঐ অস্ত্র ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অফ আসাম' বা উলফার বলে প্রমাণ হয়৷ এর সঙ্গে জড়িতদের বাংলাদেশের আদালত মৃত্যুদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন৷

এর আগে ২০০৩ সালে বগুড়ায় গুলি এবং অস্ত্রের বড় একটি চালান ধরা পড়ার পর তার তদন্তে অনেক তথ্য বেরিয়ে এসেছিল৷ তখনই জানা যায় ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের সাতছড়ি সংরক্ষিত বনাঞ্চল অস্ত্রপাচার এবং চোরাচালানের জন্য ব্যবহার করত৷ এই এলাকা ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা থেকে মাত্র ৩ কিমি দূরে৷ এই গুলি ও অস্ত্রের সঙ্গে ‘ন্যাশনাল লিবারেশন ফোর্স অব ত্রিপুরা' বা এনএলএফটি এবং উলফা জড়িত ছিল বলে তখনকার তদন্তে বেরিয়ে আসে

সাতছড়ি বনাঞ্চলেই একসময় ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘অল ত্রিপুরা টাইগার ফোর্স' বা এটিটিএফ-এর সদর দপ্তর ছিল বলে জানা গেছে৷ উলফা তাদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ পরিবহণ, পাচার ও চোরাচালানে এটিটিএফ-এর সাতছড়ি বনাঞ্চলের ঘাটি ব্যবহার করত৷

২০১৩ সালে বাংলাদেশ সরকার এটিটিএফ-এর প্রধান রণজিত দেববর্মণকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করে৷ ভারতের ত্রিপুরার আদালতে একাধিক মামলায় এখন রণজিত দেববর্মণের বিচার চলছে৷ তাঁর সঙ্গে উলফা নেতা পরেশ বড়ুয়ার ঘনিষ্ঠতা ছিল৷ ২০০৪ সালে চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের ঘটনায় পরেশ বড়ুয়াকে আদালত মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন৷ উলফার এই অস্ত্রের চোরাচালান মামলায় সেই সময়ের বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দু'জন মন্ত্রী এবং সামরিক ও বেসামরিক কয়েকজন শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তারও শাস্তি হয়েছে৷

উলফা নেতা পরেশ বড়ুয়া পলাতক আছেন৷ জানা যায় তিনি চীন-মিয়ানমার সীমান্তের টংচং এলাকার কোথাও অবস্থান করছেন৷

অতীতে সাতছড়ি বনাঞ্চলকে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ উলফা, এটিটিএফ এবং এনএলএফটি তাদের ট্রেনিং ক্যাম্প হিসেবেও ব্যবহার করত৷

মঙ্গলবার সাতছড়ি বনাঞ্চল থেকে র‌্যাব ২৫০টি অ্যান্টি-ট্যাংক রকেট, সমপরিমাণ চার্জার, ২০০ মর্টার সেল এবং ১১ হাজার গুলি ও গোলাবরুদ উদ্ধারের পর বুধবারও অভিযান চালায়৷ বুধবারের অভিযানে আরো ৮টি অ্যান্টি-ট্যাংক রকেট এবং ১৮৪টি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে৷ পাওয়া গেছে একটি সুরঙ্গ৷ সাতছড়ি বনে মোট সাতটি বাংকারের খোঁজ পাওয়া গেলেও অস্ত্র গোলাবারুদ পাওয়া গেছে একটি বাংকারে৷

র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান জানান, ‘‘বাংকারগুলো কমপক্ষে এক বছর আগে তৈরি করা হয়েছে বলে ধারণা করা যায়৷ আর অস্ত্র ও গোলাবারুদ পলিথিনে মোড়ানো ছিল৷ এখানে ত্রিপুরাকে স্বাধীন করা কেন প্রয়োজন তা নিয়ে লেখা একটি পুস্তিকাও পাওয়া গেছে৷ তবে এই ঘটনায় এখনো কাউকে আটক বা গ্রেফতার করা যায়নি৷''

তিনি জানান, ‘‘আমরা এখনো এইসব আগ্নেয়াস্ত্র এবং গোলাবারুদের উৎস সম্পর্কে জানতে পারিনি৷ জানতে পারিনি কারা এখানে এগুলো রেখেছে৷'' তদন্তে সব বেরিয়ে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন৷

তবে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুর রশিদ (অব.) ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘চট্টগ্রাম এবং বগুড়ায় এর আগে উদ্ধার করা অস্ত্র এবং গোলাবারুদের সঙ্গে হবিগঞ্জের অস্ত্র এবং গোলাবরুদের মিল আছে৷ এগুলো সামরিক অস্ত্র৷ এরমধ্যে রকেট লঞ্চার ছাড়াও বিমান বিধ্বংসী মেশিনগানের গুলিও আছে৷ আর এ থেকে সহজেই বোঝা যায় এগুলো ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপের৷''

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নিরাপত্তা এবং সন্ত্রাস বিরোধী চুক্তি হওয়ার ফলে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এখন আর বাংলাদেশের মাটিতে ঠাঁই পায় না৷ এর আগে তাদের অস্ত্রের চালান আটক ও শীর্ষ কয়েকজনকে গ্রেফতার করায় তারা চাপে পড়ে বাংলাদেশ ছেড়ে অন্য কোথাও আস্তানা গেড়েছে৷ তাঁর মতে, তারা সরে গেলেও তাদের অস্ত্র ও গোলাবারুদের মজুদ সরাতে পারেনি৷ হবিগঞ্জের গোলাবারুদ কমপক্ষে ৪/৫ বছরের পুরনো বলেই মনে হয়৷

এই নিরাপত্তা বিশ্লেষকের ধারণা বাংলাদেশের সিলেট এবং পার্বত্য এলাকার গভীর বনে এধরণের আরো মজুদ করা অস্ত্র এবং গোলাবারুদ থাকতে পারে৷

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুর রশিদ (অব.) বলেন, ‘‘বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্কতা ও তৎপরতার কারণেই হবিগঞ্জে অস্ত্র এবং গোলাবারুদ উদ্ধার হয়েছে৷ এই তৎপরতা আরো বাড়াতে হবে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য