সুচির মুক্তি সমাসন্ন
১২ নভেম্বর ২০১০সেদেশের সামরিক কর্মকর্তাদের বরাতে জানা গেছে, গৃহান্তরীণ এই নেত্রীর মুক্তি সমাসন্ন৷ যে কোনদিনই তিনি মুক্তি পেতে যাচ্ছেন৷
জানা গেছে, এখন বিষয়টি সময়ের ব্যাপার মাত্র৷ শুক্রবার সামরিক শক্তির নিয়ন্ত্রণে থাকা এ'দেশটির কর্তাব্যক্তিদের কেউ কেউ এমনটিই জানিয়েছেন৷ সুচির মুক্তি নিয়ে খানিক উত্তেজনা বাড়ায় ইয়াঙ্গনের নিরাপত্তা ব্যবস্থাটি জোরদার করা হয়েছে৷ টহল পুলিশের গাড়ি ঘুরছে শহরে৷
নোবেল শান্তি জয়ী সুচির এই বন্দিদশা প্রায় দুই দশকের৷ এই দীর্ঘ সময়টি জুড়েই মিয়ানমারের আপোষহীন এ'নেত্রীকে বদ্ধ ঘরে বন্দিজীবন বরণ করতে হয়েছে৷ তারপরও সুচির জনপ্রিয়তা, ক্ষমতা বা সামর্থ্যের বিষয়টি নিয়ে সামরিক শক্তির ভীতি বা শঙ্কা কাটে নি৷ তবে মিয়ানমারের সামরিক শক্তি সম্ভবত এবারের নির্বাচনে তাদের এই পুকুর চুরি বা ভয়াবহ কারচুপির বিষয়টি শাক দিয়ে মাছ ঢাকার জন্য সুচির মুক্তিকে সামনে আনতে চাইছে৷
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি মুখপাত্র সুচির মুক্তির বিষয়টি যে নিশ্চিৎ এটি জানিয়ে বলেছেন, কর্তৃপক্ষ তাঁকে মুক্তি দিতে যাচ্ছে, এটি এখন নিশ্চিৎ৷ ৬৫ বছর বয়েসি আপোষহীন নেত্রী সুচির আইনজীবি বলেছেন, গত বছরের ১৪ মে তাঁর এই গৃহান্তরীণ দশার শুরু হয়েছিল, এর শেষ হওয়ার কথা এবছরের নভেম্বর মাসের পনেরো তারিখে৷ এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন সরকারি কর্মকর্তাও বলেছেন, সুচিকে পরিকল্পনানুযায়ীই মুক্তি দেয়া হবে৷
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের আগস্টে অং সান সুচির গৃহান্তরীণ দশার মেয়াদ আরো আঠারো মাস বাড়ানো হয়েছিল৷ মেয়াদ বাড়ানোর পেছনে ক্ষমতাসীন সামরিক শক্তির যুক্তিটি ছিলো- আজব ধরণের৷ সুচি গৃহবন্দি থাকার সময়ে যে লেকঘেরা বাড়িতে অন্তরীণ ছিলেন, সেখানে এক মার্কিনি নাকি সাঁতরে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছিল৷
এদিকে মিয়ানমারের অসংখ্য সুচি সমর্থকরা অধির আগ্রহে তাঁর মুক্তির জন্য অপেক্ষা করছেন৷ তাঁরা জানেন না ঠিক কখন সুচি মুক্তি পাচ্ছেন৷ সুচির আইনজীবি নাইয়ান উইন বলেছেন, আইনানুযায়ী বন্দিদশার মেয়াদটি তারা আর বাড়াতে পারবে না৷ দেশের স্বার্থেই তাঁকে মুক্তি দেওয়া উচিৎ৷ সুচি সমর্থকদের একজন বলেছেন, মুক্তির পর তাঁদের নেত্রী এক সংবাদ সম্মেলন করবেন৷ সমর্থকটি বলেন, সুচি তাঁর ওপর চাপিয়ে দেওয়া কোন নিয়ম বা শর্তই মেনে নেবেন না৷
উল্লেখ্য, মিয়ানমারের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম বীর জেনারেল অং সানের সুযোগ্যা কন্যা এই আপোষহীন নেত্রী দুই দশক আগে নির্বাচনে বিপুল সমর্থন পেয়েছিলেন৷ নির্বাচনে তাঁর এই বিশাল জয়ের পরেও সামরিক শক্তি তাঁকে ক্ষমতা যেতে বা সরকার গঠন করতে দেয় নি৷ উল্টো এই দুই দশক ধরেই তিনি অন্তরীণই রয়েছেন৷
সুচির এই মুক্তি উপলক্ষে তাঁর সমর্থকরা নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন বলেই জানা গেছে৷ মুক্তির বিষয়টি স্মরণীয় করে রাখতে অনেকেই স্থানীয় হাসপাতালে রক্তদান করবেন৷ স্থানীয় এক ট্যাক্সি চালক আবেগমথিত কন্ঠে বলেছেন, আমি তাঁর জন্য প্রার্থনা করছি৷ তিনি আমাদের জন্য সারাজীবনই কষ্ট করেছেন৷ অনেক কষ্ট৷
উল্লেখ্য, ২০০২ সালে সুচি যখন একবার মুক্তি পেয়েছিলেন সেসময় তিনি যেখানেই গিয়েছেন উপচে পড়া ভীড় আর জনতার ঢল প্রবাহিত হয়েছে তাঁর চলার পথটিতে৷ তাঁর সেই জনপ্রিয়তা আজো কমেনি বই বেড়েই চলেছে৷
প্রতিবেদন: হুমায়ূন রেজা
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক