1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সেনেগালের রাস্তায় জেনেবাই একমাত্র মহিলা পেপার বিক্রেতা

২৬ সেপ্টেম্বর ২০১০

আমরা আমাদের আশেপাশে বেশ কিছু পেশায় শুধুমাত্র পুরুষদেরই দেখি৷ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে কিছু কিছু পেশা অবধারিতভাবে ‘পুরুষদের জন্যই’ বলে ধরে নেওয়া হয়৷ এর ব্যতিক্রমও কিন্তু আছে৷

https://p.dw.com/p/PMvu
সেনেগালের রাস্তায় একমাত্র মহিলা পেপার বিক্রেতা জেনেবাছবি: DW

সেনেগালে ছেলেদের পাশাপাশি একটি মেয়েও চেঁচিয়ে বিক্রি করে যাচ্ছে পত্রিকা৷ সে জেনেবা৷ পুরুষদের সঙ্গে সে-ও এই কঠিন পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করেছে৷

সেনেগালে যে কেউই চাকরির জন্য প্রস্তুত৷ কিন্তু সমস্যা হল সেখানে সহজে কাজ পাওয়া যায় না৷ সেনেগালের প্রায় এক তৃতীয়াংশেরও বেশি মানুষ বেকার৷ যে কোন কাজের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতে হয় বছরের পর বছর৷ তারপরেও কাজ পাওয়া যাবে এমন কোন নিশ্চয়তা নেই৷ ছেলে মেয়ে সবারই এক অবস্থা৷

জেনেবার বয়স ৩৭৷ পরিবারকে আর্থিকভাবে সাহায্য করতে সে বেছে নিয়েছে অত্যন্ত কঠিন এক কাজ, যে কাজে শুধুমাত্র পুরুষদেরই দেখা যায়৷ জেনেবা হকারের কাজ করে৷ সে রাস্তায় রাস্তায় পত্রিকা বিক্রি করে৷ ডাকারের রাস্তায় একটি মাত্র মহিলাকেই পত্রিকা বিক্রি করতে দেখা যায় - সে জেনেবা৷

সাহসী জেনেবা

রাজধানী ডাকারে ভোর পাঁচটা৷ একদল পুরুষ রাস্তার ধারে বসে পেপার গুছিয়ে নিচ্ছে৷ টাইটেল, পত্রিকা নাম, দিন, তারিখ দেখে তারা সব গুছিয়ে নিচ্ছে৷ সবার চোখে এখনো ঘুম জড়িয়ে রয়েছে৷ কেউই খুব একটা কথা বলছে না৷ সবাই রয়েছে পত্রিকাগুলো বিক্রি হওয়ার অপেক্ষায়৷ জেনেবাও তাদের মধ্যে একজন৷ জেনেবা বলল, ‘‘আমি প্রতিদিন ভোর সাড়ে চারটায় বাসা থেকে বের হই৷ আমি কখন বাড়ি ফিরি? নির্ভর করছে সারাদিনের বিক্রি-বাটার ওপর৷ অনেক সময় পত্রিকা দেরি করে আসে, তখন কাজে বের হতেও অনেক সময় লাগে৷ আজ যেমন দেরি হচ্ছে৷''

Zeitungsverkäuferin im Senegal
রাস্তায় পেপার বিক্রি করছে জেনেবাছবি: DW

কথাটা ঠিক৷ বেশির ভাগ প্রকাশনীই সময় মতো তাদের পত্রিকা দিয়ে গেছে৷ শুধু একটি প্রকাশনী থেকে বিশেষ একটি পত্রিকা এখনো এসে পৌঁছায়নি৷ পত্রিকার নাম ‘অবজারভাতোর'৷ জেনেবার সময় নষ্ট হচ্ছে৷ এতক্ষণ সে রাস্তায় পৌঁছে যেতে পারতো, শুরু হয়ে যেত পত্রিকা বিক্রি৷ নিজের কাজ সম্পর্কে জেনেবার মন্তব্য, ‘‘আমি খুবই আনন্দের সঙ্গে এই কাজ করি৷ যখন শুরু করেছি তখন থেকেই এ কাজ করতে আমার ভাল লাগতো৷ আমি এখনো, এতদিন ধরে এ কাজ করে যেতে পারছি এ জন্য আমি আমার ক্রেতাদের কাছে কৃতজ্ঞ৷ তাদের বেশির ভাগই পুরুষ৷ তারা কখনোই আমাকে নিরুৎসাহিত করেনি৷ সবসময়েই আমাকে সাহস যুগিয়েছে৷ এসব ক্রেতাই আমাকে বার বার বলেছে এ কাজ করে যেতে৷ এখন আমার মনে হয়, আমি যদি কখনো বিয়ে করি, তারপরও আমি এ কাজ করে যাবো অথবা নিজেই বড় একটি পত্রিকার দোকান দেব৷''

বাবা-মায়ের উৎসাহ

তবে শুধু ক্রেতারাই জেনেবাকে উৎসাহ দিচ্ছে না৷ তার পরিবার থেকেও সে যথেষ্ঠ সাহায্য এবং সহযোগিতা পেয়েছে৷ যদিও ডাকারের রাস্তায় সে-ই একমাত্র মহিলা যে পেপার বিক্রি করে, তারপরেও বাবা-মা এ পেশা বেছে নেওয়ায় বিরোধিতা করেনি৷ জেনেবা বলল, ‘‘আমার বাবা প্রথমে কিছুটা চিন্তিত ছিল৷ কারণ থিয়ারোয়ে থেকে ডাকার অনেক দূরে৷ অনেক ভোরে একা বাড়ি থেকে বের হওয়া সেখানে নিরাপদ নয়৷ আমার বাবা প্রথমে কিছুতেই রাজি হননি৷ বেশ কিছুদিন তিনি আমার সঙ্গে বাড়ি থেকে বের হয়েছেন৷ এখনও তিনি প্রায়ই আমার সঙ্গে ভোরে বাসা থেকে বের হন, আমাকে এগিয়ে দিয়ে যান৷''

জেনেবা তার কাজ পছন্দ করে৷ তবে এক সন্তানের মা জেনেবা কিছুতেই চায় না তার একমাত্র ছেলেও এই পেশায় আসুক৷ তার ইচ্ছে ছেলে পড়াশোনা করবে, ভাল কিছু করবে৷ রাস্তায়, রাস্তায় ঘুরে পেপার বিক্রি করবে না৷

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী