1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সেল্ফি তুলিয়া ‘পশু' হইবেন না

৬ অক্টোবর ২০১৬

ছাত্রলীগ নেতার চাপাতির কোপে ক্ষতবিক্ষত খাদিজার পাশে দাঁড়িয়ে সেল্ফি তুলেছেন আওয়ামী লীগের দুই নেত্রী৷ খবরটি পড়ে কোরবানির ঈদের একটা ছবি মনে পড়ে গেল৷ সেই ছবি দেখে মনে হয়েছিল সেল্ফি তুলতে গিয়ে কিছু মানুষ যেন ‘পশু' হয়ে যায়৷

https://p.dw.com/p/2Qw6w
ভারতে গরুর সাথে সেল্ফি তুলছেন
ছবি: Getty Images/S.Panthaky

হুমায়ূন আহমেদ অবশ্য এক নাটকে মানুষকে পশুর সঙ্গে তুলনা করে পশুকে লজ্জা না দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন৷ তিনি মনে করতেন, কিছু মানুষ এতটাই নির্মম এবং বিবেকবর্জিত যে তারা আসলে পশুর চেয়েও অধম৷ আবার বহুব্রীহি নাটকে তিনি টিয়াপাখিকে দিয়ে বলিয়েছিলেন, ‘তুই রাজাকার'৷ রাজাকার শব্দটি তখন থেকে আগের চেয়ে অনেক বেশি ঘৃণা প্রকাশক৷ সবাইকে ‘রাজাকার' নিশ্চয়ই বলা উচিত নয়৷ তবে অনেক মানুষের কার্যকলাপ যে পশুকেও লজ্জায় ফেলতে পারে সে বিষয়ে প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে আমি সম্পূর্ণ সহমত৷

গত কোরবানির ঈদে দু'টি সেল্ফি দেখে গা শিউরে উঠেছিল৷ এক তরুণ তার সঙ্গীদের নিয়ে একটি গরু কোরবানি দেয়ার পর সেই গরুর পিঠে বসেই সেল্ফি তুলেছিলেন৷ আরেক সেল্ফিতে ছিল সেই তরুণের পরিবারেরই কয়েকজন শিশু-কিশোর-কিশোরী৷ সেল্ফি তোলার আগে তারাও সেই রক্তাক্ত, মৃত গরুটির ওপরেই চেপে বসেছিল৷ ‘সুস্থ' সাংবাদিকতার নীতি বহির্ভূত বলে বহুল আলোচিত সেই সেল্ফি দু'টো এখানে প্রকাশ করা হলো না৷

তবে আওয়ামী লীগের এমপি সাবিনা আক্তার তুহিন এবং যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ অপু উকিলের সেল্ফি গণমাধ্যমে বড় খবর হিসেবেই প্রকাশিত হয়েছে৷

স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে তোলা স্বাভাবিক কোনো সেল্ফি সেটা নয়৷ আওয়ামী লীগের দুই নেত্রী তাঁদের এক সঙ্গীকে নিয়ে সেল্ফিটি তুলেছেন এক ছাত্রলীগ নেতার উপর্যুপরি চাপাতির কোপে আহত কলেজ ছাত্রী খাদিজা বেগম নার্গিসের শয্যার পাশে দাঁড়িয়ে৷ খাদিজাকে গত সোমবার সিলেটের এমসি কলেজের মসজিদের পাশের রাস্তায় চাপাতি দিয়ে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সম্পাদক বদরুল আলম৷ মুমূর্ষু খাদিজা এখন ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন৷ খাদিজা যখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন তখন তাঁর পাশে আওয়ামী লীগ নেত্রীদের সেল্ফি তোলার বিষয়টিকে অনেকে খুব স্বাভাবিকভাবেই ভালোভাবে নিতে পারেননি৷

সরকারদলীয় দুই নেত্রীর মানবিক মূল্যবোধ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সবাই৷ সমালোচনার মুখে অপু উকিল সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন , ‘‘ছবি তোলা একেবারেই উচিত না, এই ঘটনার সাথে আমি জড়িত না, আমি ছবি তুলিনি এবং আপলোড দেইনি৷ যারা করেছে তাদেরও কোনো অশুভ উদ্দেশ্য ছিল না৷ খাদিজার পাশে দাঁড়ানের জন্যই হয়ত তারা এটা করেছে৷''

সেল্ফিটি প্রথমে সাবিনা আক্তার তুহিন এমপি-র ফেসবুক পাতাতেই প্রকাশ করা হয় ৷ তীব্র সমালোচনার মুখে তিনিও ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘‘আমার গতকালের স্ট্যাটাসের জন্য যদি আমার কোনো ভুল হয়ে থাকে এবং কেউ মর্মাহত হয়ে থাকেন আমি এ ব্যপারে দুঃখিত৷''

তিনি জানান, একটি ভুলবোঝাবুঝি দূর করতেই এক ছোট ভাইকে দিয়ে ছবিটি তুলিয়েছিলেন তিনি৷ তাঁর দাবি, খাদিজা মারা গেছে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল৷ তাঁর এক বান্ধবীও নাকি ‘বোন খাদিজা, ক্ষমা করিস' লিখে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন৷ ওই গুজব মিথ্যে প্রমান করতেই নাকি সেল্ফিটি তোলা হয়৷ সাবিনা আক্তার তুহিনের ভাষায়, ‘‘আমাদের ছবি দেয়ার উদ্দেশ্য কেবল আমরা নারী সমাজ খাদিজার পাশে আছি এটা বোঝানোর জন্য আর ও বেঁচে আছে এটা জানানোর জন্য৷ আমার ফেসবুকে বদরুলের ফাঁসি চেয়ে নির্মম ঘটনার নিন্দা করে সট্যাটাসও দেয়া হয়েছে৷ আমার যদি ভুল হয়ে থাকে তবে আমি ক্ষমা পার্থী৷ আমরা সব নির্যাতিত নারী সমাজের পাশে আছি, থাকবো৷ এটা দেয়া যদি আমার সাংবাদিক ভাইদের কাছে দৃষ্টিকটু হয়ে থাকে তবে আমি আন্তরিক দুঃখিত৷'' 

আশীষ চক্রবর্ত্তী
আশীষ চক্রবর্ত্তী, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Henriksen

কিন্তু তারপরের বাক্যগুলোতে একরকম ক্ষোভ নিয়ে আওয়ামী লীগের তরুণ নেত্রী লিখেছেন, ‘‘আমরা যারা রাজনীতি করি তাদের চিন্তা-ভাবনায় যত সততাই থাকুক আমাদের দোষ তো খুঁজে বের করতে হবে, এটাই তো স্বাভাবিক৷ আমি মনে করি, যা কিছু হয়েছে মঙ্গলের জন্য, অনেক কিছু আবেগ থেকে না করে চিন্তা ভাবনা করে করতে হবে৷ খাদিজার ওখানে গিয়ে আবেগী হয়ে আমরা আছি ওর পাশে বদরুল কে ধিক্কার জানাই এটা বোঝানোর জন্য৷ সাংবাদিকরা যে লিখেছে আমি সাংবাদিক পরিবারের মানুষ আমার তো জানা উচিত ছিল খবরের শিরোনাম তো উনারা খুঁজবেন, আমি কেন রসদ দিবো? আবেগ দিয়ে বিবেচনা না করে মাথা খাটিয়ে চলতে হবে৷ কেউ যদি কাজ করে, সম্মোলচনা তারই বেশি হয়৷ কালকে পাশে গিয়ে তার পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার না করে ঘরে বসে তার জন্য বড় করে স্ট্যাটাস দিলেই তো হতো৷ সংসদে ঢোকার আগ মুহূর্তে গেলাম লিপস্টিক কেন দিয়ে গেলাম, এটাও তো দোষ৷ সব কিছুর পর এটাই বলবো, আমিই দায়ী, আমার একক দায়িত্ব৷''

দেশের সচেতন এবং দায়িত্বশীল নাগরিকদেরই সংসদ সদস্য হওয়ার কথা৷ রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বেও অনুকরণীয় ব্যক্তিদেরই আসা উচিত৷ সাবিনা আক্তার তুহিন এবং অপু উকিল খাদিজার ওপর হামলা চালানো ছাত্রলীগ নেতার বিচার দাবি করে থাকলে নিশ্চয়ই খুব ভালো কাজ করেছেন৷ খাদিজার পাশে দাঁড়ানোও নিশ্চয়ই প্রশংসনীয়৷ তবে দেখতে গিয়ে অচেতন এক রোগীর পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে তা আবার প্রচার করা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত বা কাম্য নয়৷

দুই আওয়ামী লীগ নেত্রীর সেল্ফি দেখে কিন্তু কোরবানির ঈদের সময় গরুর পিঠে বসে ছবি তোলা ওই লোকগুলোর কথাই মনে পড়েছে৷ অপু উকিল, সাবিনা আক্তার তুহিন, মুমূর্ষু খাদিজার পাশে দাঁড়ালেও আপনারা তাঁর এবং তাঁর স্বজনদের যাতনাটা ঠিক অনুধাবন করতে পেরেছেন বলে মনে হয় না৷ কোরবানির ঈদের সময় গরুর পিঠে বসে সেল্ফি তোলা মানুষগুলোর মতো আপনাদের মনুষ্যত্ববোধ নিয়েও প্রশ্নটা তাই থেকেই গেল!

বন্ধুরা, আপনি লেখকের সঙ্গে একমত? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য