সেনেগালের রাস্তায় জেনেবাই একমাত্র মহিলা পেপার বিক্রেতা
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১০সেনেগালে ছেলেদের পাশাপাশি একটি মেয়েও চেঁচিয়ে বিক্রি করে যাচ্ছে পত্রিকা৷ সে জেনেবা৷ পুরুষদের সঙ্গে সে-ও এই কঠিন পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করেছে৷
সেনেগালে যে কেউই চাকরির জন্য প্রস্তুত৷ কিন্তু সমস্যা হল সেখানে সহজে কাজ পাওয়া যায় না৷ সেনেগালের প্রায় এক তৃতীয়াংশেরও বেশি মানুষ বেকার৷ যে কোন কাজের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতে হয় বছরের পর বছর৷ তারপরেও কাজ পাওয়া যাবে এমন কোন নিশ্চয়তা নেই৷ ছেলে মেয়ে সবারই এক অবস্থা৷
জেনেবার বয়স ৩৭৷ পরিবারকে আর্থিকভাবে সাহায্য করতে সে বেছে নিয়েছে অত্যন্ত কঠিন এক কাজ, যে কাজে শুধুমাত্র পুরুষদেরই দেখা যায়৷ জেনেবা হকারের কাজ করে৷ সে রাস্তায় রাস্তায় পত্রিকা বিক্রি করে৷ ডাকারের রাস্তায় একটি মাত্র মহিলাকেই পত্রিকা বিক্রি করতে দেখা যায় - সে জেনেবা৷
সাহসী জেনেবা
রাজধানী ডাকারে ভোর পাঁচটা৷ একদল পুরুষ রাস্তার ধারে বসে পেপার গুছিয়ে নিচ্ছে৷ টাইটেল, পত্রিকা নাম, দিন, তারিখ দেখে তারা সব গুছিয়ে নিচ্ছে৷ সবার চোখে এখনো ঘুম জড়িয়ে রয়েছে৷ কেউই খুব একটা কথা বলছে না৷ সবাই রয়েছে পত্রিকাগুলো বিক্রি হওয়ার অপেক্ষায়৷ জেনেবাও তাদের মধ্যে একজন৷ জেনেবা বলল, ‘‘আমি প্রতিদিন ভোর সাড়ে চারটায় বাসা থেকে বের হই৷ আমি কখন বাড়ি ফিরি? নির্ভর করছে সারাদিনের বিক্রি-বাটার ওপর৷ অনেক সময় পত্রিকা দেরি করে আসে, তখন কাজে বের হতেও অনেক সময় লাগে৷ আজ যেমন দেরি হচ্ছে৷''
কথাটা ঠিক৷ বেশির ভাগ প্রকাশনীই সময় মতো তাদের পত্রিকা দিয়ে গেছে৷ শুধু একটি প্রকাশনী থেকে বিশেষ একটি পত্রিকা এখনো এসে পৌঁছায়নি৷ পত্রিকার নাম ‘অবজারভাতোর'৷ জেনেবার সময় নষ্ট হচ্ছে৷ এতক্ষণ সে রাস্তায় পৌঁছে যেতে পারতো, শুরু হয়ে যেত পত্রিকা বিক্রি৷ নিজের কাজ সম্পর্কে জেনেবার মন্তব্য, ‘‘আমি খুবই আনন্দের সঙ্গে এই কাজ করি৷ যখন শুরু করেছি তখন থেকেই এ কাজ করতে আমার ভাল লাগতো৷ আমি এখনো, এতদিন ধরে এ কাজ করে যেতে পারছি এ জন্য আমি আমার ক্রেতাদের কাছে কৃতজ্ঞ৷ তাদের বেশির ভাগই পুরুষ৷ তারা কখনোই আমাকে নিরুৎসাহিত করেনি৷ সবসময়েই আমাকে সাহস যুগিয়েছে৷ এসব ক্রেতাই আমাকে বার বার বলেছে এ কাজ করে যেতে৷ এখন আমার মনে হয়, আমি যদি কখনো বিয়ে করি, তারপরও আমি এ কাজ করে যাবো অথবা নিজেই বড় একটি পত্রিকার দোকান দেব৷''
বাবা-মায়ের উৎসাহ
তবে শুধু ক্রেতারাই জেনেবাকে উৎসাহ দিচ্ছে না৷ তার পরিবার থেকেও সে যথেষ্ঠ সাহায্য এবং সহযোগিতা পেয়েছে৷ যদিও ডাকারের রাস্তায় সে-ই একমাত্র মহিলা যে পেপার বিক্রি করে, তারপরেও বাবা-মা এ পেশা বেছে নেওয়ায় বিরোধিতা করেনি৷ জেনেবা বলল, ‘‘আমার বাবা প্রথমে কিছুটা চিন্তিত ছিল৷ কারণ থিয়ারোয়ে থেকে ডাকার অনেক দূরে৷ অনেক ভোরে একা বাড়ি থেকে বের হওয়া সেখানে নিরাপদ নয়৷ আমার বাবা প্রথমে কিছুতেই রাজি হননি৷ বেশ কিছুদিন তিনি আমার সঙ্গে বাড়ি থেকে বের হয়েছেন৷ এখনও তিনি প্রায়ই আমার সঙ্গে ভোরে বাসা থেকে বের হন, আমাকে এগিয়ে দিয়ে যান৷''
জেনেবা তার কাজ পছন্দ করে৷ তবে এক সন্তানের মা জেনেবা কিছুতেই চায় না তার একমাত্র ছেলেও এই পেশায় আসুক৷ তার ইচ্ছে ছেলে পড়াশোনা করবে, ভাল কিছু করবে৷ রাস্তায়, রাস্তায় ঘুরে পেপার বিক্রি করবে না৷
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী