1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাঘকে অবহেলা নয় !

আশীষ চক্রবর্ত্তী২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫

কোনো দেশের ‘ব্র্যান্ডিং' কেমন হওয়া উচিত, তা এক কথায় বলা প্রায় অসম্ভব৷ বাঘের বিলুপ্তি মেনে নেয়া তার চেয়েও বেশি কঠিন৷ সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার আর থাকবে না – এ আশঙ্কাকে উৎসাহ দিয়ে কি বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং হতে পারে?

https://p.dw.com/p/1GdXT
Zoo Köln Tiger Ausbruch Amur Altai Deutschland
ছবি: dapd

জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত একটি লেখায় কি সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের অস্তিত্বের সংকট মেনে নেয়ার বার্তাই দেয়া হলো? এমন বার্তায় আমার ভীষণ আপত্তি৷ ব্র্যান্ডিং কখনোই দেশ বা জাতির ঐতিহ্য, শিল্প-সংস্কৃতি, প্রকৃতি, প্রকৃতির অহংকারকে পেছনের দরজায় ফেলে এগিয়ে চলার স্বপ্ন হতে পারে না৷

তেমন হলে বিমান নিখোঁজ আর ‘দুর্ঘটনার' মতো এত বড় দুটো ঘটনার পর মালয়েশিয়া নিশ্চয়ই নিজেদের ব্র্যান্ডিং থেকে তড়িঘড়ি করে ‘ট্রুলি এশিয়া' ঝেড়ে ফেলে সেই জায়গায় অন্য কোনো বিশেষণ খুঁজে নিতো৷ তা না করে মালয়েশিয়া তো এখনো বলছে, ‘ভিজিট মালয়েশিয়া'৷ একটা-দুটো অনাকাঙ্খিত ঘটনার কারণে পর্যটন খাতকে অবহেলা করে আরো বড় বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়নি৷ মালয়েশিয়া বরং সবাইকে বলছে, ‘সেলিব্রেটিং ফিফটি ইয়ার্স অফ নেশনহুড', এই শুভক্ষণে তোমরা কাছে এসো৷ বোর্নিও দ্বীপের সারাওয়াক রাজ্যে পর্যটকদের ভিড় যাতে একটুও না কমে সেদিকেও মালয়েশিয়ার কড়া নজর৷ তাই সারাওয়াক-এর বিজ্ঞাপনে এক সময় ছিল ‘হিডেন প্যারাডাইস অফ বোর্নিও', এখন আহ্বান আরো চিত্তাকর্ষক, বলা হচ্ছে, ‘মালয়েশিয়া: মাই সেকেন্ড হোম, মোর দ্যান আ প্যারাডাইস'৷

দুর্ঘটনার জায়গায় থাকে দুর্ঘটনা, ব্র্যান্ডিংয়ের জায়গায় ব্র্যান্ডিং৷ কিন্তু বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখ্য অর্থনীতিবিদ বিরুপাক্ষ পাল লিখলেন, ‘‘আমাদের দেশের প্রতীক হিসেবে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের ব্যবহার নাকি খুব ক্লিশে হয়ে গেছে৷'' তাঁর মতে, সুন্দরবনে যখন বাঘের সংখ্যা কমছে, তখনও বাংলাদেশকে ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দেশ' হিসেবে খেলাধুলা, বাণিজ্য বা পর্যটন শিল্পের প্রচারে তুলে ধরা নাকি মোটেই ঠিক হচ্ছে না৷

মালয়েশিয়া বা অন্যান্য দেশের দৃষ্টান্ত কিন্তু এমন সিদ্ধান্ত বা পর্যবেক্ষণকে সমর্থন করে না৷ মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের এখন লেজে-গোবরে অবস্থা, তা সত্ত্বেও মালয়েশিয়া পর্যটনকে উৎসাহিতই করছে৷ পাশাপাশি বিমান কর্তৃপক্ষকে আগের অবস্থায় ফেরানোর চেষ্টাও নিশ্চয়ই করা হচ্ছে৷ কাজে আন্তরিকতা আর ভাবনায় প্রজ্ঞা থাকলে সব সরকার তা-ই করে৷

Deutsche Welle DW Arun Chowdhury
আশীষ চক্রবর্ত্তী, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Henriksen

সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার কমেছে৷ মালয়েশিয়ার বিমান দুর্ঘটনার মতো এটাও অনাকাঙ্খিত সত্যি৷ বাঘ আর যাতে না কমে, বাঘের সংখ্যা যাতে আবার ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় সেই দিকেই সবার নজর দেয়া উচিত৷ ধীরে ধীরে প্রচারের বাইরে নিয়ে গিয়ে রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে আরো বিলুপ্তির ঝুঁকির দিকে ঠেলে দেয়া মোটেই কাম্য নয়৷ বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং ‘ভাইব্রেন্ট বাংলাদেশ' হতেই পারে৷ তবে রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে অবহেলা দিয়ে নয়৷ আমরা যদি বাংলার বাঘকেও ছুতোনাতায় অবজ্ঞা-অবহেলা করি তাহলে বাংলাদেশ মনে হয় কল্পনাতেও আর ‘ভাইব্রেন্ট' থাকবে না৷ সুন্দরবনের বাঘ রক্ষা করতে না পারলে ‘ভাইব্রেন্ট বাংলাদেশ' শব্দজোড় থেকে ‘ভাইব্রেন্ট' শব্দটি হয়ত লজ্জায় ছুটে পালাতে চাইবে৷

সুন্দরবনের বাঘকে প্রচারের বাইরে ঠেলে দেয়া বিলুপ্তির পথ সুগম করারই নামান্তর৷ তেমনটি না হওয়া তবু মন্দের ভালো৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য