সুনামি: ঘুরে দাঁড়িয়েছে আচে
২০০৪ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে ইন্দোনেশিয়ায় প্রাণ হারান প্রায় এক লাখ সত্তর হাজার মানুষ৷ তাঁদের অধিকাংশই মারা যান আচে প্রদেশে৷ দেখুন দশ বছরে আচের ঘুরে দাঁড়ানো নিয়ে ছবিঘর৷
ভয়ংকর ভূমিকম্প
২০০০ সালের ২৬ ডিসেম্বর৷ সমুদ্রের তলায় এক ভয়ংকর ভূমিকম্প ভারত মহাসাগরে সুনামির সৃষ্টি করে৷ অস্ট্রেলিয়া থেকে তানজেনিয়া পর্যন্ত ১১টি দেশে পৌঁছায় সেই সুনামির ঢেউ, প্রাণ হারান ২৩০,০০০ মানুষ৷ ছবিটি ইন্দোনেশিয়ার বান্দা আচে শহরে সুনামির আঘাত হানার পরে তোলা৷
সবচেয়ে শক্ত আঘাত
সুমাত্রার উত্তরের অবস্থিত আচে প্রদেশের সুনামি সবচেয়ে জোরে আঘাত হানে৷ শুধুমাত্র সেখানেই প্রাণ হারিয়েছেন ১৩০,০০০ মানুষ৷ ২০০৫ সালের ৮ জানুয়ারি বান্দা আচে-তে তোলা এই ছবিটি থেকে ভয়াবহতার মাত্রা কিছুটা বোঝা যায়৷
ক্ষতচিহ্ন
বান্দা আচের ওপর আছড়ে পরে ২৫ মিটার লম্বা ঢেউ৷ আর সেই ভাসিয়ে নিয়েছে অসংখ্য মানুষ, ঘরবাড়ি, স্থাপনা৷ ২০০৫ সালের জানুয়ারি মাসে তোলা ছবিতে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত একটি মসজিদ দেখা যাচ্ছে৷ তার আশেপাশে সবকিছু কার্যত ধুয়ে নিয়ে গেছে সমুদ্রের ঢেউ৷
বাস্তুহারারা
সুনামিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা আচে৷ ৯ দশমিক এক মাত্রার ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের খুব কাছে ছিল এই শহরের আবস্থান৷ সুনামিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রায় ১৫ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েন৷ সুনামিতে ঘরহারা মানুষদের ফিরে আসার ছবি এটি৷
‘দুর্গন্ধ ভয়াবহ ছিল’
সুনামির পর সংশ্লিষ্ট এলাকার অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে মার্কিন সাংবাদিক কিরা কে জানান, ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকে থাকা মরদেহ উদ্ধার করে গণকবরে ফেলা হয়েছিল৷ সেসময় চারদিকে ভয়াবহ দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পরে৷
সৃষ্টিকর্তার সাজা?
সুনামির পর আচে-র বাসিন্দাদের মধ্যে ধর্মচর্চার হার বেড়ে গেছে৷ কেননা তাদের বিশ্বাস, সুনামি ছিল সৃষ্টিকর্তার শাস্তি৷ কেননা, সুনামিতে সব কিছু ধ্বংস হয়ে গেলেও অনেক মসজিদ দাঁড়িয়ে ছিল৷ দশ বছর পর তোলা এই ছবিতে সংস্কার করা একটি মসজিদ এবং তার চারপাশে আবারো গড়ে ওঠা কমিউনিটি দেখা যাচ্ছে৷
শরিয়া আইন
আচে বরাবরই ইন্দোনেশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে বেশি রক্ষণশীল ছিল৷ সুনামির পরের বছরগুলোতে সেখানে বিশেষ শরিয়া আইন প্রবর্তন করা হয়েছে, যার মাধ্যমে নারীর পোশাক এবং নৈতিক ব্যবহারের মতো বিষয়গুলি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে৷
অপ্রত্যাশিত ফলাফল
সুনামির পর ব্যাপক আন্তর্জাতিক সহায়তা পেয়েছে আচে৷ ফলে সুনামির আগের চেয়েও শক্তিশালী কমিউনিটি গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে তারা৷ দুর্যোগের কারণে সেখানে চলমান গৃহযুদ্ধেরও কার্যত ইতি ঘটেছে৷ ২০০৫ সালে কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিচ্ছিন্নতবাদীরা শান্তি চুক্তি করে৷
নতুন করে তৈরি অথবা সংস্কার
সুনামির পর আচের অধিকাংশ ঘরবাড়ি হয় নতুনভাবে তৈরি করা হয়েছে বা সংস্কার করা হয়েছে৷ ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে তোলা এই ছবিতে এক মোটর সাইকেল আরোহী সুনামির সময় ঘরবাড়ির উপরে এসে পরা একটি নৌকার পাশ দিয়ে যাচ্ছেন৷ সুনামির স্মৃতি হিসেবে নৌকাটি সেভাবেই রাখা হয়েছে৷
পুর্নগঠন
দশ বছর পরের চিত্র এটি৷ সুনামি মোকাবিলা করে বেঁচে থাকার আবারো ফিরে পেয়েছেন স্বাভাবিক জীবন৷ বিদেশি সহায়তায় আচে-র ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, সেতু এবং বন্দর নতুন করে তৈরি হয়েছে৷