1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

স্কুল শিক্ষায় মেয়েরা পিছিয়ে

১২ জুন ২০১০

সারা বিশ্বে, বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরাই বেশি স্কুলে যাচ্ছে৷ আশার কথা বৈকি ! কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ মাধ্যমিক স্তর শেষ হওয়ার আগেই বেশির ভাগ মেয়ে স্কুলের পাট চুকিয়ে দিচ্ছে৷ কেন ?

https://p.dw.com/p/Np6G
ফাইল ফটোছবি: AP

জাতিসংঘের মিলেনিয়াম লক্ষ্যমাত্রার অন্যতম লক্ষ্য হল ২০১৫ সালের মধ্যে প্রতিটি দেশের শিশুদের জন্য অন্ততপক্ষে প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা৷ জাতিসংঘের ‘ইউ এন গার্ল্স এডুকেশন ইনিশিয়েটিভ' গত দশ বছর ধরে চেষ্টা করছে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর সরকারকে উদ্বুদ্ধ করতে, যেন প্রতিটি শিশু প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করাতে পারে৷ সেই উদ্যোগকে বাস্তবে পরিণত করতে হাতে নেওয়া হয়েছে বেশ কিছু পদক্ষেপ৷

জাতিসংঘের বেশ কিছু জরিপ অনুযায়ী গত দশকে পূর্ব এবং মধ্য ইউরোপ সহ এশিয়া, এবং দক্ষিণ আমেরিকায় ২০০৬ সাল পর্যন্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লিঙ্গ বৈষম্য দূর করা সম্ভব হয়েছে৷ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা আসছে বেশি৷ জানালেন, ইউনিসেফের পরিচালক এ্যান্থনি লেক৷ তবে সব দেশই যে লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে সক্ষম হয়েছে তা কিন্তু নয়৷ মাধ্যমিক স্তরে দেখা গেছে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের সংখ্যা কম৷ উত্তর আফ্রিকা এবং পূর্ব এশিয়ায় প্রায় সাড়ে সাত কোটি মেয়ে স্কুল যাওয়া বন্ধ করে বাড়িতে বসে রয়েছে৷

গত ১৮ই মে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ্যান্থনি লেক বলেন, যে কোন দেশের উন্নয়নের জন্য মেয়েদের শিক্ষিত করে তোলা আবশ্যক৷ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে মেয়েদেরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে এবং শুধুমাত্র শিক্ষার মাধ্যমেই তা সম্ভব৷

মূল কারণ কী কী ?

প্রশ্ন উঠতে পারে, মেয়েরা স্কুলে যাচ্ছে ছেলেদের চেয়ে বেশি – কিন্তু মাধ্যমিক স্তর শেষ করার আগেই তাদের আর স্কুল চত্বরে দেখা যাচ্ছে না৷ কেন ? কারণগুলো কী কী ? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রধান ড. গীতি আরা নাসরিন বললেন, ‘‘মূল কারণগুলো বিভিন্ন দেশ অনুযায়ী বিভিন্ন রকমের হতে পারে৷ আমি মনে করি প্রধান একটা কারণ হল – সবসময়ই মনে করা হয় যে মেয়েদের জন্য এত শিক্ষা জরুরি নয়৷ বিভিন্ন দেশে আমরা দেখতে পাই যে, পরিবারের ছেলেদের মূল আয় উপার্জনকারী হিসেবে দেখা হয়৷ আর মেয়েদের দেখা হয় দ্বিতীয় আয় উপার্জনকারী হিসেবে৷ তো তার ফলে ছেলেদের জন্য শিক্ষা যতটা প্রয়োজনীয় বলে মনে হতে পারে একটা মেয়ের জন্য ততটা প্রয়োজনীয় বলে মনে করা হয় না৷এছাড়া একটি ছেলে সামাজিক স্থান এবং প্রতিপত্তির দিক থেকে অনেক ওপরে থাকতে হবে – এই বিশ্বাসও ভীষণভাবে প্রচলিত৷ মেয়েরও বিভিন্ন দেশে নানা রকমের সামাজিক স্থানে কাজ করে কিন্তু তারা এমন সব পর্যায়ে কাজ করে যেখানে তাদের এতটা পড়াশোনা না করলেও চলে৷''

সরকার এবং সমাজের দায়িত্ব

বিভিন্ন দেশের ওপর জরিপ চালিয়েছে জাতিসংঘ৷ জানতে চেয়েছে, কোন দেশে কত মেয়ে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করেছে এবং সরকার তা প্রতিহত করতে কোন ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে৷ রুয়ান্ডায় ১৪ শতাংশ মেয়ে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করেছিল এবং বিভিন্ন সরকারি উদ্যোগের কারণে সম্প্রতি তা দুই শতাংশে এসে নেমেছে৷ সরকার মেয়েদের জন্য ৯ বছর অবৈতনিক শিক্ষার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে৷ জানান রুয়ান্ডার শিক্ষামন্ত্রী মাটিয়াস হারেবামুংগু৷ তাহলে কি সরকার চাইলেই এই চিত্র বদলাতে পারে?

ড. নাসরিন আরো জানালেন, ‘‘ আমরা দেখবো যে পলিসি মেকিং লেভেল বা উচ্চতর জায়গায় বা একাডেমিয়াতে এবং শীর্ষ স্থানীয় জায়গাগুলিতে – যে সব দেশের নাম উল্লেখ করা হয়েছে – সেসব জায়গায় শীর্ষ স্থানে এখনো ছেলেরা বসে৷ এবং এই জায়গাটাতে সমাজ থেকে শুরু করে, পলিসি মেকাররাও মনে করেন যে – এই জায়গাগুলিতে ছেলেদেরকেই যেতে হবে৷ কিন্তু এই জায়গাগুলিতে সাধারণত যে কোন মেয়ে যাবে বলে আমরা চিন্তা করিনা৷ কাজেই একসময় যেয়ে নানা কারণে পড়াশোনা একটি মেয়ের জন্য আর ততটা জরুরি মনে হয় না৷''

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, শুধুমাত্র শিক্ষিত হলেই হবে না – সেই শিক্ষার যথাযথ মান থাকা চাই৷ স্কুলে শিক্ষার মান যথেষ্ট উন্নত না হলে কোন ছেলে-মেয়েই বেশিদিন স্কুলে যাবে না বা স্কুলে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে – জানান ‘সুইডিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন এজেন্সি'র উপ প্রধান ডেভিড উইকিং৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের প্রশ্ন করতে হবে, কী শেখাচ্ছি ? কেন শেখাচ্ছি ? বাচ্চাদের আগ্রহ কোথায় ? কারণ যে সব বাচ্চারা স্কুল ছেড়ে দেয়, তাদের অনেকেই পরবর্তীতে বিভিন্ন অপরাধ চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে৷

মেয়েদেরকে বেশি করে স্কুলে পাঠাতে হবে – প্রতিটি মেয়ে যেন অন্তত মাধ্যমিক স্তরটি শেষ করতে পারে৷ কীভাবে তা সম্ভব ? কার এগিয়ে আসা উচিৎ ? ড. নাসরিনের উত্তর, ‘‘ সব পর্যায়ের সদিচ্ছা৷ ''

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন