1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সোমালিয়ায় গৃহযুদ্ধে আহতদের চিকিৎসায় রেডক্রস

৮ মার্চ ২০১১

সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিশুর মেদিনা হাসপাতালে গৃহযুদ্ধের শিকার মানুষদের দেখাশোনা করছেন রেডক্রসের কর্মীরা৷ রোগীদের তিন ভাগের এক ভাগই নারী ও শিশু৷ তাদের নিখরচায় চিকিৎসা পাওয়ার একমাত্র ভরসা এই মেদিনা হাসপাতালটি৷

https://p.dw.com/p/10V3x
মেদিনা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন একজনছবি: AP

১২ বছরের আডেন আলি জামা নিস্তেজ হয়ে শুয়ে আছে মেদিনা হাসপাতালের এক বেডে৷ ক্লান্ত দৃষ্টি কড়িকাঠের দিকে৷ সে জানায়, ‘‘আমি তখন অন্যান্য বাচ্চাদের সঙ্গে বাকারা বাজারে ছিলাম, যখন গ্রেনেডটি এসে আমার গায়ে লাগে৷ তারপর থেকে আমি আর নড়চড়া করি না৷ তাই তারা আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে৷''

গ্রেনেডের আঘাতে আডেনের গলা থেকে পা পর্যন্ত অবশ হয়ে গেছে৷ বাকারা বাজারে বাবাকে ছোটখাট জিনিস বিক্রি করার কাজে সাহায্যের জন্য গিয়েছিল আডেন৷ সে সময় গ্রেনেড বিস্ফোরণের প্রচণ্ড আঘাত লাগে তার শরীরে৷ বাবা সাইদ আলি জামা ছেলের বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে অনবরত তার হাত পা ধরে ধরে দেখছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘ও শুধু চোখ আর মুখই নাড়াতে পারে৷ বাকি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ অবশ৷ মলমূত্র ভেসে যাচ্ছে চারিদিকে৷ খুব বেশি আশা করছিনা আমি৷ তবে যত দিন সে বেঁচে থাকবে, তাকে তো বাদ দিতে পারিনা৷ ও আমার বড় সন্তান৷ কেউ তার বিকল্প হতে পারবেনা৷''

Somalia Unruhen in Mogadishu Verletzter
চিকিৎসা পাবার আশায় অপেক্ষাছবি: AP

মোগাদিশুর দক্ষিণে মেদিনা হাসপাতালে নিখরচায় চিকিৎসা পাচ্ছে আডেন৷ রেডক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটির আর্থিক সহায়তায় বিশেষ করে যুদ্ধে আহতদের চিকিৎসার দিকে লক্ষ্য রাখা হয়েছে এই হাসপাতালে৷ রেডক্রসের পক্ষ থেকে একজন ক্যামেরাম্যানকে যুদ্ধ ক্ষেত্রে অবস্থিত এই হাসপাতালে পাঠানো সম্ভব হয়েছে৷ এই ক্যামেরাম্যান সেখানকার মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রামকে ক্যামেরায় ধরে রেখেছেন৷ আডেনের ঘটনাটাও বর্ণনা করেছেন তিনি৷ সোমালিয়ার ডাক্তরারা ৩২ হাজারেরও বেশি যুদ্ধাহতকে মেদিনা হাসপাতালে অপারেশন করেছেন৷ তিন ভাগের এক ভাগই নারী ও শিশু৷ গত তিন বছরে রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে৷ রেডক্রসের তথ্য অনুযায়ী ২০ বছরের গৃহযুদ্ধে ১০ লক্ষেরও বেশি মানুষ মারা গেছে৷ যত বেশি দিন ধরে এই সংঘর্ষ চলতে থাকবে, সোমালিয়ানদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোও ততই কঠিন হয়ে উঠবে৷ রেডক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটির মুখপাত্র বেনজামিন ভারেন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘চিকিৎসার দিকে নজর রাখছে শুধুমাত্র সাহায্য প্রতিষ্ঠানগুলি৷ প্রয়োজনের তুলনায় খুব কমই সাহায্য করতে পারছে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলি৷ বলা যায় চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক৷''

কোনো আশার আলো দেখতে না পেয়ে সোমালিয়ার অনেক ডাক্তার ও নার্স দেশ ছাড়ছেন৷ তাদেরই একজন ডাঃ মোহাম্মদ ইউসুফ৷ ইটালিতে ডাক্তার হিসাবে থিতু হয়েছিলেন তিনি৷ নয় বছর আগে আবার মোগাদিশুতে ফিরে আসেন ইউসুফ৷ এখন তিনি মেদিনা হাসপাতালের পরিচালক৷ তাঁর সহকর্মীদের সঙ্গে দিন রাত যুদ্ধাহতদের অপারেশন করে যাচ্ছেন তিনি৷ ডাক্তার ইউসুফের কাছে একজন রোগী কোন পক্ষের বা গোত্রের সেটা আসল কথা নয়৷ আসল কথা হল রোগীকে সুস্থ করে তোলা৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘আমরা রোগীদের জিজ্ঞেস করিনা, কোত্থেকে তিনি এসেছেন এবং কী তিনি করেন৷ আমরা প্রতিটি রোগীর চিকিৎসা করি, যিনি আমাদের কাছে আসেন৷ ডাক্তার হিসাবে এটাই আমাদের কর্তব্য৷''

Somalia Kämpfe
আহত একজনকে মেদিনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছেছবি: AP

সোমালিয়ায় সাহায্য প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য সংঘর্ষরত জাতি গোষ্ঠীগুলির মধ্যে সন্দেহ বা ক্রোধ জাগিয়ে তোলা রীতিমত বিপজ্জনক৷ সেজন্য সব দলের সঙ্গেই আস্থার সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায় রেডক্রস৷ এ প্রসঙ্গে বেনজামিন ভারেন জানান: ‘‘সব দল ও গোত্রের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে৷ তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে, আলোচনা করতে হবে৷ অন্য দিকে নিজেদের কাজকর্মেও স্বচ্ছতা থাকতে হবে৷ নিজেদের গোপন কোনো এজেন্ডা রয়েছে এরকম ধারণা যেন মানুষের মনে যেন জেগে না ওঠে৷''

শুধু রাজনৈতিক অবস্থাই নয় ক্রমবর্ধমান অপরাধপ্রবণতাও সাহায্য প্রতিষ্ঠানগুলির কাজকর্মে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে৷ কর্মীদের অপহরণ করা, জোর করে চাঁদা আদায় করা এসবের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে রেডক্রস বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করছে৷ বেনজামিন ভারেন বলেন, ‘‘রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট অস্ত্রধারী পাহারাদারের ব্যবস্থা করেছে৷ কর্মীরাও সতর্ক হয়ে চলাফেরা করেন৷ ভুল সময়ে ভুল জায়গায় থাকাটা পরিহার করেন৷''

লুটতরাজের হাত থেকে রক্ষার জন্য মেদিনা হাসপাতালও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে৷ ডাঃ মোহাম্মদ ইউসুফ অবশ্য এক্ষেত্রে কোনো আশার আলো দেখছেন না৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘টানেলের শেষ প্রান্তে কোনো আলোক রশ্মি দেখা যাচ্ছেনা৷ সমস্যার কোনো সমাধান নেই৷ বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠী যতই যুদ্ধে লিপ্ত হচ্ছে, ততই দূরত্ব বাড়ছে তাদের মধ্যে৷ এক সাথে বসে আপোশ মীমাংসা করার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছেনা৷ শুধু তাহলেই পালিয়ে যাওয়া মানুষরা আবার তাঁদের বাড়ি ঘরে ফিরে আসতে পারবে৷''

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল ফারূক