স্পেনের পামপ্লোনায় ষাঁড় খেদা
উত্তর স্পেনের পামপ্লোনা শহর ‘ষাঁড় খেদার’ বা ‘বুল ফাইটিং’-এর জন্য বিখ্যাত৷ সন্ত ফিরমিনের সম্মানে এই ন’দিনব্যাপী উৎসবে খোলা রাস্তা দিয়ে বুলফাইটিং-এর ষাঁড়দের তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় – একটি রক্তাক্ত ও বিতর্কিত প্রথা৷
সানফারমিনেস – সন্ত ফিরমিনের উৎসব
উৎসবটা যে কেন সন্ত ফিরমিনের নামে, তা পামপ্লোনার বাসিন্দারাও ঠিক জানেন না৷ সন্ত ফিরমিন এই শহর বা অঞ্চলের রক্ষাকর্তা নন; তাঁর পরবের দিনটিও আসে অক্টোবর মাসে; তবে সন্ত ফিরমিনের জন্ম এখানেই৷ চতুর্দশ শতাব্দী থেকে পামপ্লোনায় সানফারমিনেস বা সন্ত ফিরমিনের উৎসব চলে আসছে৷
গলিঘুঁজি দিয়ে দৌড়
মনে রাখা দরকার, এই ষাঁড়গুলোর এক একটির ওজন ৬০০ কিলোগ্রাম৷ পামপ্লোনার গলিঘুঁজি দিয়ে তাদের তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বুলফাইটিং-এর অ্যারেনার দিকে – যেখানে সন্ধ্যায় বুলফাইটার বনাম ষাঁড়ের লড়াইতে এই প্রাণীগুলির জীবন শেষ হয়৷ দু’লাখ বাসিন্দার শহর পামপ্লোনায় প্রতিবছর ১৫ লাখ মানুষ আসেন ষাঁড় খেদা দেখতে৷
দুঃসাহস
দর্শক আর ষাঁড়গুলোর মধ্যে বেড়া দেওয়া আছে, যাতে কেউ আহত না হয় – আবার পামপ্লোনার ষাঁড় খেদার মজাই হলো এই যে, ষাঁড়গুলোই আসলে মানুষকে খেদিয়ে নিয়ে যাবে৷ বিশেষ করে ছেলে-ছোকরারা বেড়া টপকে পথে নামে, ষাঁড়গুলোর নামানো মাথা আর ব্যাঁকানো শিং-এর সামনে কিছুদূর দৌড়ে, তারা যে কতটা সাহসী, সেটা প্রমাণ করে দেবার জন্য৷
তিন মিনিটের দৌড়
উৎসবের চলাকালীন প্রত্যেক দিন সকাল আটটায় সন্ত ফিরমিনের নামে প্রার্থনা ও গানের পর ষাঁড়গুলোকে ছেড়ে দেওয়া হয়: ৮২৫ মিটারের পথ যেতে – বা দৌড়তে – ষাঁড়েদের মিনিট তিনেকের বেশি লাগে না৷
মরণ খেলা
প্রতিবারই কোনো না কোনো দুর্ঘটনা ঘটে৷ এ বছর ষাঁড় খেদার প্রথম কয়েক দিনেই বহু মানুষ আহত হয়েছেন৷ পামপ্লোনার ষাঁড় খেদায় শেষবার কারো প্রাণ হারানোর ঘটনা ঘটেছে ২০০৯ সালে৷ ১৯১১ সালে যাবৎ সন্ত ফিরমিনের ষাঁড়েদের দৌড়ে প্রাণ হারিয়েছেন মোট ১৫ জন মানুষ৷
চোট তো লাগবেই
২০১৭ সালের ‘বুল রান’ বা ষাঁড়ের দৌড়ে শুধুমাত্র প্রথম দিনেই চোট পেয়েছেন পাঁচজন মার্কিনি, তিনজন স্প্যানিশ ও দু’জন ফরাসি পর্যটক৷ সকলকেই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হয়েছে৷ দু’জন মার্কিন টুরিস্টকে শিং দিয়ে ফুঁড়ে দিয়েছে ষাঁড়েরা; বাকিরা পামপ্লোনার প্রাচীন অংশের সংকীর্ণ, পাথর-বসানো গলি দিয়ে ষাঁড়েদের সঙ্গে দৌড়নোর সময় চাপে পড়ে কিংবা পড়ে গিয়ে চোট পেয়েছেন৷
‘জীবজন্তুকে কষ্ট দেওয়াটা খেলা নয়’
পামপ্লোনার ষাঁড় খেদার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দানা বাঁধছে বৈকি৷ এ বছর পামপ্লোনার পৌরভবনের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন পশুপ্রেমীরা৷ ষাঁড়েরা দৌড়তে অভ্যস্থ নয়; রাস্তার পাথরের ওপর তাদের খুর পিছলে যায়, ফলে তারা পড়ে গিয়ে চোট পায়: আবার সন্ধ্যায় এই চোট পাওয়া জীবগুলোকে হত্যা করা হয় – একে খেলা বা সংস্কৃতি বলে মানতে রাজি নন তারা৷