সোনারগাঁওয়ে কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব

সোনারগাঁও লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন চত্বরে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয় মাসব্যাপী এ মেলা৷মেলাটি ১৯৭৬ সাল থেকে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে৷ হারাতে বসা লোকজ ঐতিহ্যকে পুনরুদ্ধার ও নতুন প্রজন্মকে এর সঙ্গে পরিচিতি করে তুলতেই এ আয়োজন৷

২০১৮ সালের সোনারগাঁও লোক ও কারুশিল্প মেলার শুরু হয়েছিল ১৪ জানুয়ারি, শেষ হলো গতকাল, অর্থাৎ ১২ ফেব্রুয়ারি৷ প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলেছে মেলা৷

সোনারগাঁও লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন চত্বরের আছে ‘লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর’৷ এগারোটি গ্যালারিতে এ জাদুঘরে প্রায় চার হাজার তিনশটিরও বেশি লোকসংস্কৃতির নিদর্শন সংরক্ষিত আছে৷

এবারের লোক ও কারুশিল্প মেলায় দেশের নানান প্রান্ত থেকে শিল্পীরা হাজির হয়েছেন তাঁদের ঐতিহ্যবাহী সব শিল্পকর্ম আর সাংস্কৃতিক উপাদান নিয়ে৷ এবারের মেলায় মোট ১৮০ টি স্টলে স্থান পেয়েছে৷

লোক কারুশিল্প মেলা প্রাঙ্গণে দেখা গেছে সোনারগাঁওয়ের ঐতিহ্যবাহী কাঠের পুতুল আর দারুশিল্প৷ এছাড়াও নরসিংদীর পাটের শিকা, বিক্রমপুরের শীতল পাটি, রংপুররের শতরঞ্জি, ঠাকুরগাঁওয়ের শোলা শিল্প, রাজশাহীর শখের হাড়ি, নকশি পাখা, সোনারগাঁওয়ের পটচিত্র, টেপা পুতুল, যশোরের নকশি কাঁথাও ছিল মেলায়৷

কারুশিল্প মেলায় দর্শনার্থীরা ধামরাইয়ের তামা, পিতল আর কাঁসা শিল্পের নিদর্শনও দেখেছেন৷ আরো দেখেছেন কিশোরগঞ্জের টেরাকোটা আর টাঙ্গাইলের বাঁশের শিল্পকর্ম৷

লোক কারুশিল্প মেলার স্টলগুলোতে এই শিল্পীরা তাঁদের পণ্যসামগ্রী শুধু বিক্রিই করেননি, পাশাপাশি স্টলে বসেই সেসব তৈরির কৌশলও দেখিয়েছেন দর্শনার্থীদের৷

ঐতিহ্যবাহী জামদানির জন্য বিখ্যাত সোনারগাঁও৷ জামদানি শাড়ি তৈরির তাঁতও ছিল একটি স্টলে৷ এছাড়া জামদানি বিক্রির কয়েকটি স্টলও ছিল মেলায়৷ জামদানি তৈরির কলাকৌশলও দেখেছেন দর্শনার্থীরা৷

ঐতিহ্যবাহী মুড়ি-মুড়কি ছাড়া কি আর মেলা হয়? লোক ও কারুশিল্প মেলায় তাই বেশ কিছু মুড়ি-মুড়কি, মিঠাই, মুরালি আর পিঠে-পুলির স্টলও ছিল৷

কারুশিল্প মেলার লোকজ উৎসবে প্রতিদিনই দেখানো হয়েছে নানান গ্রামীণ খেলা৷ উল্লেখযোগ্য খেলাগুলো হলো ওপেনটি বায়োস্কোপ, কাবাডি, বৌচি, দাড়িয়াবান্ধা, মোরগ লড়াই ইত্যাদি৷

লোক ও কারুশিল্প মেলার অন্যতম আকর্ষণ পালাগান, বিয়ের গান, বাউল গান, জারি, সারি, মুর্শিদী, মারফতি, লালন, হাসনের গানসহ লোকসঙ্গীতের বিশাল আয়োজন৷ প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত অবধি মেলার মঞ্চে চলেছে এসব গানের আসর৷