সুপার মার্কেটের গ্রাসে অপসৃত হতে যাচ্ছে কর্নার শপগুলো
১২ সেপ্টেম্বর ২০১০সে ছড়া আজ নানা কারণেই অথর্বহ মনে হতে পারে৷ যেমন বিশ্বময় নানান জাতের সুপারমার্কেট আর চেইনশপের মোড়লগিরির ঠেলায় নাভিশ্বাস উঠে গেছে পাড়ার সেইসব ছোট্ট মুদিখানার দোকানীদের৷ ক্রমশ পিছু হটছে, ক্রমশই সেগুলো হারিয়ে যাচ্ছে বিস্মৃতির অতলে৷
একে তো এইসব বিশালাকায় – যাকে বলে দৈত্যাকার সব বিপণী বিতানের মাজার জোর অনেক বেশী, তার ওপর এদের ব্যবসা পরিচালনার মুন্সীয়ানায়, বেশী পরিমাণে পণ্য বিক্রি করার সুবিধাটুকু নিংড়ে নিয়ে সুলভে পণ্য বিকোনোর কারণে ছোট ছোট মুদি ধাঁচের দোকানগুলোর ব্যবসা আজ সত্যিই লাটেই উঠছে৷
যাকগে, এ যেন খানিকটা ধান ভানতে শিবের গীত গাওয়া হলো৷ বাস্তবতা হচ্ছে – দিন বদলে যায়, আর এর সাথে সাথে আসা নতুন প্রবাহ আমাদের কিছু পুরনো স্মৃতি, অভ্যাস, সব মিলিয়ে আমাদের সামাজিক জীবনেও অনেক রদ-বদল আনে৷
এ সপ্তাহে বার্লিনের সিনেমা হলগুলোতে চলা টম অ্যাটকিনস ব্লুজ ছবিটির নির্মাতা অ্যালেক্স ঠিক এমনই এক পিছু হটা জীবন বাস্তবতার বিষণ্ণ গল্প বলেছেন৷ খানিক গল্প আর প্রামাণ্যের মিশেলে এটি আদতে চিত্র নির্মাতা অ্যালেক্সের জীবনেরই গল্প৷
১৯৯৫ সালে নির্মাতা ওয়েন ওয়াং-ও এমনতর কাহিনীর একটি অসাধারণ ছবি বানিয়েছিলেন, যার নাম স্মোক, তার কাহিনীর জমিনটি ছিল ব্রুকলিনের এক তামাকের দোকান৷ যে ছবির ভাব অ্যালেক্সর বানানো ছবির কাহিনীর ছন্দ সাদৃশ্য আর অন্তর্গত অনুভবকে একই বৈকুন্ঠে মেলায়৷
অ্যালেক্স রস নামের এই নির্মাতা তার ছবিতে বার্লিনের এক ক্ষুদ্র দোকানী আর সেই দোকানের জীবন বয়ান করেছেন, অ্যালেক্স একসময় এমনই একটি দোকানে কাজ করতেন৷
মুদিখানার এই মানুষটি তার পণ্যের পাশাপাশি দৈনন্দিন জ্ঞান আর প্রজ্ঞা বিলোন৷ পণ্যের পাশাপাশি বিনিময় করেন সৌহার্দ্য, প্রতিবেশীর উষ্ণ আন্তরিকতা৷ একসময় এমনটিই ছিলো বাস্তব৷ আর প্রতিবেশীরাই ছিলো সেই কোনার মুদি দোকানের ব্যবসার প্রাণ৷ অবশ্য আজকের বিশালকায় সব সুপার মার্কেটের দাপটে সে আজ এককালের স্মৃতির গল্পই বটে৷
পাড়ার সেই ছোট্ট মুদী দোকানটি আগেকার পূর্ব বার্লিনের জীবনে যেমন ছিলো প্রতিদিনের জীবনে প্রতিবেশীর উষ্ণতা৷ তেমনই তা আজও সামাজিক প্রবাহের প্রাতিষ্ঠানিকতার স্তম্ভ হিসেবেই বিবেচিত৷
কিন্তু নেই কেন সেই পাখি বলে যে হাহাকার, প্রায় অপসৃয়মান, হারিয়ে যেতে বসা সেই কর্নার শপগুলো, সস্তা পণ্যের ভীড়ঠাসা সুপারমার্কেটগুলোর ধাক্কায় শুধু নয়, দিন বদলের প্রবাহেও যেনবা ক্রমশ পাড়ায় আসা নতুন বড়লোকের কাছ থেকে গরীব গুর্বো মানুষের মতো মুখ লুকিয়ে নিচ্ছে৷
ঐতিহ্য বললে মানানসই হয় আর সবচেয়ে ভালো হয় মানবিক প্রবাহের মোহনা বললে৷ বার্লিন কর্নার শপের সেই মানবিক মূল্যবোধ, সেই সামাজিক উষ্ণতার প্রবাহটি ক্ষীণতোয়া হয়ে পড়ছে যেনবা৷
আজো যদিও আলো ঝলমলে বিশালকায় সব বিপণীবিতানের পাশে এখনো চিকচিক করছে সেই সব কর্নারশপের নামফলক৷ কিন্তু টম অ্যাটকিনস ব্লুজ- এর সেইসব মানুষজন যারা এই কর্ণার শপগুলোর বেঞ্চে বসে উষ্ণতা ভাগাভাগি করতেন, পাশে রাখা গিটার তুলে কখনো সুরের টংকার আর দাবায় চোখ রেখে আপ্তবাক্য আওড়াতেন, তারা যেনবা এই আধুনিক সময়ে বেমালুম হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছেন৷
প্রতিবেদন: হুমায়ূন রেজা
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন